ঢাকা, শুক্রবার ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৫১ অপরাহ্ন
বডি বিল্ডার মেজবাহ যেভাবে নায়ক ওয়াসিম হয়ে উঠলেন
Reporter Name

বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি দিনের নায়ক ওয়াসিম আর নেই। শনিবার দিবাগত রাত (১৮ এপ্রিল) সাড়ে ১২টার দিকে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন

সত্তর-আশির দশকে ঢাকাই সিনেমায় একচেটিয়া আধিপত্য ছিল ওয়াসিমের। তার আসল নাম ছিল মেজবাহউদ্দীন আহমেদ। পড়াশোনা করেছেন ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে। স্কুলে তিনি তুখোড় খেলোয়াড় ছিলেন। এরপর আনন্দমোহন কলেজে পড়েন। কলেজে পড়া অবস্থায় নাম করেছিলেন বডি বিল্ডার হিসেবে। ১৯৬৪ সালে তিনি বডি বিল্ডিংয়ের জন্য ‘মিস্টার ইস্ট পাকিস্তান’ খেতাব অর্জন করেছিলেন। চারিদিকে তখন তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।

বিজ্ঞাপন

এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে। ওয়াসিম স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি ছিলেন বেশ জনপ্রিয়।

ছাত্রজীবনে নিয়মিত হলিউডের ছবি দেখতেন মেজবাহ। কিন্তু কখনও ভাবেননি অভিনয়ে ক্যারিয়ার গড়ার কথা। পেশা হিসেবে সেনাবাহিনী বা পুলিশ প্রশাসনকে বেছে নিতে চেয়েছিলেন তিনি।

একদিন এফডিসিতে ‘ওরা ১১ জন’ ছবির শুটিং দেখতে এসেছিলেন মেজবাহ। কারণ, নায়ক খসরু ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। নায়ক সোহেল রানার সঙ্গেও আগে থেকেই পরিচয় ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে। সেদিন অনেক পরিচালকের নজর কাড়েন সুদর্শন মেজবাহ। কিন্তু তখনও তিনি অভিনয়ের কথা ভাবেননি।

১৯৭২ সালে ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’ সিনেমার শুটিং সেটে পারিবারিক বন্ধু প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এস এম শফী হঠাৎ মেজবাহকে একটি ছোট দৃশ্যে অভিনয় করতে বলেন। নায়ক রাজ্জাককে ইংরেজিতে একটি সংলাপ বলতে হবে। সেই দৃশ্য এক কাটেই করে ফেলেন মেজবাহ। এতে উপস্থিত সবাই প্রশংসা করেছিলেন তার।

এরপর থেকে প্রায়ই এফডিসিতে আসতেন। এস এম শফী কীভাবে ছবি নির্মাণ করেন তা দেখতে। নজরে পড়েন পরিচালক মহসিনের চোখে। ‘রাতের পর দিন’ ছবির নায়ক হওয়ার প্রস্তাব দিলেন মেজবাহ। মনে সংশয় ছিল। কারণ সেই সময়ে সেনাবাহিনীর মেজর পদে ডাক পড়েছিল তার। পরিবারকে না জানিয়ে হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন সিনেমায় অভিনয়ের। এরপর শুটিং শুরু হয়। পরিচালক মেজবাহর নাম পালটে রাখেন ওয়াসিম। সেই থেকে মেজবাহ হয়ে গেলেন বাংলা চলচ্চিত্রের সুপার হিট নায়ক ওয়াসিম।

১৯৭৩ সালে মহা সমারোহে মুক্তি পায় ‘রাতের পর দিন’। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি অভিনেতাকে। ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া ওয়াসিম অভিনীত ও এস এম শফী পরিচালিত ‘দি রেইন’ পৃথিবীর ৪৬টি দেশে ‘দি রেইন’ মুক্তি পেয়েছিল। ছবিটি বাম্পার হিট হয়।

১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ঢাকার চলচ্চিত্রে ওয়াসিম ছিলেন শীর্ষ নায়কদের একজন। দি রেইন, ডাকু মনসুর, জিঘাংসা, কে আসল কে নকল, বাহাদুর, দোস্ত দুশমন, মানসী, দুই রাজকুমার, সওদাগর, নরম গরম, ইমান, রাতের পর দিন, আসামি হাজির, মিস লোলিতা, রাজ দুলারী, চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা, লুটেরা, লাল মেম সাহেব, বেদ্বীন, জীবন সাথী, রাজনন্দিনী, রাজমহল, বিনি সুতার মালা, বানজারান, মিস লোলিতাসহ প্রায় দেড় শতাধিক সুপার হিট ছবির নায়ক এই কিংবদন্তি অভিনেতা। হাতেগোনা অল্প কিছু ছবি ছাড়া প্রতিটি ছবিই সুপারহিট হয়েছিল।


নিউজ সোর্সঃ বডি বিল্ডার মেজবাহ যেভাবে নায়ক ওয়াসিম হয়ে উঠলেন

x