দিনদিন বাড়ছে টিকার চাহিদা। কিন্তু সে তুলনায় বাড়ছে না মজুত। স্বল্পতার কারণে ইতোমধ্যে স্থগিত করা হয়েছে গণটিকা কার্যক্রম। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কারখানা শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের টিকার আওতায় আনা হলে এ চাহিদা আরও বাড়বে।
প্রতিদিন পাঁচ লাখের বেশি মানুষ নতুন করে টিকার জন্য নিবন্ধন করছেন। আর দিনে গড়ে দুই ডোজ মিলে দেওয়া হচ্ছে দেড় লাখের মতো। ইতোমধ্যে এক কোটির বেশি মানুষ নিবন্ধন করে ডাকের অপেক্ষায় আছেন। কবে নাগাদ তারা প্রথম ডোজ পাবেন, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে সরকারের হাতে এক কোটিরও কম টিকা মজুত রয়েছে। এর অধিকাংশই দ্বিতীয় ডোজের জন্য রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজের পর যা থাকছে, সেখান থেকে নিয়মিত টিকা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তাই চাহিদার তুলনায় টিকার মজুত বাড়ানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টিকার চাহিদা বাড়ছে এতে সন্দেহ নেই। এর বিপরীতে মজুত বাড়াতেও নানা মাধ্যমে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যে হারে টিকা পাওয়া যাচ্ছে তাতে সংকট হওয়ার আশঙ্কা নেই।
এছাড়া যারা প্রথম ডোজ পেয়েছেন, তাদের জন্য দ্বিতীয় ডোজ মজুত রয়েছে। তাই দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।
দেশে এ বছর ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়। বর্তমানে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, মডার্না ও সিনোফার্ম-এ চার কোম্পানির টিকা দেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, দেশে টিকার চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারের করণীয় হচ্ছে সব উৎস থেকে সংগ্রহের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া।
টাকার কোনো সংকট নেই, তাই বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা ক্রয় এবং উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে মজুত বাড়াতে হবে। বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে হবে।
যাতে আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোদমে চালাতে পারি। তিনি বলেন, নিবন্ধনের পর বিলম্বের অন্যতম কারণ হচ্ছে গণটিকা কার্যক্রম। এর মাধ্যমে বহুসংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
যার ধাক্কা কিছুটা হলেও নিয়মিত কার্যক্রমে পড়েছে। তবে মজুত বাড়লে আরও বেশি মানুষকে এর আওতায় আনা সম্ভব হবে। আমাদের সে সক্ষমতা রয়েছে। তবে বর্তমানে যা মজুত আছে, সেটা হিসাব করেই দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, মঙ্গলবার পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ৩ কোটি ৬১ লাখ ২৭ হাজার ৫০৯ জন। এর মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৮ হাজার ৪৫৮ জন এবং পাসপোর্টের মাধ্যমে ৪ লাখ ১৯ হাজার ৫১ জন।
এ পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ১ কোটি ৭২ লাখ ৪২ হাজার ৪৭৯ জন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৬৯ লাখ ৭৬ হাজার ৩১৭ জন। অর্থাৎ সবমিলিয়ে ২ কোটি ৪২ লাখ ১৮ হাজার ৭৯৬ মানুষ টিকা নিয়েছেন।
বর্তমানে নিবন্ধনকৃতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ১৯ লাখ ৮ হাজার ৭১৩ জন টিকা পাননি। এদের বেশির ভাগই প্রথম ডোজ পাননি। তাছাড়া স্বল্পতার কারণে অনেকে দ্বিতীয়ও ডোজও পাচ্ছেন না। নির্দিষ্ট সময়ে কেন্দ্রে গেলেও টিকা নেই বলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর থেকে গণটিকা কার্যক্রমের দ্বিতীয় ডোজ শুরু হবে। ৭ আগস্ট ছয়দিনের গণটিকা কার্যক্রম পরিচালনা করে সরকার। এতে টিকার ব্যাপক চাহিদা লক্ষ করা গেছে। কিন্তু সরবরাহ কম থাকায় অনেককে টিকা না পেয়েই ফিরে যেতে হয়। কোথাও কোথাও ছিল নানা অব্যবস্থাপনাও।
প্রায় ৬০ লাখ মানুষ গণটিকা কার্যক্রমে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন। এদের নাম সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হয়নি। শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়েই তারা টিকা নিয়েছেন। কিন্তু তারা দ্বিতীয় ডোজ কীভাবে পাবেন, সেটা এখনো জানতে পারেননি।
গণটিকাদান কার্যক্রমের দ্বিতীয় ডোজ দিতে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম। বুধবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ৭ সেপ্টেম্বর থেকে গণটিকাদান কার্যক্রমের দ্বিতীয় ডোজ শুরু হচ্ছে।
দ্বিতীয় ডোজ শুরুর আগে আরও টিকা আসবে। তাই কোনো সমস্যা হবে না।
এদিকে দেশে এ পর্যন্ত ৩ কোটির কিছু বেশি টিকা এসেছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ফাইজারের ৬০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে ৩০ আগস্ট আসছে ১০ লাখ।
বাকি টিকা দ্রুত সময়ের মধ্যে আসবে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তাছাড়া চীন থেকে নিয়মিত চালান আসবে। ভারতের সেরামের সঙ্গে চুক্তির টিকা পাওয়ার ব্যাপারেও চেষ্টা চলছে।
করোনা সংক্রমণ কমে আসায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় এনে তা খোলার পক্ষে সবাই মত দিচ্ছেন। যারা এখনো টিকা নেননি, তাদের দ্রুত নিবন্ধন করে টিকা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীর প্রায় সবাই টিকার আওতায় এসেছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী এখনো টিকা নেননি। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৬১ শিক্ষার্থী টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন।
তাদের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৭৯ হাজার ৯১৪ জন। আর উভয় ডোজ পেয়েছেন ছয় হাজার ৭২ জন। এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাদের বেশির ভাগ এখনো টিকার আওতায় আসেননি।
তাদের দ্রুত নিবন্ধন করে টিকা নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কারখানার শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে দ্রুত এ আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশে প্রায় অর্ধকোটি শ্রমিক এসব কারখানায় কাজ করেন।
তাদের পরিবারের সদস্য মিলে তা কোটির ওপরে। তাদের সবাই নিবন্ধন করলে হঠাৎ করেই বেড়ে যাবে চাহিদা। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ও কারখানার শ্রমিক এবং তাদের পরিবারকে টিকা দেওয়া হলে স্বাভাবিক টিকা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
Leave a Reply