ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:২৫ অপরাহ্ন
যে কারণে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত বিস্তার লাভ করে
দৈনিক ডাক অনলাইন ডেস্ক

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বিস্তারের বায়োলজিক্যাল ভিত্তি কি তা জানার জন্য বিজ্ঞানীরা সময়ের বিরুদ্ধে যেন লড়াই করছেন। তবে নতুন সব গবেষণায় এরই মধ্যে যা পাওয়া গেছে তা হলো, এই ভাইরাস টিকার কার্যকারিতাকে কমিয়ে দেয়। এটাই এই রূপান্তরিত ভ্যারিয়েন্টের বড় বৈশিষ্ট্য। আর কোনো ব্যক্তি এতে আক্রান্ত হলে তার মধ্যে সংক্রমণ দেখা দেয়ার আগে তা থাকে সবচেয়ে বেশি সংক্রামক অবস্থায়। তাই বিজ্ঞানীরা মনে করেন, দ্রুতগতিতে এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার কারণ এসবই। অনলাইন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। মহামারি বিষয়ক সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আলফা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে শতকরা কমপক্ষে ৪৯ ভাগ বেশি সংক্রামক। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রথম শনাক্ত হয়েছে ভারতে।

আর আলফা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে ২০২০ সালের শেষের দিকে বৃটেনে। উপরন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, টিকার কার্যকারিতা অনেকাংশে কমিয়ে দেয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। ফলে যারা পূর্ণাঙ্গ ডোজ টিকা নিয়েছেন তারাও এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন এবং তাদের মাধ্যমেও এই ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার ঘটে।
এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক টেডরোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস বলেছেন, এ যাবত যেসব ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রামক হলো ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। বিভিন্ন দেশে করোনার স্ট্রেইনের ক্ষেত্রে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে এই ভ্যারিয়েন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) এক অভ্যন্তরীণ উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, মার্স, সার্স, ইবোলা, সাধারণ ঠাণ্ডা, সিজনাল ফ্লু, জলবসন্ত, গুঁটিবসন্তের ভাইরাসের চেয়েও অধিক সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। কিন্তু কেন? সাম্প্রতিক অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে এত বেশি সংক্রামক করার কারণ হলো গুরুত্বপূর্ণ অ্যামাইনো এসিডের রূপান্তর। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের মেডিকেল ব্রাঞ্চের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ পি-ইয়ং শি’র নেতৃত্বে একদল গবেষক দেখতে পেয়েছেন যে, সার্স-কোভ-২ এর স্পাইক প্রোটিনের পরিবর্তন করে অ্যামাইনো এসিড। এই পরিবর্তনকে বলা হয় পি৬৮১আর। এই পরিবর্তন ঘটে স্পাইক প্রোটিনের ফুরিন ভাজে। কোষের ভিতর প্রবেশ করার জন্য সার্স-কোভ-২ এর স্পাইক প্রোটিনকে অবশ্যই গ্রহীতা প্রোটিন দুই ভাগে ভাগ করে। কোভিড-১৯ এর উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ফুরিন ক্লিভেজ বা ভাজ। এর অর্থ হলো গ্রহীতা এনজাইম, বিশেষ করে ফুরিন একে প্রথমে বিভক্ত করতে পারে। নবগঠিত ভাইরাল পার্টিক্যালের উদ্ভব ঘটে একটি আক্রান্ত কোষ থেকে, যা গ্রহীতা কোষকে অধিক কার্যকরভাবে সংক্রমিত করতে পারে।

আলফা ভ্যারিয়েন্টও একই অবস্থানে রূপান্তর ঘটাতে পারে। তবে ভিন্ন একটি অ্যামাইনো এসিডে এই পরিবর্তন নিয়ে বোঝাপড়া করে এই ভ্যারিয়েন্ট। গবেষণায় দেখা গেছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ফুরিন ভাজে যে পরিবর্তন আনে তার প্রভাব অনেক বেশি। ছাপার অক্ষরে এখনও প্রকাশিত হয়নি ওই গবেষণা। তবে এতে গবেকষকরা বলেছেন, আলফা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে অধিক কার্যকরভাবে স্পাইক প্রোটিনকে বিভক্ত করতে পারে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পার্টিক্যাল। এতে আরো বলা হয়েছে, পি৬৮১আর রূপান্তরের কারণে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট উচ্চ মাত্রায় সংক্রামক এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x