ঢাকা, রবিবার ০৯ মার্চ ২০২৫, ০৮:৪০ অপরাহ্ন
ময়মনসিংহ জেলার শতাধিক মানুষ জীবিত থেকেও মৃত!
তাপস কর,ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

ময়মনসিংহ জেলায় শতাধিক মানুষ জীবিত থেকেও মৃত্যু রহেছে ভোটার তালিকায়। ভোটার তালিকায় শতাধিক জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখানো হয়েছে। এসব ব্যক্তি তাদের নিজ নিজ উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ‘জীবিত’ হওয়ার আবেদন করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার স্বল্পচরপাড়া গ্রামের জসিম উদিনের পুত্র মোফাজ্জল হোসেন ২০১৩ সালে ভোটার হন। এরপর ২০১৯ সালে মৃত ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে সর্বশেষ জাতীয় পরিচয়পত্র হালনাগাদের সময় মোফাজ্জল হোসেনকে মৃত দেখানো হয়। মোফাজ্জলের মতো একই উপজেলার ইউনিয়নের মরিচারচর টানপাড়া মলামারী গ্রামের শিপন মিয়াও ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ হয়ে আছেন। এর আগে শিপন মিয়া ২০০৮ সালে ভোটার হয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করেন।বেঁচে থেকেও কী করে ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ হলেন শিপন ও মোফাজ্জলের মতো তা ভেবে পাচ্ছেন না ভোটার তালিকায় মৃত দেখানো হয়েছে প্রায় জেলার শতাধিক ব্যক্তিকে । মোফাজ্জল হোসেন জানান, পাঁচ বছর আগে তার বড় ভাই তোফাজ্জল হোসেন মারা যান।

সর্বশেষ ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় তার বয় ভাইয়ের সাথে তাকে স্থানীয় তথ্য সংগ্রহকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জাতীয় পরিচয়পত্রের হালনাগাদের তালিকায় মৃত দেখিয়েছেন। তিনি দুই বছর আগে ব্যাংকে ঋণ নিতে গেলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার জাতীয় পরিচয়পত্র খুঁজে দেখেন তিনি মৃত। এরপর ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে সংশোধনের আবেদন করেন।বারবার নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করে দুই বছরেও সমাধান হয়নি সমস্যা। এতে তাদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি, করোনার টিকা গ্রহণসহ সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।  তারা অভিযোগ করে বলেন, মৃত দেখানোয় নির্বাচনে ভোটও দিতে পারেননি। এছাড়া সন্তনদের জন্ম নিবন্ধন, বিদ্যালয়ে ভর্তি, ভিজিএফ, ভিজিডিসহ কোনো প্রকার সরকারি সুবিধা তারা পাননি।শুধু মোফাজ্জল ও শিপন নন, ২০১৯ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় জেলার ত্রিশাল পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী মোছা আছিয়া আক্তার ২০০৮ সালে ভোটার হন। এর পর জাতীয় নির্বাচন সহ পৌর সভার নির্বাচনে ভোট প্রয়োগ করেন। একাধারে  ৯ বছর জাতীয় পরিচয় পত্রে তিনি জীবিত ছিলেন।

কিন্তু ২০২১ সালে পৌরসভা নির্বাচনে আছিয়া ভোট দেয়ার জন্য  কেন্দ্রে গিয়ে জানতে পারেন জাতীয় পরিচয় পত্রে তিনি মৃত। একই সমস্যায় পড়েছেন ঈশ্বরগঞ্জের মরিচারচর গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে জুবায়ের হোসেন (৩৫)। তিনি জানান, এক মাস আগে মোবাইলে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য বাজারের দোকানে যান। জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য বারবার চেষ্টা করেও খুলতে পারেননি। পরে বিকাশ এজেন্ট জানান তার আইডি কার্ডে সমস্যা আছে। পরে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে আইডি কার্ডের সমস্যার কথা জানান। সেখানের কর্মকর্তা সার্ভারে তল্লাশি করে জানান তালিকায় তাকে মৃত দেখানো হয়েছে। এই কথা শোনার পর জুবায়ের হতবাক হয়ে যান। নির্বাচন কর্মকর্তার পরামর্শে সংশোধনের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু আজও তার আইডি কার্ড সংশোধন হয়নি। ময়মনসিংহ জেলা মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট এএইচএম খালেকুজ্জামান বলেন, জীবিত ব্যক্তিকে জাতীয় পরিচয়পত্রে মৃত দেখানো মানবাধিকার লঙ্ঘন। এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িতরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। ভোগান্তিতে পড়া ব্যক্তিদের সমস্যা সমাধানে নির্বাচন কমিশন দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি আশা করেন।জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সারওয়ার জাহান বলেন, ময়মনসিংহে এ পর্যন্ত শতাধিক জীবিত ব্যক্তিকে জাতীয় পরিচয়পত্রে মৃত দেখানো হয়েছে মর্মে সংশোধনের আবেদন করেছেন। তাদের আবেদন ঢাকার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে মৃত ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় নির্বাচন কমিশনের জনবল সংকট থাকায় মাঠপর্যায়ে এলাকাভিত্তিক তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহযোগিতা নেয়া হয়। তথ্য সংগ্রহকালে শিক্ষকরা ভুলবশত মৃত ব্যক্তির পাশাপাশি জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। এসব কারণে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে একটি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট করা হচ্ছে; যার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান এবং সংশোধন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকেই করা যাবে।

x