ঢাকা, সোমবার ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১৮ অপরাহ্ন
বাংলাদেশের বন্ধু সাংবাদিক সাইমন ড্রিং আর নেই
ভাস্কর সরকার
বাংলাদেশের বন্ধু ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন ড্রিং আর নেই। শুক্রবার (১৬ জুলাই) তলপেটে সার্জারি চলাকালে লন্ডনে মারা যান তিনি। মঙ্গলবার (২০ জুলাই) ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ইস্টার্ন লিংকে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
সাইমন ড্রিং ইংল্যান্ডের নরফোকের ফাকেনহাম নামক এক ছোট্ট শহরে ১৯৪৫ সালের ১১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে তাকে বোর্ডিং স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এরপর তিনি কিংস্‌ লিন টেকনিক্যাল কলেজে অধ্যায়ন করেন। ১৬ বৎসর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করেন। ১৯৬২ সালে বহিঃবিশ্ব ভ্রমণের অংশ হিসেবে ভারত ভ্রমণ করেন।
১৭ বছর বয়সে তিনি প্রথম চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯৬৩ সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ওয়ার্ল্ড সংবাদপত্রে ‌‘প্রুফ রিডার’ (সম্পাদনা সহকারী) হিসেবে কাজ করেন। তারপর ১৯৬৪ সালে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমসের স্ট্রিংগার হিসেবে কাজ করেন লাওস থেকে। একই বছর ভিয়েতনাম ভ্রমণ করেন। সেখানে তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের যুদ্ধবিষয়ক সংবাদ প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। এর মাধ্যমেই তিনি রয়টার্সের সর্বকনিষ্ঠ বৈদেশিক সংবাদদাতা হিসেবে নিজেকে ইতিহাসের পর্দায় ঠাঁই করে নেন।
১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর পুরো দশকজুড়ে তিনি ডেইলি টেলিগ্রাফ সংবাদপত্র এবং বিবিসি টেলিভিশন নিউজের বৈদেশিক সংবাদদাতা হিসেবে সারা বিশ্বে কর্মরত ছিলেন। ওই সময়ে তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো থেকে প্রতিবেদন পাঠাতেন। ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ল্যাটিন আমেরিকা এবং ইউরোপের অস্থিতিশীল ঘটনাপ্রবাহ নিয়মিত তুলে ধরতেন সংবাদ মাধ্যমগুলোয়। পেশাগত জীবনে ২২টি যুদ্ধ ও অভ্যুত্থান কাভার করেছেন। বিবিসি টেলিভিশন ও রেডিওর সংবাদ এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে কাজ করেছেন প্রায় ২০ বছর। এছাড়া চলচ্চিত্র, আন্তর্জাতিক ঘটনা এবং সঙ্গীত বিষয়ে তার রয়েছে ব্যাপক ও বিচিত্র অভিজ্ঞতা। ইরানের শাহবিরোধী গণঅভ্যুত্থান নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে সাইমন ড্রিং নন্দিত হয়েছিলেন এবং অর্জন করেছিলেন অনেক পুরস্কার।
সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি দু’বার আহতও হয়েছিলেন। প্রথমবার ভিয়েতনামে এবং দ্বিতীয়বার সাইপ্রাসে তুর্কিদের আগ্রাসনে। বিবিসি রেডিও এবং টেলিভিশনে কাজ করার পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবাদপত্র ও সাময়িকীতে লিখেছেন তিনি।
সাইমন ড্রিং বাংলাদেশের গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী প্রথম বিদেশি সাংবাদিক যিনি নিজের জীবন বিপন্ন করে সরেজমিন প্রতিবেদন তৈরি করে সারা বিশ্বকে জানিয়ে দেন পাকিস্তানি বাহিনীর লোমহর্ষক নির্যাতন ও গণহত্যার কথা।
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভরা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে সাইমন ড্রিং হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে লুকিয়ে ছিলেন। তৎকালীন পাকিস্তানে সামরিক আইনের তোয়াক্কা না করে ২৭ মার্চ তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করে ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রতিবেদন আকারে পাঠান, যা ট্যাংকস ক্র্যাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান ( শিরোনামে ৩০ মার্চ প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে জনমত সৃষ্টিতে তার এ প্রতিবেদনটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে সাড়া জাগিয়েছিল।
সাইমন ড্রিং বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি পর্যায়ের টেরেস্ট্রিয়াল টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টেলিভিশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯৭ সালে বিবিসি ছেড়ে তিনি একুশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে গুরুদায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশনের আধুনিকতার অন্যতম রূপকার।
২০০২ সালে একুশে টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ সম্প্রচার আইন লঙ্ঘনজনিত কারণে তাদের সম্প্রচার কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়। সাইমন ও তার সহযোগী তিনজন নির্বাহী পরিচালক প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত হন। অতঃপর, ২০০২ সালের অক্টোবর মাসে সরকার সাইমন ড্রিংয়ের ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে তাকে অবিলম্বে বাংলাদেশ ত্যাগের আদেশ দেন। এর ফলে তিনি ২০০২ সালে ১ অক্টোবর বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ফিয়োনা ম্যাকফারসন, ইভা ও ইনডিয়া এবং তানিয়া নামে তিন মেয়ে রেখে গেছেন৷

4 responses to “বাংলাদেশের বন্ধু সাংবাদিক সাইমন ড্রিং আর নেই”

  1. … [Trackback]

    […] Info on that Topic: doinikdak.com/news/38612 […]

  2. … [Trackback]

    […] Find More to that Topic: doinikdak.com/news/38612 […]

  3. … [Trackback]

    […] There you will find 3365 more Information on that Topic: doinikdak.com/news/38612 […]

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x