ঢাকা, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১৭ অপরাহ্ন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাবের ৬ষ্ঠ ডিএনএ দিবসের আয়োজন
Reporter Name

মোঃ আরিফুল ইসলাম: আগামী ২৫শে এপ্রিল বিশ্ব ডিএনএ দিবস। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাব ৬ষ্ঠ বারের মতো আয়োজন করতে যাচ্ছে এই দিবসটি। প্রতিবছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাবের উদ্যোগে এই দিনটি বিশেষ ভাবে পালন করে থাকে। ২৫ এপ্রিল গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী অনুসারে বছরের ১১৫তম (অধিবর্ষে ১১৬তম) দিন। বছর শেষ হতে আরো ২৫০ দিন বাকি রয়েছে।

বিজ্ঞান চর্চার প্রাথমিক যুগের সূচনা ঘটেছিল গণিত চর্চার মধ্য দিয়ে। মধ্যযুগে তা পদার্থবিদ্যার বিকাশে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে। ধীরে ধীরে নিউটন, গ্যালিলিও, আইনস্টাইন, বোরের তত্ত্ব একে আধুনিক যুগে নিয়ে আসে। কিন্তু, 1920 এর আবিষ্কারের ধারা কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। তখন, বিজ্ঞানীরা ঝুকতে থাকে পরিবেশ, পৃথিবী, মানুষ, জীবজগৎ নিয়ে গবেষণার দিকে। বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীকে তাই নিঃসন্দেহে বলা হচ্ছে The Century of Biological Science । এর কারণ 1972 সালে পল বার্গের রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ টেকনোলজি বা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর আবিষ্কার ।

বিজ্ঞানী ম্যাক্স ফার্দিনান্দ পেরুৎজ-এর দুই সহকারী। ক্রিক এবং তাঁর বন্ধু জেমস ডিউই ওয়াটসন। ৬৮বছর আগে, ১৯৫৩ সালের ২৫ এপ্রিল, গবেষণায় তাঁদের যুগলবন্দি জীববিদ্যাকে উপহার দিয়েছিল এক অত্যাশ্চর্য জ্ঞান। যে কোনও প্রাণীর, তা সে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া কিংবা প্রকাণ্ড তিমিমাছ যা-ই হোক না কেন— জন্ম, জীবনধারণ এবং মৃত্যুর মূলে দায়ী রাসায়নিক পদার্থটি দেখতে কেমন, তা বলে দিয়েছিলেন তাঁরা। কী সেই মহার্ঘ পদার্থ? ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড। হ্যাঁ, সংক্ষেপে ডি এন এ। প্রাণীর দেহকোষে উপস্থিত পেল্লায় এক অণু। এবং মস্ত বড় খেলোয়াড়। পুরুষ ও নারীর শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলনে সন্তান আবির্ভাবে, আর, তার পর সেই সন্তানের জীবনযৌবনে, জরায়ু ও ব্যাধিতে মুখ্য ভূমিকা ওই অণুর। তার গঠন আবিষ্কার, অতএব, প্রাণের রহস্যভেদ। ক্রিক এবং ওয়াটসন-এর সাফল্য বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় এক উজ্জ্বল মাইলস্টোন।

বিজ্ঞানে এই ডিএনএ আবিস্কারের এর অবদান তুলে ধরতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবছরই অনেক উৎসবমুখর পরিবেশে দিবসটি পালন করে আসছে। তবে এ বছর সারাদেশ করোনা মহামারির কারনে লকডাউন থাকায় ভার্চুয়ালি দিবসটি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাব। আমাদের এবছর দিবসটি পালনে তরুন বিজ্ঞানপ্রেমীদের জন্য  বিশেষ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। সেগুলো হলো ৩ মিনিট পপুলার সায়েন্স টক এবং সায়েন্টিফিক পোস্টার প্রেজেন্টেশন। যেখানে বিজ্ঞান প্রেমীরা অংশগ্রহণ করে তারা তাদের বিজ্ঞানভিত্তিক উদ্ভাবনী জ্ঞান গুলো তুলে ধরতে পারবে অনলাইন প্রেজেন্টেশন এর মাধ্যমে এবং ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান ধারীদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় প্রাইজ মানি।

আমাদের এই ভার্চুয়াল প্রোগ্রাম ডিএন‌এ দিবসের কিনোট স্পিকার হিসেবে থাকবেন ড. ফেরদৌসী কাদরী, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপার্সন ও  সাইন্টিস্ট, ইদেশি, ও সাবেক পরিচালক, সেন্ট্রাল ফর ভ্যাক্সিন সায়েন্স, আইসিডিডিআরবি,ঢাকা। কিনোট স্পিকার ডা. ফেরদৌসী কাদরি  দুপুর ২ টায় টক দিবেন “The importance of genomics and its applications to COVID-19 in Bangladesh” এর উপর এবং স্পিকার হিসাবে থাকবেন মোঃ খালিদ হোসাইন, অধ্যাপক, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ, রাবি। তিনি টক দিবেন Epigenetic changes by environmental chemicals এর উপর। প্রোগ্রামের প্রধান অতিথি হিসাবে থাকবেন প্রফেসর ডা.সৈয়দ সালেহীন কাদরি স্যার, সাবেক অধ্যাপক, প্রাণ-রাসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
২য় পর্বে থাকবেন ক্লাবের উপদেষ্টা মণ্ডলী এবং প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি এবং স্থায়ী কমিটির প্রধান জহুরুল ইসলাম মুন সহ স্থায়ী কমিটির বাকি সদস্য বৃন্দ।
ক্লাবের আজীবন সদস্য সহ সাবেক সদস্য বৃন্দ যুক্ত হবে বলে জানা যায়।
সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন রাবি সায়েন্স ক্লাবের সভাপতি মাহদী হাসান এবং সঞ্চালনা করবেন সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইসতেহার আলী।

সভাপতি মাহদী হাসান বলেন, যেকোনো জীবের জীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব কার্যক্রমই নিয়ন্ত্রিত হয় তার জিনোম বা কিছু ক্রোমোজোম বা অনেকগুলো জিনের দ্বারা। আবিষ্কারের পর থেকেই বিজ্ঞান, দর্শন এবং কলা ইত্যাদি সব ক্ষেত্রকে সমানভাবে আলোড়িত করেছে ডিএনএ। জীবনের নানান ক্ষেত্রকে এমন বহুমুখী সমৃদ্ধি দেওয়ার ক্ষেত্রে এককভাবে এত বড় ভূমিকা রাখতে পারেনি আর কোনো অণু। একের পর এক বিস্ময়কর আবিষ্কার সংঘটিত হয়েছে ডিএনএকে ঘিরে।
রাবি সায়েন্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইসতেহার আলী বলেন,
ডিএনএ তথা জিনের বিভিন্ন পরিবর্তনের কারণে দেখা দেয় বিভিন্ন রোগ যেমন ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া, আলঝেইমার, এডিস, হিমোফিলিয়া তথা রক্ত জমাটবাঁধাসহ শতাধিক রোগ। এসব রোগের যথাযথ কারণ অনুসন্ধান, রোগনির্ণয়ের উপযুক্ত পদ্ধতি এবং প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য প্রয়োজন জীবপ্রযুক্তিভিত্তিক পর্যাপ্ত গবেষণা। পৃথিবীতে কোটি কোটি ডায়াবেটিস রোগীর জীবন বাঁচাচ্ছে ইনসুলিনের মতো যৌগ। উন্নত জাতের ধান, বন্যায় লবণসহিষ্ণু ফসল উদ্ভাবনের স্বপ্ন দেখা যাচ্ছে ডিএনএর তথা জিনের গঠনগত পরিবর্তনের প্রযুক্তি আবিষ্কারের কারণে।
ডিএনএ এর  গুরুত্ব থেকেই রাবি সায়েন্স ক্লাব প্রতিবছর এই আয়োজন করে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x