চিকিৎসক, টেকনিশিয়ানসহ অন্যান্য জনবলের সংকটে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাসেবার বেহাল দশা। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই কোন টেকনিশিয়ান। বিকল হয়ে পড়ে আছে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। ফলে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এখানকার মানুষ।
দীর্ঘদিন ধরে এক্স-রে, প্যাথলজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম, মাইক্রোস্কোপসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার কয়েক কোটি টাকার আধুনিক যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ে আছে। কোনোটি আছে বাক্সবন্দী বছরের পর বছর। বিভিন্ন সময়ে এসব যন্ত্রপাতি সংস্কার করা হলেও আবারও ব্যবহার না করায় অচল হয়ে পড়ছে এসব। এতে করে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের চারদিকে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। ফলে অনেকেই এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে চাচ্ছেন না। বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তাঁরা চলে যাচ্ছেন যে যার মতো করে। তবে জনবলের অভাবে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ অবস্থা বলে স্বীকার করেছেন এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. খালিদ মাহমুদ আরিফ। তিনি জানান, জনবল সংকটের মধ্যেও করোনা উপসর্গসহ নানা রোগের চিকিৎসা দিয়ে ৮০ থেকে ৯০ ভাগই সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জনবল দিয়ে চলছে পাথরঘাটার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ২৮ জন চিকিৎসকের স্থানে ১২ জন দায়িত্ব পালন করলেও এর মধ্যে ৫ জন রয়েছে ডেপুটেশনে। ২৪ জন নার্সের স্থানে রয়েছে ১৫ জন।
এছাড়াও সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, টেকনোলোজিস্ট, প্যাথোলজি, ডেন্টিস্ট, রেডিওথেরাপি, কার্ডিওগ্রাফার, স্টোর কিপার, ফার্মাসিস্ট, পরিচ্ছন্ন কর্মী, আয়া, নৈশপ্রহরী, বাবুর্চিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এ কারণে দীর্ঘ এক যুগ ধরে বাক্স বন্দী এক্স-রে মেশিনটি। করিডরে অযত্ন অবহেলায় ধুলাবালিতে ঢেকে যাচ্ছে ডেন্টাল ডেক্সটি। এছাড়াও কয়েক লাখ টাকা মূল্যের অপারেশন থিয়েটারে ঝুলে থাকা লেজার লাইটটিসহ কোটি টাকা মূল্যের সরঞ্জামাদি অপেক্ষায় অন্তত একবার হলেও তৎপরতা ফিরে পাওয়ার আশায়।
জানা যায়, ২০০৩ সালে একটি মামলার কারণে নিয়োগ বিধি সংস্কারের কাজ চলায় নিয়োগ বন্ধ সেই থেকেই। এ কারণে স্বাস্থ্যখাতের গুরুত্বপূর্ণ পদ গুলো শূন্য থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুমূর্ষু রোগীদের ইসিজি করানোর যন্ত্রটিও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই। এ কারণে মুমূর্ষু রোগীদের বাইরে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে আনতে হয়। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন সরকারি হাসপাতালের শুরু থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সেবা না থাকায় পাথরঘাটায় গড়ে উঠেছে ডজনখানেক বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের জনবল নিয়োগ দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। টেকনিশিয়ান না থাকায় চিকিৎসাযন্ত্রগুলো অচল হয়ে পড়েছে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। জনবল নিয়োগ হলেই সমস্যার সমাধান হবে।
Leave a Reply