ঢাকা, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:০৫ অপরাহ্ন
বাংলা নববর্ষে তারুণ্যের প্রত্যাশা
Reporter Name

‘আইলো আইলো আইলোরে রঙে ভরা বৈশাখ আবার আইলোরে’- বৈশাখের চিরচেনা এই গানের মধ্য দিয়েই হাজির হয়েছে বাংলা বর্ষের নতুন বছর ১৪২৮। নববর্ষ বাঙালির সহস্র বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, রীতি-নীতি, প্রথা, আচার অনুষ্ঠান ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। প্রতিবছর জাঁকজমকভাবে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হলেও এবার করোনা সংকটে হতাশা আর আশঙ্কার কালো মেঘ জমেছে গোটা বিশ্বজুড়ে। মহামারি উৎসব কেড়ে নিলেও শিক্ষার্থীদের মনে জল্পনাকল্পনার যেনো শেষ নেই। বাংলা নববর্ষকে ঘিরে তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ

 

  • নববর্ষে ষোল আনা থাকুক বাঙালিয়ানা

বাংলা বছরের প্রথমদিন নববর্ষ, তাই বাঙালির কাছে দিনটির বিশেষ গুরুত্ব বরাবর ই থাকে। পান্তা-ইলিশ দিয়ে দিনের শুরু, বাইরে ঘোরাঘুরি, মঙ্গলশোভা যাত্রা, বৈশাখমেলা উপভোগ বেশ প্রথাগত ভাবেই হয়ে অাসছে। প্রতিবছরই সারাদেশ জুড়ে অনেক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে পালিত হয় দিবসটি। তবে বৈশাখের অর্ধমাস থেকেই দৃশ্যপট যায় বদলে। আমরা হয়ে যাই আধুনিকতার দাস, নিজ অস্তিত্বকে জেনে বুঝে সময়ের প্রয়োজনে করি বিনাশ। পাশাপাশি নানা স্পর্শকাতর স্বার্থানেষী ব্যক্তিবর্গ বহু আগে থেকেই নববর্ষ কেন্দ্রিক নেতিবাচক তকমা লাগিয়ে চলেছে অবিরাম। এভাবে চললে নববর্ষ শুধু নয় বরং বাঙালিয়ানা বিষয়টাই মুছে যাবে অভিধান থেকে। সুতরাং, ষোলআনা বাঙালিয়ানার বিকল্প কোথায়? তবে এর মানে কখনোই আধুনিকতাকে বিসর্জন দেয়া নয়। প্রয়োজন দু’দিক কার বাস্তবিক বা সময়োপযোগী মিশেল।

অনন্য প্রতীক রাউত

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

 

  • তরুণ মনে অটুট থাকুক বাঙালি চেতনা

বর্তমান সময়ে তরুণ প্রজন্মের কাছে বৈশাখ মানে শুধুমাত্র বিশেষ একটি দিন, একটি সরকারি ছুটির দিন। এই একটি দিনেই নিজেকে বাঙ্গালি হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করি আমরা। পহেলা বৈশাখ এখন লাল-সাদা শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরিধানের একটি বিশেষ দিবসে পরিণত হয়েছে। অথচ বছরের অন্যান্য দিনগুলোতে তরুণ প্রজন্ম বেমালুম ভুলে যায় যে আমরা বাঙালি। বাঙালি সংস্কৃতি পালনে হীনম্মন্যতায় ভুগি। এমনকি বাংলা তারিখ টা পর্যন্ত বলতে পারি না। নতুন বছরে নতুন সূর্য জীবনে আনুক অনেক সুখ-সমৃদ্ধি। খুব ভালো কাটুক বাঙালির আগামী দিনগুলো। বাঙালির চিরায়ত রীতিনীতি সবসময় পালন করা এবং পরিপূর্ণ বাঙালী সত্ত্বাকে ধারণ করার মাঝেই বৈশাখ উদযাপনের প্রকৃত সার্থকতা নিহিত। শুধু একটি দিনে হয়, বছরের প্রতিটি দিনেই সবাই ধারণ করুক বাঙালি চেতনা এমনটাই প্রত্যাশা।

মোছাঃ নুসরাত জাহান

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

  • ঐতিহ্যের সঙ্গী হোক বৈশাখ

‘বৈশাখ’ শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে আসে বৈশাখী মেলার বর্ণিল আয়োজন, বিভিন্ন স্বাদের খাবার-দাবার এবং উৎসবমুখর একটি দিন। বৈশাখ মানেই পান্তাভাত ও ইলিশ ভাজা, মেলায় ঘুরতে যাওয়া আর হালখাতার প্রচলন তো আছেই। বাঙালীর নববর্ষ উদযাপন পুরো দেশজুড়ে হয়ে থাকে। নেই কোন ধর্মীয় ভেদাভেদ। তবে বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে বৈশাখ মানেই নতুন কাপড় কেনা, হোটেল বা রেস্টুরেন্টে খাবারের পরিকল্পনা করা। আজকাল আর সেই পুরনো ঐতিহ্যের বিষয়গুলো তেমন চোখে পড়ে না। ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যদি নববর্ষ পালন করা হয় তবে তা অনেক বেশি অর্থবহ ও আনন্দদায়ক হবে। পহেলা বৈশাখ সবার মাঝে নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করুক আর তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এটিকে ধারণ করুক বাংলা নববর্ষে এমনটাই প্রত্যাশা।

ইকবাল হাসান

শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

 

  • নতুন বছর নিয়ে আসুক আলোর বার্তা

‘বার মাসে তের পার্বণ’ খ্যাত বাঙালিদের অনেক প্রিয় উৎসবের একটি পহেলা বৈশাখ। হাসি-কান্না ভুলে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা নিজেদের শিকড়কে নতুন রুপে স্মরণ করি। আমার কাছে পহেলা বৈশাখ মানেই সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ, পান্তা-ইলিশ, ভাতের সাথে বিভিন্ন পদের ভর্তা, নাগরদোলায় চড়া, বৈশাখী মেলায় ঘুরতে যাওয়া, নতুন জামা কাপড় পড়া, মেলায় কেনাকাটা ইত্যাদি। কিন্তু বিশ্বব্যাপী মহামারীর কারনে গতবছর আমরা সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজ নিজ বাসায় প্রিয়জনদের সাথে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেছি। এবছর‌ও আমাদের যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এখন চাওয়া নতুন বছরে নতুন সূর্যোদয়ের মাধ্যমে পুরো পৃথিবী অন্ধকার মুক্ত হোক। আলোর বার্তা নিয়ে আসুক বাংলা নববর্ষ। হাসি ফুটুক সবার মুখে।

সাবিহা তাসমীম

শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

 

  • মুছে যাক ব্যর্থতার গ্লানি

নববর্ষ মানে নতুন দিন, নতুন সময়, নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন, নতুন করে নিজেদের তৈরি করে একসাথে অবিচল পথচলার শপথ গ্রহণ। অতিতের ক্লান্তিময় ভুলগুলো, ব্যর্থতার গ্লানি গুলো নববর্ষের নতুন আলোয় শুদ্ধ করে নতুন ভাবে স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়ন করার নামই হলো নববর্ষ। সাম্প্রদায়িকতার মায়াজাল ছিন্ন করে অসাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করার শিক্ষা দেয় নববর্ষ। বাংলাদেশে প্রতিবছর বাংলা সনের প্রথম দিন বাঙালিরা নববর্ষ উদযাপন করে থাকেন। নববর্ষের বাহারি পটচিত্র আঁকা রং বেরঙের শাড়ি, পাঞ্জাবি পড়ে তরুণ প্রজন্ম যেন মেতে ওঠে লীলাখেলায়। পান্তা আর ভাজা ইলিশের গন্ধে প্রকৃতি থেকে বিদায় নেয় সকল অশুভ শক্তি। অতিত থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের নতুন ভাবে তৈরি করার এখনই উপযুক্ত সময়। পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে আমরা আমাদের মধ্যকার সকল বিভেদ ও দ্বিধাবোধ দূর করে এক নতুন সম্প্রীতি বোধের জন্ম দেই। পহেলা বৈশাখ আমাদের জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক এমনটাই প্রত্যাশা।

ইমন ইসলাম

শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

 

  • নববর্ষ বাংলায় সমৃদ্ধি বয়ে আনুক

প্রতিটি জাতিরই কিছু নিজস্ব সত্ত্বা আছে যার মধ্য দিয়েই প্রকাশ পায় ওই জাতির আত্মকথন। পহেলা বৈশাখও বাঙালি জাতির এমনই এক প্রাণের উৎসব। সেই প্রাচীনকাল থেকে যুগ-যুগ ধরে এদেশের সর্বস্তরের মানুষ প্রতি বছর বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে দিনটিকে উদযাপন করে আসছে। বৈশাখ মানেই যেন রঙিন পোস্টারে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, গ্রামের পথে-ঘাটে মেলা, ছেলেদের সাদা পাঞ্জাবি ও মেয়েদের লাল পাড়ের সাদা শাড়ি, মঞ্চনাটক, ঘরে ঘরে পান্তা-ইলিশ, কাঁচা মরিচ খাওয়ার ঢল! তবে সাম্প্রতিক সময়গুলোতে অপসংস্কৃতি চোখে পড়ছে। ফাস্টফুড, হিন্দি গানের মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্মের একাংশ বৈশাখ উদযাপন করছে। এটি আমাদের জাতিসত্তার জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। এর নির্মূল নিশ্চিত করতে হবে। তরুণ প্রজন্মের কাছে বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরতে হবে। এ বৈশাখের উৎসব নিজস্ব ঐতিহ্য নিয়ে যুগ যুগ ধরে বাঙ্গালীর সমৃদ্ধি বয়ে আনুক।

লাকি আক্তার

শিক্ষর্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

 

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x