ঢাকা, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৪ অপরাহ্ন
আট শতাংশ মানুষ পেয়েছেন ২ ডোজ
হাবিবুর রহমান খান

করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে মানুষের আগ্রহ যেমন বেড়েছে, তেমনি প্রতিরোধী টিকা প্রয়োগেও বেড়েছে গতি। এ বছর ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে টিকা দেওয়া শুরু হয়। এরপর আগস্ট পর্যন্ত মাত্র ৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ মানুষকে দুই ডোজ দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু গত দুই সপ্তাহে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। ৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া গণটিকার দ্বিতীয় ডোজের কার্যক্রমে সারা দেশে টিকা নিয়েছেন প্রায় ৬২ লাখ মানুষ। টিকা প্রয়োগের পাশাপাশি বাড়ছে মজুতও। এ বছরের মধ্যেই প্রায় ২০ কোটি ডোজ টিকা দেশে আসবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

দায়িত্বশীলরা বলছেন, প্রতি সপ্তাহে ৫০ লাখ করে টিকা আসবে। সর্বশেষ শুক্রবার মধ্যরাতে চীন থেকে কেনা সিনোফার্মের ৫৪ লাখ টিকা দেশে এসেছে। এ মাসে চীন ও কোভ্যাক্সের মাধ্যমে আরও দুই কোটি ডোজ টিকা আসার কথা রয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে এখন সবকিছুই উন্মুক্ত। খুলে দেওয়া হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। তবে প্রায় সব জায়গায় উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি। করোনা সংক্রমণ কমে আসায় অনেকের মধ্যে স্বস্তির ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। তাই তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় টিকার গতি আরও বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে বলে মনে করছেন তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও জানান, এ মুহূর্তে সরকার টিকার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। নানা উৎস থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে তা। চীনের কাছ থেকে সাত কোটি টিকা কেনার চুক্তি হয়েছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে কেনা বাকি টিকা আনার জোর প্রচেষ্টা চলছে। এ ছাড়া কোভ্যাক্সের আওতায় চীন থেকে ১০ কোটি ডোজ টিকা কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। চুক্তি হয়েছে দেশে টিকা উৎপাদনেরও।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া শনিবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, করোনার প্রায় ২০ কোটি ডোজ টিকা এ বছরের মধ্যে দেশে পৌঁছাবে। এ সময়ের মধ্যে আমরা ১০ কোটি মানুষকে টিকা দিতে পারব। তিনি বলেন, টিকা প্রয়োগে গতি আনতে প্রয়োজনে টিকা দেওয়ার কেন্দ্র এবং কলেবর বাড়ানো হবে।

মহামারিতে আক্রান্ত ও মৃত্যু ঠেকাতে দেশের ৮০ শতাংশ নাগরিককে বিনা মূল্যে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে দেশে বর্তমানে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১ হাজার। সে হিসাবে সাড়ে ১৩ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে চায় সরকার। টিকাদানের প্রথম দিনে ৭ ফেব্রুয়ারি ৩০ হাজার মানুষকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। ৭ থেকে ১২ আগস্ট চলে গণটিকা কার্যক্রম। ওই ছয় দিনে টিকা পেয়েছেন ৫৩ লাখ মানুষ। এরপর নিয়মিত টিকা দেওয়া হয়। গণটিকার দ্বিতীয় ডোজের কার্যক্রম ৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে চলে রোববার পর্যন্ত। এ ছয় দিনে মোট ৬১ লাখ ৯৯ হাজার ৪২৬ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ডোজ ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৬৪ এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪৯ লাখ ৩ হাজার ৫৬২ জন। গণটিকা দ্বিতীয় ডোজের কার্যক্রম শুরুর দিন ৭ সেপ্টেম্বর মোট টিকা দেওয়া হয় ৩০ লাখ ১৬ হাজার ৭০৬ জনকে। পরের দিন নেন ১১ লাখ ৫৪ হাজার ১৬৭ জন। ৯ সেপ্টেম্বর টিকা পেয়েছেন ৯ লাখ ৬৭ হাজার ১১৪ জন। ১০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার হওয়ায় বেশির ভাগ টিকা কেন্দ্র বন্ধ ছিল। আবার যেসব কেন্দ্র খোলা ছিল সেখানেও বন্ধের দিন থাকায় টিকাগ্রহীতার সংখ্যা ছিল খুবই কম। ওইদিন মাত্র ৮ হাজার ২৫৮ জন টিকা নেন। তারা সবাই দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন। শনিবার মোট টিকা নিয়েছেন ৫ লাখ ৬১ হাজার ৭৬৬ জন। শেষদিন রোববার সারা দেশে টিকা নিয়েছেন ৪ লাখ ৯১ হাজার ৪১৫ জন।

দেশে বর্তমানে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, মডার্না ও সিনোফার্ম-এ চার কোম্পানির টিকা দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা এসেছে প্রায় ৪ কোটি। এর মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার এক কোটি ৩৩ লাখ ৫৯ হাজার ৬৪০, মডার্নার ৫৫ লাখ, সিনোফার্মের ১ কোটি ৯৯ লাখ ১ হাজার ৩৫০ ও ফাইজারের ১১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা। রোববার পর্যন্ত সবমিলিয়ে টিকা নিয়েছেন তিন কোটি ৪৭ লাখ ৭৭ হাজার ৭৬১ জন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৯ লাখ ২২ হাজার ৭১৫ জনকে। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৪৬ জন। এখন পর্যন্ত সুরক্ষা অ্যাপ ও পাসপোর্টের মাধ্যমে নিবন্ধন করেছেন ৪ কোটি ১১ লাখ ৪৮ হাজার ৭১৯ জন।

জানতে চাইলে আইইডিসিআর’র উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, দেশে টিকার চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়ছে। সম্প্রতি টিকার মজুতও বাড়ছে। পাইপলাইনে কয়েক মাসে বেশ কিছু টিকা আসার কথা রয়েছে। মজুত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিকা প্রয়োগও বাড়াতে হবে। গণটিকার দ্বিতীয় ডোজ কার্যক্রমে ব্যাপকসংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এখন নিয়মিত টিকা প্রয়োগ বাড়াতে হবে। এ মাসের মধ্যে ১০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক যুগান্তরকে বলেন, গণটিকার দ্বিতীয় কার্যক্রম সুন্দরভাবে শেষ হয়েছে। ব্যাপক উৎসাহের মধ্য দিয়ে সবাই টিকা নিয়েছে। এ সময়ে যারা বাদ পড়েছেন তারা কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে পারবেন। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে টিকা দেওয়ার গতি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলে আমরা তা সুচারুভাবে বাস্তবায়নে উদ্যোগে নেব।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x