ঢাকা, সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ০৯:৫৪ পূর্বাহ্ন
আজ বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞানী পিসি রায়ের জন্মবার্ষিকী
মোঃ মনিরুল ইসলাম, পাইকগাছা(খুলনা) প্রতিনিধি:

আজ ২ আগস্ট। বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞানী আচার্য স্যার প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ওরফে পিসি রায়ের ১৬০ তম জন্ম দিন। তিনি ১৮৬১ সালের আজকের দিনে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ তীরের রাড়লী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম ভুবনমোহিনী দেবী এবং বাবা হরিশ চন্দ্র রায়।

পিসি রায়ের পিতা ছিলেন, স্থানীয় প্রসিদ্ধ জমিদার। ছেলেবেলা থেকে পিসি রায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তার পড়াশোনা শুরু হয় তারই পিতার প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় ‘এমই’ নামে স্কুলে।

এরপর ১৮৭২ সালে তিনি কলকাতার হেয়ার স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু রক্ত আমাশয়ের কারণে তার পড়ালেখায় বিঘœ ঘটে। বাধ্য হয়ে তিনি ফিরে আসেন নিজ গ্রামে। গ্রামে থাকার সময় তার জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে। তিনি বাড়ির গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত বিভিন্ন বিষয়ের উপর লেখা প্রচুর বই পড়েন। এসময় কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন অলেকজেন্ডার পেডলার। খ্যাতিমান এ অধ্যাপকের সান্নিধ্যে রসায়নের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায় তার। কলেজের পাঠ্যবই ছাড়াও বিভিন্ন পাঠাগার থেকে রসায়নের বই সংগ্রহ করে পড়তেন তিনি। নিজের চেষ্টায় বাড়িতে পরীক্ষাগার স্থাপন করে রসায়ন সস্পর্কে নানারকম পরীক্ষাও চালাতেন। তিনি গিলক্রিস্ট বৃত্তি নিয়ে স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। সেখানে থেকে তিনি বিএসসি এবং ডিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি পিএইচডি ডিগ্রিও অর্জন করেন।

তিনি শ্রেষ্ঠ গবেষণাপত্রের জন্য ‘হোপ প্রাইজ’ লাভ করেন। ইউরোপের নানা দেশ ঘুরে ১৮৮৮ সালে প্রফুল্ল রায় দেশে ফিরে আসেন। সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন প্রেসিডেন্সি কলেজে।

১৮৯৫ সালে তিনি মারকিউরাস নাইট্রাইট আবিষ্কার করেন, যা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। এটি তার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। তার সমগ্র জীবনে মোট ১২টি যৌগিক লবণসহ আরও বেশ কিছু বিষয় আবিষ্কার করে বিস্ময় সৃষ্টি করেন।

১৯০৩ সালে চারটি গ্রামের নাম মিলে বিজ্ঞানী স্যার পিসি রায় দক্ষিণ বাংলায় প্রথম আর কে বি কে হরিশচন্দ্র ইন্সিটিউট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেন। একই স্থানে স্যার পিসি রায়ের পিতা উপমহাদেশে প্রথম নারী শিক্ষা উন্নয়নকল্পে ভুবনমোহিনীর নামে ১৮৫০ সালে রাড়লী গ্রামে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। আজও প্রতিষ্ঠানগুলো স্বমহিমায় এগিয়ে চলেছে।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে যখন বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন গোপনে অস্ত্র ক্রয়ের জন্য তিনি বিপ্লবীদের সাহায্য করেন।

এছাড়া, তিনি ১৯০৯ সালে নিজ জন্মভূমিতে কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৬ সালে কলকাতায় তিনিই প্রথমবারের মতো মহাত্মা গান্ধীর জনসভা আয়োজন করেছিলেন। ১৯৩৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেয়। তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি ও নাইট উপাধিতেও ভূষিত হন।

১৯৪৪ সালে ১৬ জুন জীবনাবসান ঘটে চিরকুমার বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল চন্দ্র রায়ের। মৃত্যুর আগে বিজ্ঞানী তার জীবনে অর্জিত সব সম্পত্তি মানবকল্যাণে দান করে গেছেন।

বরেণ্য বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ওরফে পিসি রায় ১৬০ তম জন্মদিন সোমবার (২ আগস্ট)। করোনা মহামারী পরিস্থিতির কারণে এবারো দিবসটি নিয়ে কোন বর্ণাঢ্য আয়োজন নেই। এরপরও উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সীমিত পরিসরে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।

x