ঢাকা, শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪, ০৪:১২ পূর্বাহ্ন
আফগানিস্তানে ৩ বিলিয়ন ডলারের ভারতীয় বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা
দৈনিক ডাক অনলাইন ডেস্ক

তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার! আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতাবস্থা ফেরাতে দেশটিতে এই বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে ভারত। যে অর্থ দিয়ে তৈরি হয়েছে বাঁধ, রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে আফগান পার্লামেন্ট ভবন পর্যন্ত। এই বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে কৌশলগত কারণে দেশটিতে নিজের প্রভাব বাড়িয়েছিল দিল্লি। তবে রবিবার তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘটনায় নতুন করে ভাবতে হচ্ছে মোদি সরকারকে। শঙ্কা দেখা দিয়েছে দেশটিতে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

রবিবার দৃশ্যত বিনা বাধায় কাবুলের দখল নেয় তালেবান। দেশ ছেড়ে আফগানিস্তানে পালিয়ে যান যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। ফলে ২০ বছর ধরে দিল্লি ও কাবুলের মধ্যে যে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠছিল তা ধাক্কা খেতে চলেছে। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা তৎকালীন তালেবান সরকারকেও স্বীকৃতি দেয়নি ভারত।

৯/১১ হামলার পর কাবুলে প্রভাব বাড়াতে তৎপর হয় দিল্লি। ২০১১ সালে দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়। তারপর থেকে পরিকাঠামো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাঁধ নির্মাণে অর্থ-সহায়তা দিতে শুরু করে ভারত। ২০২০ সালে নভেম্বরে জেনেভা শীর্ষ সম্মেলনে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানান, আফগানিস্তানের এমনও কোনও অংশ নেই যেখানে ভারত নেই। ৩৪টি প্রদেশে চলছে ৪০০-টিরও বেশি প্রকল্প।

হেরাত প্রদেশে ৪২ মেগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। তালিবানের হামলায় ও দুর্ঘটনাজনিত কারণে একাধিক ভারতীয় কর্মীর মৃত্যু হয়েছে এই বাঁধ নির্মাণে। ২০১৬ সালে ৪২ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্বোধন হয়। এই বাঁধ এখন তালেবানের নিয়ন্ত্রণে। আদতে পুরো দেশই এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে।

২১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করেছে ভারতের বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন। ইরান সীমান্তের কাছাকাছি এই এলাকা। কান্দাহার, গজনি, কাবুল, মাজার-ই-শরিফ ও হেরাত শহরকে ছুঁয়ে গেছে এই রিং রোড। পাকিস্তানকে এড়িয়ে এই রাস্তা ধরে ইরানের চাবাহার বন্দর ব্যবহার করতে পারতো দিল্লি। অতিমারির সময়ে চাবাহার দিয়ে আফগানিস্তানে ৭৫ হাজার টন গম পাঠানোর কথা জানিয়েছিলেন জয়শঙ্কর। এই রাস্তা নির্মাণে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলায় মৃত্যু হয়েছে ছয় ভারতীয় নাগরিকের।

কাবুলে ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে পার্লামেন্ট ভবন নির্মাণ করেছে দিল্লি। ২০১৫ সালে সেটির উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আফগানিস্তানের গণতন্ত্রের প্রতি এটা দিল্লির শ্রদ্ধার্ঘ বলে জানান তিনি। সেই পার্লামেন্ট ভবনের একটি ব্লকের নামকরণ হয় ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অটলবিহারী বাজপেয়ীর নামে।

কাবুলে স্বাস্থ্য পরিষেবা, বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে শুরু করে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাতেও বিনিয়োগ করেছে দিল্লি। স্কুলের বেঞ্চ, ডেস্ক ও গ্রামাঞ্চলে সৌর প্যানেল তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য ভারতে প্রশিক্ষণ ও স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

ভারতের সাবেক স্পেশাল ফোর্স অফিসার লেফট্যানান্ট জেনারেল পিসি কাটোচের মতে, আফগানিস্তানে স্থিতাবস্থা ফেরাতে সক্ষম হবে যুক্তরাষ্ট্র। এই ভেবেই দিল্লি সেখানে বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু আমেরিকা দেশটিকে তালেবানের হাতে ছেড়ে দিলো। সূত্র: জি নিউজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x