ঢাকা, মঙ্গলবার ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন
টিকায় পিছিয়ে বাংলাদেশ
হাবিবুর রহমান খান

করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে টিকার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে মানুষের। কিন্তু টিকা স্বল্পতার কারণে এখন পর্যন্ত অনেকটা পিছিয়ে আছে দেশ। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। ৭ ফেব্রুয়ারি গণটিকা কার্যক্রম শুরু হলেও এ যাবত ৪ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষকে দুই ডোজ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বর্তমান গতিতে এ কর্মসূচি চললে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে পূর্ণ ডোজের আওতায় আনতে কয়েক বছর লাগবে। এদিকে টিকার জন্য প্রতিদিন গড়ে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করছেন। এক কোটিরও বেশি মানুষ নিবন্ধন করে এসএমএসের অপেক্ষায় আছেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে এখন সবকিছুই উন্মুক্ত। প্রায় কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা নেই। করোনা সংক্রমণ কমে আসায় অনেকের মধ্যে স্বস্তির ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত অধিক সংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যথায় করোনার তৃতীয় ঢেউ আঘাত হানতে পারে। তাই দ্রুত মজুত বৃদ্ধির পরামর্শ দেন তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, এই মুহূর্তে সরকার টিকার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। নানা উৎস থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চীনের কাছ থেকে সাত কোটি টিকা ক্রয়ের চুক্তি হয়েছে। দেশে উৎপাদনের চুক্তিও হয়েছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে কেনা বাকি টিকা আনার জোর প্রচেষ্টা চলছে। তবে সরকারের পাইপলাইনে দ্রুত অধিক সংখ্যক ডোজ আসার সম্ভাবনা কম। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে কোভ্যাক্সের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফাইজারের ৬০ লাখ ডোজ পাওয়ার কথা রয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে ১০ লাখ টিকা আসতে পারে। এ ছাড়া চীন থেকে কেনা টিকার নিয়মিত চালান আসবে সেপ্টেম্বরে। এর বাইরে আপাতত তেমন সম্ভাবনা নেই।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম রোববার কুড়িগ্রামের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, টিকা সংগ্রহ আমাদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। এটা নির্ভর করে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ওপর। পাওয়া সাপেক্ষে আমরা সবাইকে এর আওতায় আনব। গণটিকা কার্যক্রমের দ্বিতীয় ডোজ ৭ সেপ্টেম্বর শুরু হবে বলে জানান তিনি।

মহামারীতে আক্রান্ত ও মৃত্যু ঠেকাতে দেশের ৮০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১৪ কোটি নাগরিককে বিনা মূল্যে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। আগামী বছর ফেব্রুয়ারির মধ্যে আট কোটি মানুষকে এর আওতায় আনা হবে। বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ নাগরিককে টিকা দিতে ১৩ কোটি ১৮ লাখ ডোজ লাগবে। আর ৬০ শতাংশের জন্য লাগবে প্রায় ২০ কোটি ডোজ। এখন যে হারে দেওয়া হচ্ছে, তাতে এ বছর ২০ শতাংশের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব নয়।

৭ ফেব্রুয়ারি দেশে গণটিকাদান শুরু হয়। ওই দিন ৩০ হাজার মানুষকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত টিকা দেওয়া হয়েছে ১৬৩ দিন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় দেড় লাখ ডোজ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭ থেকে ১২ আগস্ট গণটিকা দেওয়া হয়েছিল। ওই ছয় দিনে টিকা পেয়েছেন ৫৩ লাখ মানুষ।

দেশে বর্তমানে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, মডার্না ও সিনোফার্ম-এ চার কোম্পানির টিকা দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, রোববার রাতে চীন থেকে সিনোফার্মের আরও তিন লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত বিভিন্ন উৎস থেকে এসেছে তিন কোটি ১৭ লাখ ৬০ হাজার ২৬০ ডোজ। এর মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার এক কোটি ৩৩ লাখ ৫৯ হাজার ৬৪০, মডার্নার ৫৫ লাখ, সিনোফার্মের এক কোটি ২৮ লাখ ডোজ এবং ফাইজারের এক লাখ ৬২০ ডোজ টিকা। রোববার পর্যন্ত (২৯ আগস্ট) প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে এক কোটি ৮২ লাখ ৮৯ হাজার ১৮ জনকে। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৭৮ লাখ ৪০ হাজার ১৬৯ জন। সব মিলিয়ে টিকা নিয়েছেন দুই কোটি ৬১ লাখ ২৯ হাজার ১৮৭ জন। বর্তমানে সরকারের হাতে মজুত আছে ৫৬ লাখ ৩১ হাজার ৭৩ ডোজ টিকা। এখন পর্যন্ত সুরক্ষা অ্যাপ ও পাসপোর্টের মাধ্যমে নিবন্ধন করেছেন তিন কোটি ৭৬ লাখ ১৫ হাজার ১৫৮ জন। শুধু নিবন্ধিত এক কোটির বেশি মানুষ অপেক্ষায় আছেন।

পূর্ণ দুই ডোজ টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অনেকটা পিছিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৮ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে টিকা নিয়েছেন ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ভারতে ১০ শতাংশ, পাকিস্তান ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, শ্রীলংকা ২৮ দশমিক ১ শতাংশ, নেপাল ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ, আফগানিস্তান ১ দশমিক ২ শতাংশ। মালদ্বীপের ৮০ দশমিক সাত শতাংশ মানুষ পূর্ণ দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন। ভুটানে এ সংখ্যা ৬৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

জানতে চাইলে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, দেশে টিকার চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়ছে। কিন্তু সরকারের হাতে পর্যাপ্ত মজুত নেই। পাইপলাইন থেকেও পর্যাপ্ত আসার সম্ভাবনা নেই। সক্ষমতা থাকলেও মজুতের অভাবে বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া যাচ্ছে না। তাই সরকারের উচিত বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা সংগ্রহ করা। এ জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো উচিত। সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব দেশে কমপক্ষে ১০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছে কোভ্যাক্স। এখন পর্যন্ত আমরা মাত্র ৪ ভাগ মানুষকে টিকা দিয়েছি। আগামী এক মাসে ১০ শতাংশ মানুষকে এর আওতায় আনতে হলে এ পর্যন্ত যা দেওয়া হয়েছে তার দেড়গুণ টিকা প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক যুগান্তরকে বলেন, আমরা শুধু টিকাদানের বিষয়টি দেখভাল করি। টিকা প্রয়োগে আমাদের যে নির্দেশনা দেওয়া হয় সেটা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করে থাকি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x