ঢাকা, শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ০৬:০৯ অপরাহ্ন
তালেবান প্রধান কোথায়?
দৈনিক ডাক অনলাইন ডেস্ক

তালেবানরা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর সংগঠনটির অনেক নেতা-কর্মীরাই কাবুলে চলে এসেছেন। দীর্ঘ ২০ বছরের নির্বাসন কাটিয়ে কাবুলের মাটিতে পা রেখেছেন ডেপুটি লিডার মোল্লা আবদুল গনি বারদার, জাবিউল্লাহ মুজাহিদী সহ তালিবান শীর্ষ নেতারা। পাশাপাশি, বহু বছর পর আবার আফগানিস্তানে ফিরেছেন শত শত তালেবান কমান্ডার, সশস্ত্র মাদ্রাসা ছাত্র ও বয়স্ক নেতা।

কাবুলের মসজিদে তাদের অনেকে এরই মধ্যে প্রকাশ্যে ধর্মোপদেশ দিয়েছেন, বিরোধী দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, এমনকি আফগান ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আড্ডাও মেরেছেন। তবে, ব্যতিক্রম শুধু তালেবান প্রধান হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। এখনও অন্তরালে রয়ে গেছেন তিনি। হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাকে ঈমানদারদের নেতা বলে অভিহিত করা হয়। তিনি ২০১৬ সাল থেকে তালেবানের প্রধান নেতা। ওই সময়টাতে তালেবান আন্দোলন একটা সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। তালেবান নেতা মোল্লা ওমর মারা যাওয়ার পর ওই সংগঠনের পরবর্তী প্রধান ২০১৬ সালে মোল্লা আখতার মনসুর মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন। এরপর সংগঠনটির দায়িত্ব গ্রহন করে বিভিন্ন সঙ্কট মোকাবেলা করেছেন তিনি। ওই সময়টাতে তালেবান আন্দোলনে ক্ষমতাকেন্দ্রিক সাময়িক বিভক্তি দেখা দিলে তিনি ওই দ্ব›দ্ব দূর করে সংগঠনে একতা নিয়ে আসেন।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আখুন্দজাদার দৈনন্দিন কর্মকান্ড সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায়নি। মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবে বার্তা দেয়ার মধ্যেই তার প্রকাশ্য কর্মকান্ড সীমিত। তার মাত্র একটি ছবি প্রকাশ করে তালেবান। তাদের নেতা এই মুহুর্তে কোথায় আছেন, জানাচ্ছে না তারা। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর ইচ্ছায় শীঘ্রই তাকে দেখতে পাবেন।’

অন্যরা বলছেন, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর চূড়ান্ত প্রস্থান না হওয়া পর্যন্ত তালেবানরা তাদের নেতার খোঁজ দেবে না। পাকিস্তানভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইমতিয়াজ গুল বলেছেন, ‘চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত যতদিন বিদেশী সৈন্যরা আফগানিস্তানের মাটিতে থাকবে, তারা তাদের নেতাকে লুকিয়ে রাখবে। সে কারণেই সুপ্রিম লিডার সামনে আসছেন না।’ শীর্ষ নেতাদের আড়ালে রাখার দীর্ঘ ইতিহাস তালেবানের রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় আখুন্দজাদার পূর্বসূরি মোল্লা আখতার মনসুরের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের মৃত্যুও দীর্ঘদিন গোপন রাখে তালেবান। মৃত্যুর দুই বছর পর ২০১৫ সালে মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা ইয়াকুব বাবার মৃত্যুর বিষয় প্রথম বিশ্বকে জানান। তাই কাবুল পতনের পর আখুন্দজাদার প্রকাশ্যে না আসা তার জীবিত থাকা নিয়ে সংশয়ের উদ্রেক করেছে।

এদিকে, বেলজিয়ামভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রæপের এশিয়া কর্মস‚চির প্রধান লরেল মিলার বলেছেন যে, মোল্লা ওমরের মতোই আখুন্দজাদা নিভৃতে জীবনচর্চার পথই বেছে নিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হামলায়র কথা বিবেচনা করে তাকে ঘিরে তালেবানের গোপনীয়তা স্বাভাবিক। মিলার বলেন, ‘তালেবানের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আখুন্দজাদা শিগগিরই জনসমক্ষে হাজির হবেন। আখুন্দাজাদা মারা গেছেন, জনমনে এ সংশয় দ‚র করতেই হয়তো তিনি প্রকাশ্যে আসবেন।’ ‘তবে একবার নিজেকে দেখা দেয়ার পর দ‚র থেকে আখুন্দজাদার সংগঠনের নেতৃত্ব পরিচালনার সম্ভাবনাই বেশি।’

তবে একাধিক দেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মনে করছেন যে, পাকিস্তানে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন তালিবান প্রধান। ওখান থেকেই আফগানিস্তানের পরিস্থিতির উপরে বিশেষ নজর রাখছেন এবং বিশ্বস্তদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিচ্ছেন। তালিবান সরকার গঠন সম্প‚র্ণ হলেই প্রকাশ্যে আসবেন তিনি।’ শোনা যাচ্ছে, কাবুল দখলের পরে সংগঠনের অন্দরে মোল্লা আবদুল গনি বারদার ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজউদ্দিন হাক্কানির অনুগামীদের মধ্যে লড়াই শুরু হয়েছে। সেই লড়াই যাতে নগ্নভাবে প্রকাশ না হয়ে পড়ে, তার জন্যই আড়ালে থেকে কাজ করে চলেছেন আখুন্দজাদা।

এক সময়ে তালিবানদের সংগঠনের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন হিবাতুল্লাহ আখুনযাদা। ২০১৬ সালের মে মাসে মার্কিন সেনাবাহিনীর ড্রোন হামলায় সংগঠন প্রধান আখতার মনসুর মারা যাওয়ার পরেই তালিবান সংগঠনের শীর্ষ পদে আসীন হন। এক দুর্র্ধষ যোদ্ধাবাহিনী গঠন করেন। সেই বাহিনীই মাত্র ৫ বছরের মধ্যে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছে। তার তৈরি করা রণকৌশলেই মাত্র ১ শ’ দিনের মধ্যে মার্কিন ও আফগান সেনাকে চ‚ড়ান্ত নাজেহাল করেছে তালিবান যোদ্ধারা।

স্থিতধি আখুন্দজাদা আল কায়েদার শীর্ষ নেতা আয়মান আল জাওয়াহারির ঘনিষ্ঠ হিসেবেও পরিচিত। তাছাড়া লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মহম্মদের মতো জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদেরও সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। ২০ বছর আগে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর ইরানের সঙ্গে সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়েছিলেন তৎকালীন তালিবান নেতারা। ফলে মার্কিন হামলার সময় ইরানের কাছ থেকে কোনও সাহায্য পায়নি তারা। এবার যাতে তার পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্য খুবই সতর্ক তালিবান নেতৃত্ব। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলি খামেইনির সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে তোলার কাজে নেমেছেন তিনি। সূত্র : এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, ইন্টারনেট।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x