কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামপুর লবণ শিল্প এলাকার একমাত্র সড়কটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রায় ২ কিলোমিটার সড়কজুড়ে ভরে গেছে খানা-খন্দে। ফলে যানবাহন দূরে থাক পায়ে হাঁটাও দুরূহ হয়ে পড়েছে। প্রায় সময় গর্তে পড়ে উল্টে খাদে পড়ছে লবণবোঝাই ট্রাক। গত দুই মাসে অন্তত ৫০টি লবণবোঝাই ট্রাক উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এরপরও সংশ্লিষ্টদের কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। ফলে ভাঙা সড়কের কারণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যে কোনো সময় সারা দেশে লবণ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন লবণ ব্যবসায়ীরা। এতে সারা দেশে লবণ সংকটের আশঙ্কা রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ট্রাক চালক আবুল বশর বলেন, পরিবহণের কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়া হয়। ইসলামপুরের মত অকেজো সড়ক কোথাও দেখিনি। বৃষ্টির পানি জমে থাকলে বুঝা যায় না কোথায় গর্ত আর সমতল। সরু হওয়ায় অন্য পাশ দিয়েও যাওয়া যায় না। এতে প্রতিদিন অনেক ট্রাক উল্টে দুর্ঘটনায় শিকার হয়। একই কথা বলেছেন, ট্রাকচালক, নুরুল আলম, আবদু রহমানসহ আরও অনেকেই।
ইসলামপুর লবণ মিলমালিক সমিতির সভাপতি শামশুল ইসলাম আজাদ বলেন, কক্সবাজারই দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনের জেলা। সারাবছর জেলায় যা লবণ উৎপাদন হয় তা পর্যায়ক্রমে ট্রলার ও ট্রাকযোগে ইসলামপুরে নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। পরে লবণগুলো ইসলামপুরের ৭০টি লবণ মিল থেকে প্রক্রিয়াজাত করে ট্রাকযোগে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বাজারজাত করা হয়।
দৈনিক ৮০ থেকে ১০টি লবণবোঝাই ট্রাক সারা দেশে লবণ সরবরাহ করে থাকে।
তিনি বলেন, এরপরেও গত চার বছর ধরে লবণ শিল্প এলাকার এক মাত্র সড়কটি গাড়ি চলাচলের অনুপোযোগী পড়লেও তা সংস্কারের গড়িমসি করা হচ্ছে। অথচ ট্রাকপ্রতি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।
একের পর এক লবণবোঝাই ট্রাক উল্টে খাদে পড়ে যাওয়ার ঘটনায় যে কোনো সময় সারা দেশে লবণ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে উল্লেখ করে মিল মালিক সমিতির সভাপতি শামশুল ইসলাম আজাদ জানান একটি ট্রাক উল্টে গেলে কমপক্ষে এক লাখ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয় ব্যবসায়ীরা।
ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম বলেন, বটতলী স্টেশন থেকে ইসলামপুর বাজার সড়কটি শিল্পাঞ্চল হিসেবে ২৫ থেকে ৩০ মেট্রিকটন ওজনের যান চলাচল হয়। কিন্তু সড়কটি তৈরি হয় ১২-১৫ মেট্রিকটন ওজন বহনের উপযোগী হিসেবে। এতে সড়কটির জোড়াতালির সংস্কার কোনো কাজে আসছে না। চলাচল নির্বিঘ্ন করতে হলে এটি শিল্পাঞ্চল হিসেবেই সড়কটি গড়ন তৈরি করা জরুরি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বটতলী স্টেশন থেকে চৌফলদন্ডী ব্রিজ পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার সড়ক কার্পেটিং করতে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরে টেন্ডার হয়। মেসার্স চকরিয়া ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠান এর কার্যাদেশ পায়। উন্নয়ন প্রকল্পের বেশ কয়েকটি কাজ শেষ হলেও ইসলামপুর বাজার থেকে নাপিতখালী পর্যন্ত কার্পেটিং হয়নি এখনও। গত দুই বছর ধরে ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও কোন কাজ হয়নি বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
সড়কটি কাজের সার্বিক বিষয়ে জানতে মেসার্স চকরিয়া ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির মালিক ফরিদুল আলমের মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কল করা হয়। কিন্তু তিনি কল রিসিভ করেননি।
এলজিইডি কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান জানান, সড়কটি আসলেই অতিগুরুত্বপূর্ণ। চলমান কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে তাগাদা দেয়া হচ্ছে।
Leave a Reply