ঢাকা, সোমবার ১৩ মে ২০২৪, ০৭:১২ অপরাহ্ন
বিদ্যালয়ের  প্রধান শিক্ষকের সঞ্চয়ী হিসাবে জমা ৩৪ লক্ষ টাকা, রয়েছে নানা অনিয়ম
মাসুদুর রহমান

সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩৪ লক্ষ টাকা প্রধান শিক্ষকের সঞ্চয়ী হিসাবে জমা রয়েছে।দুর্ণীতি, অর্থ আত্মসাৎ, নিয়োগ বানিজ্য ও শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে দুর্ব্যবহার এবং শিক্ষার্থীদের থেকে আদায়ের ৩৪ লক্ষ টাকার তদন্তের দাবি জানিয়ে ওয়াজেদা পারভীনের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সঠিক তদন্ত করে জামালপুর জেলা প্রশাসক,সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রশাসন,শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ সহ শিক্ষা বোর্ড এর নিকট আইনগত ব্যবস্থার জন্য জোর দাবী জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী, অভিভাবক, সচেতন মহল এবং স্থানীয় এলাকাবাসী ।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারী সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ওয়াজেদা পারভীন।২০১৬ সালে ১৬ জুলাই রুপালী ব্যাংক লিঃ আরামনগর বাজার শাখায় জামালপুর স্টেশন রোড ঠিকানা ব্যবহার করে তিনি তার ব্যক্তিগত সঞ্চয়ী হিসাব (নং-৫৯২৬০১০০০০৩১৯) খোলে ছাত্রীদের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষকের নিজ নামীয় ব্যক্তিগত সঞ্চয়ী হিসাবে ব্যাংক রশিদের মাধ্যমে অর্থ আদায় করেন।  এ ছাড়াও ২০১৬ সালে ৬ শিক্ষক নিয়োগ  বাণিজ্যের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। বহু পন্থার অনিয়ম সহ বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৫-২০১৬,২০১৬-২০১৭ ও ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের ৫৮ লাখ ১৪ হাজার ১২ টাকা ০১ পয়সা দুর্নীতির দায়ে ১০ এপ্রিল প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীনকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি এবং ১১ এপ্রিল বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান সামাদকে প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করে নোটিশ জারী করেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান। এ ছাড়াও এন টি আর সি কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা) নিভা রাণী পাল এর নিকট থেকে এমপিও করা বাবদ ১লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা নেন ওয়াজেদা পারভীন। নিভা রাণী পাল এর নিকট টাকা না থাকার কারণে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ধার নিয়ে প্রধান শিক্ষককে দেন যা নিভা রাণী পাল প্রতি মাসে বেতন থেকে পরিশোধ করছেন বলে তুলে ধরে গত ২৫ এপ্রিল বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নিভা রাণী পাল। ওয়াজেদা পারভীনের বিভিন্ন অনিয়মের কর্মকান্ড আলোচিত হলে ৩ মে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে পরিষদ সভাকক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য শুনে এবং ওয়াজেদা পারভীনকে পুনরায় বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শাহজাদার নিকট সুপারিশ ও নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি বিদ্যালয়ে যোগদানের পরেই বিভিন্ন শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার ও তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় কিছু সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ধাম্বিকতা পোশন করেন। পুনরায় যোগদানের ২ মাস না পেরোতেই পুর্বের ন্যায় তার রূঢ় আচরণ সমেত অনিয়ম চালিয়ে গেলে ১২ আগস্ট বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্ণীতি অর্থ আত্মসাৎ ও শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে দুর্ব্যবহার করায় তার অপসারনের দাবীতে মানববন্ধন করেন শিক্ষক/শিক্ষিকা, কর্মচারীবৃন্ধ। প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীনের দুর্নীতির সঠিক বিচার না হওয়ায় ও পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক , সচেতন মহল ও শিক্ষক-কর্মচারী,শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।  এ নিয়ে জনসাধারন ও সচেতন মহলে  নানা সমালোচনা এবং  প্রশ্ন উঠেছে তার ক্ষমতার উৎস কোথায়? আদৌ কি তদন্ত কিংবা তার নানা অনিয়মের বিচার হবে কি?  এ বিষয়েও মত প্রার্থক্য দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক জানান, দীর্ঘদিন ধরেই প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীন ভুয়া বিল ভাউচার, শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরণ, নিয়োগ বানিজ্য, শিক্ষার্থীদের থেকে তার ব্যক্তিগত একাউন্টে অর্থ আদায় সহ  বিভিন্ন অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন। তার পিছনে প্ররোচক মামা খালুদের ক্ষমতা দেখিয়ে পুনরায় বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।সরকারের আনুগত্যকারীদের প্রতি আমরা তার দুর্নীতির সঠিক বিচারের দাবি জানাই।

প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীনকে তার নানা অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্প্রতি আমাকে সভাপতি সাহেব,আরডিএম স্কুলের হেড স্যার,বয়েজ কলেজের প্রিন্সিপাল স্যার,  মেয়র মহোদয়,এই ৫ জন আমাকে বলেছিলেন আপনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয়ের রোলস অনুযায়ী বিদ্যালয় পরিচালনা করেন। শিক্ষকরা  মানব বন্ধন করার এখন বিদ্যালয়ের রোলস অনুযায়ী কাজ করতেছে  । পরে তাকে ছাত্রীদের থেকে আদায় করা  ৩৪ লক্ষ তার সঞ্চয়ী জমার বিষয়টি নিয়ে সেই টাকা বিদ্যালয়ের হিসাবে জমা দিয়েছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমাকে যখন পুনরায় দায়িত্ব দেওয়া হয় ঘটনার পরে সে তখন সকল কিছুর ডকমেন্টস তাদের কাছে দেওয়া হয়েছে। এটা তো অনেক আগের কথা, যখন আমার ১ মাসের বাধ্যতামূলক ছুটি দিল আর ওই সময়ে সকল কিছুই ডিসমিস করা হয়েছে৷

এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান শাহজাদার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করিলে তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মোজাম্মেল হক বলেন, ইতোপূর্বে সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে দুর্ণীতির দায়ে ছুটি দিয়েছিল সেটা অনুলিপি পেয়েছিলাম। বিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট থাকলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে নিজ অ্যাকাউন্টে টাকা জমা নেওয়ার কোন বিধান নেই বলে জানান তিনি ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x