ঢাকা, সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ০২:২৫ অপরাহ্ন
কিট সংকটে করোনা পরীক্ষা বন্ধ
বিশ্বজিৎ পাল বাবু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম চালু হয়েছে। বুধবার (২৫ আগস্ট) থেকে অক্সিজেন প্লান্টের মাধ্যমে হাসপাতালের আইসোলেশনে থাকা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা পুরোদমে সেবা পেতে শুরু করেছেন। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম চালুর ফলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবায় একধাপ অগ্রগতি হলো।

এদিকে কিট সংকটের কারণে ওই হাসপাতালে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট বন্ধ রয়েছে। ফলে রোগীরা করোনার নুমনা পরীক্ষার পর খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আর ফলাফল পাবেন না। ঠিক কবে নাগাদ কিট পাওয়া যাবে সে বিষয়েও কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। তবে পিসিআর ল্যাবের মাধ্যমে করোনার নমুনা পরীক্ষা করার কাজ অব্যাহত আছে।

অপরদিকে আশার খবর হলো, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনা আক্রান্তের হার কমতে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহ ধরেই আক্রান্তের হার শতকরা ১৫ এ আশেপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। অবশ্য শুরুতে কোনো কোনো দিন আক্রান্তের হার ৪০ ছাড়িয়ে যায়।

কিট সংকট

হাসপাতালে আসা রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা জানান, র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে রোগীরা করোনায় আক্রান্ত কিনা সেটা তাৎক্ষনিকভাবে জানতে পারতেন। এতে করে কারো পজেটিভ ফলাফল এলে তাৎক্ষনিকভাবে তিনি চিকিৎসা শুরু করার সুযোগ পেতেন। অন্যদিকে পিসিআর ল্যাবের মাধ্যমে পরীক্ষার ফলাফল জানতে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় লাগে বলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

মাহদুদুর রহমান নামে এক রোগী জানান, আগে অ্যান্টিজেন টেষ্টের মাধ্যমে কিছুক্ষণের মধ্যেই নমুনার ফলাফল পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন কিট না থাকায় শুধুমাত্র পিসিআর ল্যাবের মাধ্যমে পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে ১০-১২ দিন সময় লাগবে সমস্যায় পড়তে হবে।

কোহিনুর আক্তার জানান, অফিসে যোগদানের জন্য পরীক্ষা করাতে এসেছেন। নমুনা দেয়ার পর জানতে পেরেছেন ফলাফল আসতে কয়েকদিন সময় লাগবে। এক্ষেত্রে অফিসে যোগদানে সমস্যা হবে। হাসপাতালে দ্রুত অ্যান্টিজেন কিট বরাদ্দের দাবি জানান তিনি।

হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মো: ওয়াহিদুজ্জামান জানান, অ্যান্টিজেন কিট সংকট থাকার কারণে আমরা একদিনে ফলাফল জানাতে পারছি না। মজুদ শেষ হয়ে যাবার কারণে এখন চট্টগ্রাম থেকে কিট দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লোক পাঠিয়েও কিট পাওয়া যায়নি। তবে পিসিআর টেস্টের জন্য আমাদেরকে ১০ হাজার কিট দেয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যেহেতু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোনো পিসিআর ল্যাব নেই সেজন্য নমুনা ঢাকায় পাঠাতে হয়। সেখানে সারাদেশের নমুনা থাকার কারণে ফলাফল পেতে রোগীদেরকে কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হয়। যদি সেখান থেকে এক-দুই দিনের ভেতরে ফলাফল দিয়ে দিতো তাহলে রোগীদের জন্য সুবিধা হত।

অক্সিজেন প্ল্যান্ট

দীর্ঘ প্রতীক্ষা ও আন্দোলনের পর অবশেষে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে লিকুইড অক্সিজেন প্লান্টের মাধ্যমে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম বুধবার থেকে চালু হয়েছে। এই সিস্টেমের ফলে একসাথে ২৫০ জন রোগীকে অক্সিজেন সেবার আওতায় আনা গেছে। একই সঙ্গে অধিক অক্সিজেন চাহিদা সম্পন্ন রোগীদের হাই ফ্লো ন্যাজলের ক্যানোলার মাধ্যমে অক্সিজেন সেবা দেয়া যাবে। তবে হাই ফ্লো ন্যাজলের ক্যানোলা আপাতত হাসপাতালটিতে নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অক্সিজেন লিকুইড ট্যাঙ্কের ধারণ ক্ষমতা ১০ হাজার লিটার। মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাঁচ হাজার ৯৫ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করে। সেটা দিয়ে হাসপাতালে থাকা রোগীদের অক্সিজেন সেবা শুরু করা হয়। আগে সিলিন্ডারের অক্সিজেন দিয়ে রোগীদেরকে সেবা দেয়া হতো। প্রায় দিনই অক্সিজেনের সংকট দেখা দেয় বলে অনেকে অভিযোগ করেন।

সিভিল সার্জন ডা. মো. একরাম উল্লাহ জানান, লিকুইড অক্সিজেন প্লান্টের মাধ্যমে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম চালু হওয়ায় করোনার চিকিৎসায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া আরো একধাপ এগিয়ে গেছে। এই সিস্টেমের ফলে উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সেবা নিশ্চিত হবে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এখন পর্যন্ত ১১ হাজার ১৭৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন সাত হাজার ৬১৭। মারা গেছেন ১৬৪ জন। চলতি মাসের শুরুর তুলনায় গত এক সপ্তাহ ধরে করোনায় আক্রান্তের হার তুলনামূলক কমতে শুরু করেছে।

x