ঢাকা, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১১ অপরাহ্ন
লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি উধাও
দৈনিক ডাক অনলাইন ডেস্ক

রাজধানীর বাদামতলীর ফলের আড়তে রোববার ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত।
রাজধানীর বাদামতলীর ফলের আড়তে রোববার ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত। ছবি: যুগান্তর

করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান কঠোর লকডাউনের মধ্যেও রাজধানীর সড়কে যানবাহনের জট লেগে যাচ্ছে। আর দোকানপাট, বেসরকারি অফিস, শিল্প-কলকারখানাও পুরোদমে চলছে। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতাও তেমন চোখে পড়েনি।

রোববার গাড়ির চাপে ফার্মগেট, কাওরান বাজার, বাংলামোটর ও পান্থপথ এলাকায় যানজট দেখা গেছে। কাওরান বাজার মোড় থেকে যানজট কখনো কখনো ফার্মগেট, পান্থপথ, বাংলামোটর ও হাতিরঝিল পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে। এছাড়া তেজগাঁও শিল্প এলাকা ও বিজয় সরণি এলাকায়ও যানজট দেখা গেছে। অন্যদিকে শাহবাগ, মৎস্য ভবন ও পল্টন এলাকায় সড়কের মোড়ে যানবাহনের কিছুটা চাপও দেখা যায়। তবে ট্রাফিক সিগনালগুলোয় পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

কাওরান বাজারে তেজগাঁও জোনের ট্রাফিক পরিদর্শক আনোয়ারুল কবির জানান, রোববার সপ্তাহের প্রথম দিন হওয়ায় যানবাহনের চাপ একটু বেশি। তবে তুলনামূলকভাবে কাওরান বাজারকেন্দ্রিক যানজট একটু বেশি। এর মূল কারণ হলো, মেট্রোরেল নির্মাণকাজ। এ নির্মাণকাজের কারণে রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে গেছে। স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলতে পারছে না। এজন্য কাওরান বাজারের সঙ্গে যুক্ত ফার্মগেট, পান্থপথ, পল্টন ও হাতিরঝিলের রাস্তায় যানজট একটু বেশি।

সরেজমিনে দেখা যায়, চলমান কঠোর বিধিনিষেধে গণপরিবহণসহ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সব ধরনের পরিবহণ ও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আর রিকশা ও ভ্যান চলাচলে কোনো বাধা নেই। ফলে মিরপুরের সড়কগুলো রিকশার দখলে রয়েছে। গণপরিবহণ না চলায় কর্মমুখী মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা এখন রিকশা। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে ছুটতে হচ্ছে কর্মজীবীদের। ঢাকার মিরপুরের ১, ২, ১০ ও ১১ নম্বর ঘুরে সড়কে রিকশার মারাত্মক দাপট লক্ষ করা গেছে। বিধিনিষেধের মধ্যেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে অফিসে ছুটতে হচ্ছে। গণপরিবহণসহ সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও লেগুনা না চলায় বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় রিকশায় যেতে হচ্ছে। আবার যেসব মানুষ গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আসছে, তাদেরও গন্তব্যে যেতে রিকশার আশ্রয় নিতে হচ্ছে। গাবতলী এলাকায় রিকশা আর ভ্যান ছাড়া অন্য গাড়ি না থাকায় বেশি ভাড়াতেই গন্তব্যে যেতে হচ্ছে মানুষকে। আর আমিনবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে সহজে মিলছে প্রাইভেট কার, ট্রাক, মাইক্রোবাস ও পিকআপ।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মুসা আহমেদ বলেন, প্রতিদিন অফিসে যেতে হয়। কারণ, সরকারের বিধিনিষেধ থাকলেও আমার অফিস চলছে। এজন্য প্রতিদিন মিরপুর-১ থেকে রিকশা নিয়ে অফিসে যাই। ভাড়া বেশি লাগলেও অফিসে যেতে হচ্ছে। অফিসের নিজস্ব গাড়ি না থাকায় আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্রতিদিনই অনেক টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে।

কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে শনিবার পুরান ঢাকায় গণপরিবহণ ও সরকারি অফিস-আদালত ছাড়া প্রায় সবকিছু খোলা রয়েছে। এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় স্বাভাবিকভাবে চলছে। মার্কেট ও দোকানপাটগুলোয় বেচাকেনা চলছে আগের মতো। পুরান ঢাকার প্রধান সড়কগুলোয় ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়েছে। রিকশা-ভ্যানেও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে গাদাগাদি করে চলাচল করতে দেখা গেছে। এলাকায় গণপরিবহণ ও সরকারি অফিস-আদালত ছাড়া প্রায় সবই খোলা। নয়াবাজার, বংশাল, ধোলাইখাল, ইমামগঞ্জ, মৌলবীবাজার ও নবাবপুরের মার্কেটগুলোর শার্টার বন্ধ রেখে বেচাকেনা করতে দেখা যায়। প্রায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এক শার্টার কিংবা অর্ধনমিত শার্টার খোলা রেখে বেচাকেনা চলছে। আর পুরান ঢাকার পাইকারী মার্কেটগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেচাকেনা হয়েছে।

এছাড়া মহল্লার অলিগলির চায়ের দোকানগুলোয়ও জমজমাট আড্ডা পরিলক্ষিত হয়েছে। এসব স্থানে কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই ছিল না মানুষের মাঝে। বংশাল রোডের মোটরসাইকেল পার্টস বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, আর কতদিন আমরা বসে থাকব। পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। লোকসানের ভারে ইতোমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার জসীম উদ্দিন মোল্লা যুগান্তরকে বলেন, আমরা মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে তাকে শাস্তির মুখোমুখি করানো হচ্ছে।

যাত্রাবাড়ী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধে গণপরিবহণ ছাড়া রিকশাসহ সব যানবাহন ও মানুষ চলছে স্বাভাবিক সময়ের মতোই। অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। ফুটপাত ও পাড়া-মহল্লায় দোকান খোলা রাখতে দেখা যায়। মহাসড়কে কম গতির গাড়ি নিষিদ্ধ থাকলেও ট্রাফিক পুলিশের সামনেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী গোলচত্বর থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত ও ইজিবাইক অবাধে চলতে দেখা গেছে। তবে সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাসটার্মিনাল থেকে নগর ও দূরপাল্লার কোনো গণপরিবহণ চলাচল করতে দেখা যায়নি। একই চিত্র ছিল ঢাকার গাবতলী, মহাখালী ও ফুলবাড়িয়া বাসটার্মিনালেরও। চলমান কঠোর লকডাউনের মধ্যে এসব টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস চলাচল করছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x