দেশের বাইরে উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বেশ কিছু বিষয় বিবেচনায় নিতে হয়। যদিও বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর আকাঙ্ক্ষা থাকে একটি বৃত্তি নিয়ে পড়ার কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে নানা কারণে তা সম্ভব হয় না। তারপরেও শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টা থাকে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরণে। এক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য বিষয় শিক্ষার মান, বার্ষিক টিউশন ফি, শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় আয় এবং পড়াশোনা শেষ করে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ ইত্যাদি। এই সব কিছু বিবেচনায় পর্তুগাল হতে পারে উচ্চ শিক্ষার অন্যতম সেরা গন্তব্য, যেখানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন।
দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের আইবেরিয় উপদ্বীপের পশ্চিম অংশে এবং স্পেনের দক্ষিণ ও পশ্চিমে অবস্থিত পর্তুগাল ইউরোপের প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে একটি বড় সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। বর্তমানে পর্তুগিজ ভাষা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ভাষার একটি, যা তার অতীতের বিশাল সাম্রাজ্যের পরিচয় বহন করে। সুন্দর দেশটি পড়াশোনা ও বসবাসের জন্য খুবই উপযোগী । আবহাওয়া অনেকটা আমাদের দেশের মতো। ইউরোপের অন্য দেশগুলোর তুলনায় বৈষম্যমূলক পরিবেশ নেই।
আন্তর্জাতিকমানের ডিগ্রির কারণে উচ্চ শিক্ষার জন্য আকষর্ণীয় গন্তব্য পর্তুগাল । তাছাড়া টিউশন খরচ ইউরোপের অন্য দেশগুলো চেয়ে অনেক কম, বছরে খরচ ৩ হাজার থেকে ৮ হাজার ইউরো। থাকা, জীবনযাপনের খরচটাও যথেষ্ট সাশ্রয়ী, মাসিক ৩০০ থেকে ৫০০ ইউরোর মধ্যে ভালোভাবেই চলা যায়। আগে এখানে সহজ না হলেও এখন সুযোগ আছে খণ্ডকালীন কাজ পাওয়ার, নূন্যতম বেতন ৬৬৫ ইউরো। অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ডেলিভারি সার্ভিস, কল সেন্টার এবং বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করছেন।
বেশিরভাগ বাংলাদেশির ইউরোপে পড়াশোনার অর্থই হলো ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্বে আজীবনের জন্য স্থায়ী হওয়া। সেই অর্থে তাদের জন্য পর্তুগাল হলো শ্রেষ্ঠ স্থান কারণ এখানে আপনি খুব অল্প সময়, অল্প টাকায় পর্তুগালের পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট তথা নাগরিকত্ব অর্জন করতে পারবেন। সাধারণত স্টুডেন্টসহ যে কোনো ক্যাটাগরিতে ৫ বছর বৈধ বসবাসে পর্তুগালের নাগরিকত্ব পাওয়া যায় যা বিশ্বের অন্য কোনো দেশে সম্ভব নয়। শুরুতে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজের অনুমতি আছে কিন্তু আপনি যদি ইমিগ্রেশনকে প্রমাণ করতে পারেন আপনার কাজ ও পড়ালেখার সময় একে অপরের সাথে সাংঘার্ষিক নয় তবে ফুলটাইম কাজ করতে পারেন। পড়াশোনা শেষ করলে পর্তুগাল ছাড়াও পুরো ইউরোপে চাকরি এবং অন্য সুবিধা পাওয়ার সুযোগ আছে ।
পর্তুগিজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তত্ত্বভিত্তিক, গবেষণা সম্পর্কিত এবং ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতে শিক্ষা দিয়ে থাকে। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েই ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন এবং পিএইচডি কোর্স পর্তুগিজ ভাষায় পড়ানো হয়। তবে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনার সুযোগ আছে। বিশেষ করে প্রকৌশল, চিকিৎসা বিজ্ঞান, আইন ,ফার্মেসি, প্রকৃতি বিজ্ঞান, অর্থনীতি, ব্যবস্থাপনা, মানবিকতাসহ আরও কিছু বিষয়ে।
১২৯০ সালে স্থাপিত ‘ইউনিভার্সিটি অব কুইমব্রা’ পর্তুগালের সবচেয়ে পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়। সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে ‘ইউনিভার্সিটি অব পোর্তো’তে। তাছাড়া লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ টি অনুষদের মধ্যে বেশ কয়েকটিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা মাস্টার্স ও পিএইচডিতে পড়াশোনা করছেন। আরও রয়েছে নোভা বিশ্ববিদ্যালয় যেটিকে পর্তুগালের সর্বাধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এখানেও ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ও পিএইচডিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছেন।
এছাড়া লিসবন ইউনিভার্সিটি অব ইনস্টিটিউট (আই এস সি টি ই) এবং লিসবনের বাইরে রয়েছে আলগ্রাভ বিশ্ববিদ্যালয়, এভোরা বিশ্ববিদ্যালয়, আজোরেস বিশ্ববিদ্যালয়, মিনহা বিশ্ববিদ্যালয়, এ্যাভেইরো বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট যেখানে বর্তমানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছেন।
এই নিয়ে কথা হয় University of Lusofona এর বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মো. নুর আলম মিস্ত্রীর সঙ্গে, তিনি বর্তমানে পিএইচ.ডি করছেন আরবান প্ল্যানিংয়ে। পাশাপাশি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেকচার অ্যান্ড আরবানিজম বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, পর্তুগালে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক সম্ভাবনা আছে। এখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স এবং পিএইচডি পর্যায়ে অনেক বিষয় ইংরেজিতে পাঠ দান করে এবং অনার্স পর্যায়ে স্বল্প পরিসরে ইংরেজি ও বেশির ভাগ পর্তুগিজ ভাষায় পড়ানো হয়। কিন্তু অনেকে এখনো বিষয়টি অবগত নয় তাই এখানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী তূলনামূলক কম।
মো. শাকাউতুল ইসলাম আজিজ, তিনি মাস্টার্স করছেন ডেটা সাইন্স অ্যান্ড এডভান্সড অ্যানালিটিকসে, ইউনিভার্সিটে অব নিউ লিসবনে। তিনি বলেন, পর্তুগিজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টিউশন ফি তুলনামূলকভাবে অনেক কম এবং বিশ্বমানের শিক্ষা দিয়ে থাকে যা পৃথিবীর সব দেশে গ্রহণযোগ্য। তাছাড়াও পর্তুগালে পড়াশুনা শেষ করে সহজে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ নেওয়া যায়, এখানে অনার্স, মাস্টার্স, পোস্ট গ্রেজুয়েশন ও পিএইচডি করার সুযোগ আছে এবং প্রায় সব বিষয়ে পড়াশোনা করা যায়।
এখানে মূলত দুইটি সেশন সেপ্টেম্বর এবং ফেব্রুয়ারিতে আবেদন করার সুযোগ তবে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেপ্টেম্বর সেশনে বেশি সংখ্যক বিষয় থাকে আবেদনের জন্য। দুই থেকে তিনটি পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও পলিটেকনিকাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে। যেমন প্রথম সার্কেলে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী না পেলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের আবেদনের জন্য আহ্বান করা হয়।
ব্যাচেলর কোর্সে সরাসরি ভর্তি হওয়ার সুযোগ নেই আন্তজার্তিক শিক্ষার্থীদের জন্য। প্রথমে তাদের ৬ মাস থেকে ১ বছরের প্রাক-ব্যাচেলর কোর্স করতে হবে এবং সফলভাবে শেষ করলেই মূল কোর্সে যেতে পারবে। ব্যাচেলরে আইইএলটিএস বাধ্যতামূলক। তবে মাস্টার্স বা পোস্ট গ্রাজুয়েশন Medium of Instruction Certificate দিয়েও আবেদন করা যায়। তবে আইইএলটিএস হলে ভালো হয়, এতে ভিসার ইন্টারভিউ এবং ভিসা পেতে সুবিধা হয়। ভিসা নিশ্চিত করতে অবশ্যই ইংরেজিতে ভালো যোগাযোগ দক্ষতা থাকতে হবে।
পর্তুগালে বিভিন্ন স্কলারশিপের জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারেন। যেমন, Erasmus Mundus Scholarship, FCT Scholarship এবং বিভিন্ন University Internal Scholarship। এক্ষেত্রে পিএইচডি শিক্ষার্থীরা সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবজেক্ট অনুযায়ী প্রফেসরের সাথে যোগাযোগ করে নিজেদের আগের গবেষণাপত্র বা প্রকাশনা পাঠাতে পারেন তাদের কাঙ্ক্ষিত উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্যে।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মূল চ্যালেঞ্জ হলো বাংলাদেশে পর্তুগালের কোনো দূতাবাস নেই। ভারতের দিল্লী যেতে হয় বলে আমাদের শিক্ষার্থীদের ভিসার হার একটু কম। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই ভিসা নিয়ে পর্তুগাল আসছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন পোর্টালে আবেদন করতে হবে। প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ফরম পূরণের সঙ্গে সবশেষ একাডেমিক সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্টের স্ক্যান কপি, ইউরোপাস সিভি, পাসপোর্টের কপি, ছবি, আবাসন ব্যবস্থা বা রিকোমেনডেশান লেটার, মটিভেশনাল লেটার এবং চাকরির অভিজ্ঞতার সনদ সংযুক্ত করতে হবে। আবেদন ফি হিসেবে ৫০ থেকে ২৫০ ইউরো নিদিষ্ট হিসাবে আই বান ট্রান্সফার, পেপল অথবা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে জমা দিতে হবে । নির্বাচিত হলে পুরো টিউশন ফির একটি নিদিষ্ট পরিমাণ অংক পরিশোধ করতে হবে। অনলাইন পোর্টাল ছাড়াও কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ই-মেইলের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো পাঠাতে পারেন।
এরপরই ভিসা প্রক্রিয়া। উচ্চ শিক্ষার জন্য পর্তুগালের দীর্ঘমেয়াদী বা লঙ টার্ম ন্যাশনাল ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। অস্থায়ী অবস্থান (টেম্পোরারি স্টে) ভিসা ও রেসিডেন্স ভিসা এই দুই রকম ভিসা আছে। শিক্ষা বা গবেষণার আবেদনকারীরা অবশ্যই রেসিডেন্স ভিসার জন্য আবেদন করবেন ভিসার জন্য শিক্ষার্থীদের ভারতের দিল্লি যেতে হবে এবং সেখানে পর্তুগাল দূতাবাসে ভিসা প্রক্রিয়া ও ইন্টারভিউ দিতে হবে।
ভিসার জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় যে সব কাগজপত্র দিতে হবে তার মধ্যে রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সংক্রান্ত প্রমাণাদি ও টিউশন ফি প্রদানের কাগজপত্র, সত্যায়িত মূল শিক্ষা সনদ ও নাম্বারপত্র, পাসপোর্ট, সাইজ ৩৫-৪০ মি.মি সাইজের ২ কপি ছবি। মূল শিক্ষা সনদ ও নাম্বারপত্র প্রথমে বোর্ড এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সত্যায়ন, এরপরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়ন করতে হবে। দিল্লি যাওয়ার পরে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আবার সত্যায়ন করে নিতে হবে।
এ ছাড়া দিতে হবে ঢাকার জার্মান দূতাবাসের অনুমোদিত বাংলাদেশি বিমা কোম্পানি থেকে কমপক্ষে ১২০ দিনের স্বাস্থ্যবিমা সনদ (বিমা শুরুর সময়কাল অবশ্যই আপনার ক্লাস শুরু হওয়ার ৫ দিন আগে হতে হবে)। একটি ওয়ানওয়ে ফ্লাইট টিকিট বুকিং (যার সম্ভাব্য তারিখ এবং বিমা শুরুর তারিখ একই হতে হবে) নিজ এলাকার থানা বা বিশেষ শাখা থেকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
আরও দিতে হবে অ্যাকোমোডেশন বা থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিতের প্রমাণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের থাকার ব্যবস্থা হতে পারে, তবে না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সেক্ষেত্রে যে কোনো হোটেল বুকিং বা পর্তুগালে ‘ইউনি প্লেস’ ওয়েবসাইটে থেকে বুকিং দেওয়া যাবে। কত দিনের জন্য বুকিং কনফার্ম করবেন তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ১ থেকে ৩ মাসের জন্য কনফার্ম করতে পারেন। বুকিংয়ের স্ক্যান কপি বা ই-মেইল কপি’ অ্যাকোমোডেশন লেটার’ হিসেবে ভিসা আবেদনের সঙ্গে জমা দেবেন।
আবেদনকারীর নামে ২০/২৫ লাখ টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স (কোন ব্লক অ্যাকাউন্ট নয়) সার্টিফিকেট এবং বিগত ৬ মাসের ব্যাংক স্টেইটমেন্ট দিতে হবে। সার্টিফিকেট এবং স্টেইটমেন্ট ব্যাংক ম্যানেজারের স্বাক্ষরিত হতে হবে। সোর্স অব ইনকাম সংক্রান্ত যত বেশি কাগজপত্র উপস্থাপন করা যায় তত ভালো। এছাড়া ভিসা ফি ৭২৫১ ভারতীয় রুপি নগদ জমা দিতে হবে। তবে যারা স্কলারশিপ নিয়ে যাবেন তাদের এই ফি মওকুফ।
সব কাগজপত্র ইংরেজি ভাষায় হবে, শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া অফার লেটার/এডমিশন লেটারটি পর্তুগিজ ভাষায় হয়ে থাকে। পর্তুগালের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পূর্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রিকমেন্ডেশন লেটার বা প্রত্যায়ণ পত্র দরকার হয় না।
শিক্ষার্থীদের রেসিডেন্স পারমিট কার্ড সাধারণত ১ থেকে ৩ মাসের মধ্যে হয়ে যায়। রেসিডেন্স পারমিট পাওয়ার পরে, দ্রুত ও সহজে পরিবার নিয়ে আসা যায়। সুত্র
… [Trackback]
[…] Find More here to that Topic: doinikdak.com/news/9553 […]
… [Trackback]
[…] Info to that Topic: doinikdak.com/news/9553 […]
cheap generic lasuna – cheap diarex without prescription purchase himcolin generic
oral besifloxacin – purchase sildamax pill buy sildamax no prescription
order gabapentin for sale – azulfidine online sulfasalazine ca
cool teсh gadgets
Exploгe Block Tech
Аt BlockTeech Buzz eveгy click is an adᴠenture iin the gaming,
crypto, and tech wߋrld.Whetther you’re a cаsua or hardcoгe
gamer, crypto enthusiast, oг techie we’re your go-to for
the latest news, tips, and trends.
celebrex buy online – celebrex medication indomethacin cheap
colospa tablet – buy pletal no prescription cost pletal 100 mg
diclofenac without prescription – diclofenac 100mg price buy aspirin pill
buy rumalaya generic – elavil 50mg ca purchase elavil for sale
pyridostigmine 60mg brand – buy azathioprine 50mg online how to buy imuran
… [Trackback]
[…] Read More to that Topic: doinikdak.com/news/9553 […]
order voveran generic – diclofenac pills nimodipine tablets
buy baclofen generic – piroxicam 20 mg cheap feldene 20mg price
buy cyproheptadine without prescription – periactin pills buy generic zanaflex over the counter
buy meloxicam 15mg generic – order mobic pill toradol 10mg without prescription
cheap artane pill – artane for sale purchase emulgel
cefdinir buy online – clindamycin canada
buy isotretinoin 40mg online – generic avlosulfon order deltasone 20mg online
purchase prednisone – oral omnacortil 40mg buy elimite cream