ঢাকা, মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫, ০৮:১৫ অপরাহ্ন
মহামারিতে মে দিবসের তাৎপর্য আরও বেশি
Reporter Name

করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর থেকে অন্যরকম আবহে পালিত হচ্ছে মে দিবস। গত বছরের মতো এবারও বিশ্বের কোথাও তেমনভাবে ছিল না বর্ণাঢ্য মিছিল, লাল পতাকা আর রঙিন ফেস্টুনের জমকালো শোভাযাত্রা। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এখনও ঘরবন্দি। করোনাভাইরাস নামক এক ভয়াবহ রোগের প্রার্দুভাবে পৃথিবী যেন থমকে আছে।

১৮৮৬ সালের এদিন দীর্ঘ বঞ্চনা আর শোষণ থেকে মুক্তি পেতে বুকের রক্ত ঝরিয়ে ছিলেন শ্রমিকরা। সেদিন শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের সব শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। শ্রমিক সমাবেশকে ঘিরে শিকাগো শহরের হে মার্কেট রূপ নেয় লাখো শ্রমিকের বিক্ষোভ সমুদ্রে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে পুলিশ শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে অন্তত ১০ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। পরে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা অর্জনকে স্বীকৃতি দিয়ে ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে ১ মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৯০ সাল থেকে প্রতি বছর দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ‘মে দিবস’ হিসাবে পালন করতে শুরু করে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠনের পর মে দিবসের তাৎপর্য আরও বেড়ে যায়। সোভিয়েতসহ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহে শ্রমিকদের রাষ্ট্র কায়েম হওয়ার মধ্য দিয়ে শ্রমিকশ্রেণি পায় মর্যাদা। তারপরও পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোর আধিপত্য থাকায় দেশে দেশে শ্রমিক শোষণ বেড়েই চলে। সর্বশেষ কম মজুরির শ্রমে এখন সারা বিশ্বে অধিক মুনাফার জোয়ারে প্লাবিত বড় দেশগুলো। এখনও দিনমজুর, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের শ্রমে ঘামে গড়ে ওঠে পুঁজির শানশওকত। এখনও শ্রমিক শ্রেণী তদের ন্যায্য পাওনা ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত।

করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে গোটা বিশ্বে লকডাউনের কারণে শ্রমিকশ্রেণির দুর্গতি আরও বেড়েছে। হাজার হাজার শ্রমিকের বেকার হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে করে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে শ্রমিকেরা। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের ‘বিদেশফেরতদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি অন্বেষণ এবং বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এক জরিপেও এমন চিত্র উঠে এসেছে। জরিপে তারা তুলে ধরেছেন বিদেশফেরত শ্রমিকদের কথা। সেখানে বলা হয়েছে: ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ফেরত আসার পর বছর পেরিয়ে গেলেও প্রবাসী কর্মীদের ৪৭ শতাংশই এখনও আয়ের জন্য কোনো কাজে যুক্ত হতে পারেননি। এর ফলে দৈনন্দিন খরচ চালাতে তাদের অনেককেই পরিবারের আয় বা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে চলতে হচ্ছে। বিদেশফেরতদের ৯৮ শতাংশই এখনও তাদের ভবিষ্যত নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন।’

শুধু বিদেশফেরত নয়, লকডাউনের কারণে প্রায় সব ধরনের শ্রমিকদের একই পরিণতি বলে আমাদের শঙ্কা। তবে আশার কথা হলো, করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের এই দুঃসময়ে জীবন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য মানবিক সহায়তা নিয়ে আবারও পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের ৩৬ লাখের অধিক পরিবারকে ২,৫০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেবেন। এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক শ্রেণিসহ সবাই কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন বলে আশা করি।

এর পাশাপাশি আমাদের সবাইকে মহান মে দিবসের আত্মত্যাগের ইতিহাস স্মরণ রাখতে হবে। মহামারির এই সময়ে শ্রমিক, কৃষক, দিনমজুরের জীবনমান যেন সেই তিমিরেই পড়ে না রয়। আমরা এই করোনাকালে আরও বেশি করে বলতে চাই, শ্রমিকদের মর্যাদা ও তদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক।

x