ঢাকা, শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:০২ পূর্বাহ্ন
করোনা রোগীর সেবায় হোমকেয়ার ও টেলিমেডিসিন সেবার গুরুত্ব
Reporter Name

তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিকায়নের ফলে বর্তমানে আমরা নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, খাবার থেকে শুরু করে বেশিরভাগ জিনিস আমরা ঘরে বসে কিনতে পারি, এমনকি অনলাইন শিক্ষাক্রমের আওতায় ক্লাস ও অন্যান্য একাডেমিক কার্যক্রম ঘরে বসেই সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু যখনই ডাক্তার দেখানোর বিষয় আসে তখন হাসপাতালে গিয়ে দেখানোর বাইরে অন্য কিছু ভাবা দুরূহ ছিল। বর্তমানে কোভিড মহামারিতে টেলিমেডিসিন সেবা চিকিৎসা ক্ষেত্রকে নিয়ে গিয়েছে এক উন্নতম পর্যায়ে যেখানে ঘরে বসেই বিশ্বের যেকোন প্রান্ত থেকে সেবা নিতে পারে। ফলে এই সেবার চাহিদা বেড়েছে বহুগুণে। গত এক বছরেও এই সেবা খুব একটা প্রচলিত না থাকার ফলে এই সেবার সাথে অনেকেরই খাপ খাওয়াতে কিছুটা সময় লেগেছে কিন্তু বর্তমানে এটিই চিকিৎসার অন্যতম কার্যকরী মাধ্যম।

কোভিড বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ও নিয়মিত ফলোআপ
করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ঘরে বসে যেকোন সময়ই ভিডিও কলের মাধ্যমে খুব দ্রুততার সাথে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারছে এবং পরবর্তীতে আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাস্থ্যের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য ডাক্তারের কাছ থেকে নিয়মিত ফলোআপ পাচ্ছে। ডাক্তারের সাথে ২৪ ঘণ্টা পরামর্শের সুবিধা থাকার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থার একটু অবনতি হলেই দ্রুততার সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সিধান্ত নিতে সুবিধা হচ্ছে। এছাড়াও করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার দেখানোর জন্য দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হচ্ছে না এবং বিশেষ করে হাসপাতালে বেড সংকটপূর্ণ অবস্থায় ঘরে বসে চিকিৎসা পদ্ধতিই করোনা মোকাবেলার কার্যকরি পদ্ধতি। ডাক্তারদের মতে- ১টেলিমেডিসিন ভবিষ্যত স্বাস্থ্যসেবার একটি মূল পন্থা হবে, যেখানে এর মাধ্যমে আমরা সকলকে স্বল্প সময়ে মানসম্মত সেবা প্রদান করতে পারব।’

টেলিনিউট্রিশন পরামর্শের গুরুত্ব
করোনার সাথে যুদ্ধ করার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মেডিসিনই যথেষ্ট নয় এর পাশাপাশি সুষম খাবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ফলে বর্তমানে টেলিনিউট্রিশন এর গুরুত্ব বেড়েছে বহুগুণে। এখানেও ভিডিওকলের মাধ্যমে রোগীর অবস্থা জেনে তার উপযোগী ডায়েট চার্ট প্রদান করা এবং সেই অনুযায়ী খাবার গ্রহণে তাকে উৎসাহিত করা হয়ে থাকে। এছাড়াও এই ডায়েট চার্ট মেনে চলার ক্ষেত্রে যেকোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কিনা সেই বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ করার সুযোগ থাকছে। টেলিনিউট্রিশনিস্টদের মতে ‘টেলিনিউট্রিশন স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং বিভিন্ন রোগের অবস্থার উন্নতির জন্য প্রচলিত পরামর্শ ব্যবস্থাকে অধিক কার্যকর বা প্রতিস্থাপন করতে পারে।’

টেলিমানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কাউন্সেলিং এর গুরুত্ব
‘মানসিক স্বাস্থ্য শারীরিক স্বাস্থ্যর বাইরে নয়’- শরীর ও মন একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই মানসিকভাবে সুস্থ থাকাটা রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক। করোনার শুরু থেকেই আমরা নানা ধরনের মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। বিশেষ করে যখন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকছে যেমন: বিষণ্ণতা, হতাশা, মৃত্যু-ভীতি, একাকীত্ব বোধ, রাগ, মানসিক চাপ, স্বজন হারানোর শোক ইত্যাদি। এর ফলে করোনার শুরু থেকেই কাউন্সেলিং মনোবিজ্ঞানীরা টেলিকাউন্সেলিং এর মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা সবার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেবার ক্ষেত্রে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। হোম কোয়ারেন্টাইন থাকাকালীন সময় বিষণ্ণতা, হতাশা ও ভয়ভীতি কাটিয়ে কোভিডের সাথে কিভাবে লড়াই করবে সেই বিষয়ে কাউন্সেলিং করা হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি রোগীকে ভিডিও কলের মাধ্যমে মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন শেখানো হয় যেটা রোগীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও মানসিক ভাবে উৎফুল্ল থাকতে সাহায্য করে। কাউন্সেলিং মনোবিজ্ঞানীদের মতে- করোনাকালীন মহামারিতে মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে টেলিকাউন্সেলিং অন্যতম ফলপ্রসূ মাধ্যম হিসাবে বিবেচিত।

বর্তমানে করোনার দ্বিতীয় প্রকোপ ঠেকাতে সারাবিশ্ব হিমশিম খাচ্ছে। এমতাবস্থায় হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেওয়া ভীষণ দুরহ হয়ে পড়েছে। তাই এই সঙ্কট মুহূর্তে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ক্ষেত্রে ঘরে বসে সেবা গ্রহণ-ই সর্বাপেক্ষা কার্যকরী ও যুগোপযোগী পদ্ধতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x