রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চলমান অচলাবস্থা নিরসনে দ্রুত নিয়মিত উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতি। উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম গতিশীল করতে তারা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বরাবর চিঠি প্রেরণ করেন।a
রাবি শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক সাজ্জাদ বকুল প্রেরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
চিঠিতে শিক্ষক সমিতি উল্লেখ করে, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহ এ প্রতিষ্ঠানটির মর্যাদা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ করছে এবং ক্যাম্পাসে কর্মরত ও বসবাসরতদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও বহুল আলোচিত, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষিত এডহক নিয়োগপ্রক্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম গত দেড় মাসেরও অধিক সময় ধরে ব্যাহত করছে।
এসব পদে নিয়োগপ্রাপ্ত অথচ যোগদানকৃত নয় এমন ব্যক্তিদের কিছু সংখ্যক গত কয়েকদিন ধরে প্রশাসন ভবন অবরোধসহ ক্যাম্পাসে ধারাবাহিক কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। পদায়নের দাবিতে তারা দুই দিন প্রশাসন ভবন অবরুদ্ধ করেছে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাউকে কাউকে আন্দোলনকারীদের সামনে পড়ে নাজেহাল হতে হয়েছে। এই অবস্থায় ক্যাম্পাসে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
চিঠিতে তারা উল্লেখ করেন, উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহাকে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর প্রায় দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো নিয়মিত উপাচার্য পায়নি সুবৃহৎ এই বিশ্ববিদ্যালয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে বিপত্তি তৈরি হচ্ছে।
যদিও করোনা অতিমারির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরাসরি শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে, কিন্তু নিয়মিত উপাচার্য না থাকায় (১) জরুরি প্রয়োজনে ছাত্রছাত্রীদের মূল সার্টিফিকেট উত্তোলন করতে না পারা; (২) এমফিল-পিএইচডির গবেষণা অভিসন্দর্ভ পরীক্ষণের জন্য প্রেরণে জটিলতা; (৩) গবেষণা তহবিল বরাদ্দে জটিলতা; (৪) বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুনভাবে উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করতে না পারা; (৫) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিদেশি স্কলারশিপসংক্রান্ত কাজে নানা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। ইতিপূর্বেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়াদ শেষে নতুন উপাচার্য নিয়োগ দিতে দীর্ঘসূত্রতার ঘটনা ঘটেছে।
শিক্ষক সমিতি চিঠিতে দাবি করেন, উপাচার্য নিয়োগে দীর্ঘসূত্রিতা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হচ্ছে, যা মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের যত্নবান হওয়ার জন্য আমরা ইতিপূর্বেও আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু আবারো একই ঘটনা ঘটছে। একজন নিয়মিত অভিভাবকের অভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আজ প্রায় অরক্ষিত। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উদ্বেগজনক পরিস্থিতি লাঘবে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হোক এবং অতি সত্বর একজন উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে ক্যাম্পাসের সকল ধরনের অচলাবস্থার নিরসন করা হোক।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবাহান তার বিদায় বেলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৩৭ জনের বিতর্কিত নিয়োগ দিয়ে যান। যেটাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষসহ বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে চলেছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়ার পাশাপাশি অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।