ঢাকা, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:৪১ অপরাহ্ন
পহেলা বৈশাখে তারুণ্যের ভাবনা
Reporter Name

বাঙালির মূল ধারার অস্তিত্ব বাংলা নববর্ষ (পহেলা বৈশাখ)। মহা উৎসব, ধুমধামে উৎযাপিত হয় দিবসটি৷ পহেলা বৈশাখ মানে; পান্তা ইলিশ, বর্ণিল সাজে বটতলা, হালখাতা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠান, গ্রামেগঞ্জে মেলার আয়োজন ইত্যাদি সবার হৃদয় জুরে বহমান। প্রতি বছর সারা দেশজুড়ে উৎযাপিত হয় দিবসটি। তবে এবারের পহেলা বৈশাখ অন্যান্য বছরের মত নয়। মহামারী করোনার জন্যে, লোকসমাগম কমাতে, উৎসব অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। তবুও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জল্পনা কল্পনার কমতি নেই। তারই ধারাবাহিকতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের তরুণ শিক্ষার্থীরা কী ভাবছেন তা তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক রিদুয়ান ইসলাম

 

  • নববর্ষ বাংলায় সমৃদ্ধি বয়ে আনুক

প্রতিটি জাতিরই কিছু নিজস্ব সত্ত্বা আছে যার মধ্য দিয়েই প্রকাশ পায় ওই জাতির আত্মকথন। পহেলা বৈশাখও বাঙালি জাতির এমনই এক প্রাণের উৎসব। সেই প্রাচীনকাল থেকে যুগ-যুগ ধরে এদেশের সর্বস্তরের মানুষ প্রতি বছর বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে দিনটিকে উদযাপন করে আসছে। বৈশাখ মানেই যেন রঙ্গীন পোস্টারে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, গ্রামের পথে-ঘাটে মেলা, ছেলেদের সাদা পাঞ্জাবি ও মেয়েদের লাল পাড়ের সাদা শাড়ি, মঞ্চনাটক, ঘরে ঘরে পান্তা-ইলিশ, কাঁচা মরিচ খাওয়ার ঢল! তবে সাম্প্রতিক সময়গুলোতে অপসংস্কৃতি চোখে পড়ছে। ফাস্টফুড, হিন্দি গানের মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্মের একাংশ বৈশাখ উদযাপন করছে। এটি আমাদের জাতিসত্তার জন্য চড়ম হুমকিস্বরূপ। এর নির্মূল নিশ্চিত করতে হবে। তরুণ প্রজন্মের কাছে বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরতে হবে। এ বৈশাখের উৎসব নিজস্ব ঐতিহ্য নিয়ে যুগ যুগ ধরে বাঙ্গালীর সমৃদ্ধি বয়ে আনুক।

রুকাইয়া মিজান মিমি, 

শিক্ষর্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ

 

  • বাঙালিয়ানা থাকুক ষোলআনা

বাংলা বছরের প্রথমদিন নববর্ষ, তাই বাঙালির কাছে দিনটির বিশেষ গুরুত্ব বরাবর ই থাকে। পান্তা-ইলিশ দিয়ে দিনের শুরু, বাইরে ঘোরাঘুরি, মঙ্গলশোভা যাত্রা, বৈশাখমেলা উপভোগ বেশ প্রথাগত ভাবেই হয়ে অাসছে। প্রতিবছরই সারাদেশ জুড়ে অনেক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে পালিত হয় দিবসটি। তবে বৈশাখের অর্ধমাস থেকেই দৃশ্যপট যায় বদলে। আমরা হয়ে যাই আধুনিকতার দাস, নিজ অস্তিত্বকে জেনে বুঝে সময়ের প্রয়োজনে করি বিনাশ। পাশাপাশি নানা স্পর্শকাতর স্বার্থানেষী ব্যক্তিবর্গ বহু আগে থেকেই নববর্ষ কেন্দ্রিক নেতিবাচক তকমা লাগিয়ে চলেছে অবিরাম। এভাবে চললে নববর্ষ শুধু নয় বরং বাঙালিয়ানা বিষয়টাই মুছে যাবে অভিধান থেকে। সুতরাং, ষোলআনা বাঙালিয়ানার বিকল্প কোথায়? তবে এর মানে কখনোই আধুনিকতাকে বিসর্জন দেয়া নয়। প্রয়োজন দু’দিক কার বাস্তবিক বা সময়োপযোগী মিশেল।

অনন্য প্রতীক রাউত

শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ

 

  • করোনাকালীন উৎফুল্লতাহীন নববর্ষ

বিগত এক বছরেরও বেশি সময় হলো আমরা করোনা ভাইরাসের সাথে মোটামুটি পরিচিত। এবছরের শুরুর দিকে করেনার প্রকোপ কিছুটা কম থাকলেও  মার্চের শেষ দিক থেকে ক্রমেই এই প্রকোপ বেড়েই চলছে। রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্তের হার আর মৃত্যুসংখ্যার কারনে এ বাবের বাংলা নববর্ষকে ঘিরে নেই কোন উৎসবের আমেজ, নেই কোন আনন্দ আয়োজন। একেবারেই উৎফুল্লতাহীন, মলিন হয়ে বাঙালিদের কাছে আগমন হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। এরই পাশাপাশি রয়েছে এইবারের রমজানুল মোবারক। যেটি পহেলা বৈশাখের দিন থেকেই শুরু হতে যাচ্ছে। তাই সব মিলিয়ে প্রতিটি বাঙালিকেই বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে এই কঠোর অবস্থা মোকাবেলা করার জন্য। সাধারন  মানুষের জন্য বিষয়টি আরো বেশি জটিল। সবাইকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে এবং ঘরে অবস্থান করেই পহেলা বৈশাখ উৎযাপন করা উচিত।

সানজিদা মাহমুদ মিষ্টি

শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষনা ইন্সটিটিউট

 

  • পান্তা-ইলিশের স্বাদ পাক কৃষক সমাজও

বাংলা ১৪২৭ সনকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছর ১৪২৮ ‘পহেলা বৈশাখকে’ কে বরণে প্রস্তুত পুরো বাংলাদেশ। বাঙালির খুবই সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে এই পহেলা বৈশাখ ঘিরে। ইতিহাসের পাতায় চোখ বোলালে দেখা যায় পহেলা বৈশাখের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন তৎকালীন কৃষক সমাজ৷ তাদের মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল নববর্ষ। এখন তো আমরা সুশীল সমাজ নববর্ষ আসলেই বড় অংকের টাকা দিয়ে নিজেরা পান্তা-ইলিশ ভোঁজ করে ফেলি। একবারও চিন্তা করি না; যে কৃষক সমাজের কারণে এই নববর্ষ তারা কি এই উৎসবে উচ্ছ্বসিত? নাকি পেটের দায়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে আছে তারা! আরেকটি বিষয় নববর্ষের আভাস আসলেই ইলিশের চড়া দাম লক্ষনীয়। যার ফলেও সাধারণ মানুষ এমন একটি উৎসবে পান্তা-ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত থাকে৷ এসব সমস্যা উৎরিয়ে ইলিশের স্বাদ পৌছে যাক দেশের প্রতিটি পরিবারে এটাই নববর্ষের প্রত্যাশা।

হারুন অর রশিদ নয়ন

শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x