ঢাকা, শনিবার ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন
‘কঠোর লকডাউন’ আসলে কতোটা কঠোর?
আহমেদ শরিফ

দৈনিক ডাকঃ সরকারি পরিভাষায় ‘কঠোর লকডাউন’ চলছে। এবার নতুন শাস্তির কথা বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।

অপ্রয়োজনে কেউ বাইরে বের হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে ৬ মাস কারাদণ্ডের কথা বলা হচ্ছে। লকডাউনের প্রথম ক’দিনে কয়েক হাজার মানুষকে আটক ও গ্রেফতার করা হয়েছে।

তবে সরকারি প্রজ্ঞাপনে যেসব বিধিনিষেধের কথা বলা হয়েছে, তাতে লকডাউন ‘কঠোর’ বা সর্বাত্মক হচ্ছে বলে মনে হয় না। রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোর রাস্তায় প্রথম দুই-তিন দিনের তুলনায় মানুষ ও যানবাহন বেশি দেখা যাচ্ছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ‘কঠোর লকডাউন’ বলে যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, তাকে কঠোর না বলে নমনীয় বা হাফ লকডাউন বলাই ভালো। কারণ এই কঠোর লকডাউনে গণমাধ্যমসংশ্লিষ্ট সব অফিস তো খোলা থাকছেই; ব্যাংক, গার্মেন্টস, শিল্পকারখানা, জরুরি পরিষেবা দেওয়ার সব অফিসসহ বিমান, নৌ, স্থলবন্দর ও সংশ্লিষ্ট অফিস চালু থাকছে। খাবারের দোকান, হোটেল, রেস্টুরেন্ট সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে খাবার অনলাইনে বিক্রি/কিনে নিয়ে যাওয়ার শর্তে। পণ্যবাহী সব ট্রাক, লরি, পরিবহণ চালু আছে।

দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। তবুও সাধারণ মানুষের মধ্যে তেমন কোনো উদ্বেগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। সবাই বাইরে বের হতে চায়। এরই মাঝে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাঁচাবাজার খোলা আছে। অবশ্য অন্যভাবে চিন্তা করলে নিত্যপ্রয়োজনের এই বাজার খোলা না রাখলে প্রতিদিন আপনি-আমি খাব কী? এক্ষেত্রে এক বা দুই সপ্তাহের বাজার একসঙ্গে করে ঘরে রাখা দেশের কত শতাংশ মানুষের পক্ষে সম্ভব? তাই বাজারে আমাদের যেতেই হবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনেও বাজারে অতিরিক্ত মানুষ গেলে সংক্রমণ কি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে না? স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদসহ বিভিন্ন উপাসনালয়ে সবাই যাচ্ছেন এই লকডাউনে। গত বছর কিন্তু কঠোরভাবে নির্দেশনা দেওয়া ছিল এক্ষেত্রে। এবার করোনার ভয়াবহতা যখন প্রচণ্ড হয়ে উঠেছে, তখন এক্ষেত্রে শিথিলতা যৌক্তিক মনে হচ্ছে না। এরই মাঝে আরেকটি প্রশ্ন জাগে-হতদরিদ্র মানুষরা লকডাউনে সহায়তা পাচ্ছে কতটা? বিভিন্ন গার্মেন্ট, কলকারখানা, ব্যাংক, অফিস খোলা থাকায় সংক্রমণ কি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে কমানো সম্ভব?

এসব বিবেচনায় অন্য দেশে সম্ভব কিনা জানি না, বাংলাদেশে শতভাগ (কঠোর) লকডাউন পালন সম্ভব নয় বলেই মনে হয়। তবে গণপরিবহণ বা গণজমায়েত হয় এমন অনুষ্ঠান বন্ধ এবং বেশিরভাগ মানুষকে দুই সপ্তাহ ঘরবন্দি করে রাখলে হয়তো সংক্রমণ কমানোর সুফল পাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে আমরা ঘর থেকে যথাসম্ভব বের না হওয়ার কঠোর অঙ্গীকার করব। এতে আমার, আপনার, জাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে অনেকাংশে।

ঈদের আগে করোনা নিয়ন্ত্রণ করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। শুধু কঠোর আইন নয়, সর্বস্তরের মানুষের আন্তরিকতা ছাড়া লকডাউন সফল করা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

x