ঢাকা, শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪, ০৪:১৮ অপরাহ্ন
বিনয় ঘোষ: লোকসংস্কৃতিবিদ ও সমাজতত্ত্বের পুরোধা ব্যক্তিত্ব
ভাস্কর সরকার (রাবি)

কোন স্থানের মানুষের আচার-ব্যবহার, জীবিকার উপায়, সঙ্গীত, নৃত্য, সাহিত্য, নাট্যশালা, সামাজিক সম্পর্ক, ধর্মীয় রীতি-নীতি, শিক্ষা-দীক্ষা ইত্যাদির মাধ্যমে যে অভিব্যক্তি প্রকাশ করা হয়, তাই সংস্কৃতি। উক্ত বিষয়গুলোকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমভাগ নিত্যদিনকার জীবনযাপনের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। আর দ্বিতীয়ভাগ জীবন উপভোগের ব্যবস্থা এবং উপকরণের সাথে সম্পকির্ত। সংস্কৃতি হল টিকে থাকার কৌশল এবং পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র সংস্কৃতিবান প্রাণী। মানুষের এই কৌশলগুলো ভৌগোলিক, সামাজিক, জৈবিকসহ নানা বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। পূর্বপুরুষদের যেমন এই কৌশলগুলো ছিল তা থেকে উত্তরপুরুষেরা এই কৌশলগুলো পেয়ে থাকে। অধিকন্তু সময় ও যুগের প্রেক্ষিতেও তারা কিছু কৌশল সৃষ্টি করে থাকে। তাই বলা যায় সংস্কৃতি একদিকে যেমন আরোপিত অর্থাৎ উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত তেমনি তা অর্জিতও বটে।

সংস্কৃতি বলতে যা বুঝায়, লোকসংস্কৃতি তারই একটি অংশ। লোকসংস্কৃতির বিশেষত্ব নিহিত আছে ‘লোক’ কথাটির মধ্যে। এখানে পারিভাষিক শব্দ ‘লোক’-এর অর্থ হল মুলত গ্রামীণ, যার অধিকাংশই কৃষিকেন্দ্রিক জীবিকানির্ভর জনগোষ্টী। ঐতিহ্যনুসারী বৃহত্তর গ্রামীণ জনগোষ্টীর ধর্মীয় ও সামাজিক বিশ্বাস, আচার-আচরণ ও অনুষ্ঠান, জীবন-যাপন প্রণালী, শিল্প ও বিনোদন ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা সংস্কৃতিকে সহজ ভাষায় লোকসংস্কৃতি বা ফোকলোর বলা হয়। গ্রাম বাংলার সমাজস্থ বিশাল জনগোষ্ঠীর নিজস্ব বিশ্বাস, কর্মপ্রক্রিয়া, বিনোদন ও জীবনপ্রণালীর মাধ্যমে শতশত বছর ধরে যে বহুমুখী ও বিচিত্রধর্মী সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে, তাই বাংলার লোকসংস্কৃতি নামে অভিহিত। লোকসংস্কৃতির প্রধান উপাদানগুলোকে দুইটি প্রধান ধারায় ভাগ করা হয়: বস্তুগত (material) ও  অবস্তুগত (nonmaterial)৷

সমাজকে এবং সমাজস্থ মানুষের জীবনাচরণ জানতে হলে প্রয়োজন ক্ষেত্রসমীক্ষা ও সামাজিক গবেষণার৷ বিনয় ঘোষ তেমনি একজন পরিশ্রমী গবেষক যাঁর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে উঠে এসেছে সমাজের পড়লে পড়লে সুপ্তবস্থায় লুকায়িত থাকা লোকজসংস্কৃতির নানা উপাদান৷ তিনি বিশ শতকের এক বিশিষ্ট বাঙালি। দৈনন্দিন জীবনে আদর্শবাদী, আপসহীন স্বাধীনচেতা এক মানুষ। বিনয় ঘোষ (১৯১৭-১৯৮০) একাধারে সমাজবিজ্ঞানী, সাহিত্য সমালোচক,  লোকসংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ, চিন্তক ও গবেষক। তাঁর ছদ্মনাম ছিল ‘কালপেঁচা’। ১৯১৭ সালের ১৪ জুন কলকাতায় তাঁর জন্ম, পৈতৃক নিবাস ছিল বর্তমান বাংলাদেশের যশোর জেলার গোড়াপাড়া গ্রামে। তিনি আশুতোষ কলেজ থেকে বিএ এবং  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও নৃতত্ত্বে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তারপর সাংবাদিকতার মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর সাপ্তাহিক ফরোয়ার্ড (১৯৩৯-১৯৪১),  যুগান্তর (১৯৪৩-১৯৪৫), দৈনিক বসুমতী (১৯৪৬-১৯৪৭) ও সাপ্তাহিক অরণি পত্রিকায় সাংবাদিকতার বিভিন্ন পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। সেই সময় থেকেই তিনি বাংলার সমাজ এবং সংস্কৃতি এবং বিশেষ করে লোকসংস্কৃতি বিষয়ক গ্রন্থ এবং আকর সংগ্রহ করতে শুরু করেন৷

‘বিদ্যাসাগর ও বাঙালি সমাজ’ (‌তিন খণ্ড, ১৯৫৭–’‌‌৫৯ প্রকাশিত, পরবর্তীকালে একখণ্ডে)‌ গ্রন্থের লেখক বিনয় ঘোষ আধুনা কলকাতার বাসিন্দা হয়েও প্রথম জীবনে একটা মাদুর পেতে লিখতেন। পাশে থাকত তাকিয়া। উত্তর জীবনে একটা নীচু তক্তাপোশের ওপর বসে লেখাপড়ায় অভ্যস্ত ছিলেন। অবন ঠাকুরের ডিজাইনে তৈরি নীচু খাট আর বিভিন্ন উপকরণে তৈরি মোড়া ছিল তাঁর ড্রইংরুম অর্থাৎ বসবার ঘরের বাহার। বাড়িতে এন্ডির তৈরি ফতুয়া গায়ে থাকত। নিজের স্টাইলে ট্রাউজার–‌পাজামা আর সিল্ক ডিজাইনের তাঁতের তৈরি হালকা গেরুয়া পাঞ্জাবি তাঁর পছন্দের পোশাক। যা সুগঠিত দিঘল গড়নের শরীরে মানানসই। ভোজনপ্রিয় মানুষটি দেশি–‌বিদেশি খাবার পরিতৃপ্তি করেই খেতেন। অথচ গ্রামবাংলায় ক্ষেত্রসমীক্ষার সময় সাধারণ মাছ–‌ভাতেই খুশি থাকতেন।

বিনয় ঘোষের গবেষণাভিত্তিক লেখালেখিতে কোনও ফিকির বা ফাঁক থাকত না। তাঁর নিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ে একাগ্রতার কথা তাঁর স্ত্রী বীণা ঘোষ অকপটে লিখেছেন, ‘‌‌লিখে চলেছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা— সময়ের কথা, সুবিধা–‌অসুবিধার কথা— এমনকী চায়ের কথা পর্যন্ত ভুলে যেতেন। আমাদের টিনের কুটিরে বিজলি পাখা ছিল না। ছোট ছোট ঘর, একখানা ঘরে খাট আর ফোল্ডিং টেবিল পেতে তার আনাচ–‌কানাচে বইয়ের তাক, আর তাকের ওপরে স্তূপীকৃত বই। এতটুকু জায়গা ছিল না। ছোট ছোট দুটো জানালা। ওপরে টিনের ছাউনি। সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে এসে দেখতাম ঘাম ঝরছে অবিরাম।.‌.‌.‌ পরে যখন নিজের বাড়ি করলেন তখন দেড়তলায় গ্যারজের ওপর ঘরটা লেখার জন্য ঠিক করলেন। সেটা বাড়ির পশ্চিম দিক। অফিসের মতো সকাল এগারোটা থেকে বিকেল চারটে–‌পাঁচটা অবধি একটানা কাজ করেছেন। নীচু ছাদ আর পশ্চিমের রোদ্দুরে সন্ধে অবধি ঘরটা আগুনের মতো গরম হয়ে থাকত।’‌ (‌বিনয় ঘোষ:‌ তাঁর মানস ও জীবন, পৃষ্ঠা ৪১, প্রকাশ ভবন, কলকাতা ৭৩)‌

উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল পরিভ্রমণ ও ক্ষেত্রসমীক্ষা-ভিত্তিক আলোচনাগ্রন্থ পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি (১৯৫৭) তাঁর বিশিষ্ট রচনা। গবেষণাগ্রন্থ হিসেবে শিল্প সংস্কৃতি ও সমাজ (১৯৪০), মেট্রোপলিটন মন, বাংলার নবজাগৃতি (১৯৪৮), বিদ্যাসাগর ও বাঙালীসমাজ (১৯৫৭), বিদ্রোহী ডিরোজিও (১৯৬১), সুতানুটি সমাচার (১৯৬২), বাংলার সামাজিক ইতিহাসের ধারা (১৯৬৮), মধ্যবিত্ত বিদ্রোহ (১৯৭৩), বাংলার বিদ্বৎ সমাজ (১৯৭৩), কলকাতা শহরের ইতিবৃত্ত (১৯৭৫), বাংলার লোকসংস্কৃতি ও সমাজতত্ত্ব (১৯৭৯) প্রভৃতি তাঁর অন্যান্য প্রধান রচনা। মার্কসবাদের আলোকে সমাজতাত্ত্বিক আলোচনা ও বিশ্লেষণ এসব গ্রন্থের প্রধান আকর্ষণ। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ হচ্ছে: টাউন কলিকাতার কড়চা (১৯৬১), সাময়িকপত্রে বাংলার সমাজচিত্র (৪ খন্ড, ১৯৬২-৬৬), জনসভার সাহিত্য, কালপেঁচার নকসা, নববাবুচরিত, ডাস্টবিন (গল্প-সংকলন) ইত্যাদি। ৩০৪ নামে একটি উপন্যাসও তিনি রচনা করেন।

‘বাংলার লোকসংস্কৃতির সমাজতত্ত্ব’ গবেষণামূলক গ্রন্থটি বিনয় ঘোষের এক অনবদ্য সৃষ্টি৷ আমাদের চারপাশে ধাবমান কালের শব্দ ওঠে, যখন কালের বিবর্তনে হারিয়ে যায় সভ্যতা, সমাজ, নামিদামি ব্যক্তিত্ব। তেমনি নামহারা মূর্তির মতো সময়ের স্রোতে তলিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি, অর্থনীতি, এমনকি জীবনযাপনের কিছু অংশ ধরা পড়েছে গবেষক, ক্ষেত্রসমীক্ষক এবং প্রাবন্ধিক বিনয় ঘোষ-এর দৃষ্টিতে তাঁর ক্ষুরধার লিখনীতে। নানা জায়গায় বিক্ষিপ্ত, দু’টি ক্ষেত্রে ইংরেজিতে প্রকাশিত ও পরে অনূদিত হওয়া এমন কিছু লেখা রয়েছে বাংলার লোকসংস্কৃতির সমাজতত্ত্ব এই বইটিতে৷ এবার সংক্ষিপ্তভাবে আলোকপাতের প্রয়াস পাবো—

১. লোকসংস্কৃতি বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ— ঠাকুরবাড়ির নিজস্ব দেশাত্মবোধ এবং লালনের গান কীভাবে মানুষটির সৃজনশীলতা ও মনোজগতে প্রভাব ফেলেছিল, তাই নিয়ে আলোচনা রয়েছে এই লেখায়।

২. বাংলার ব্রত এবং অবনীন্দ্রনাথ— তথাকথিত ‘শাস্ত্রীয়’ ব্রত-র স্থূল হস্তাবলেপের বাইরে ‘মেয়েলি’ ব্রতগুলোতেই যে আছে বাংলার প্রকৃত ভাবনা, সেটি দস্তুরমতো তথ্যপ্রমাণ দিয়ে দেখিয়েছেন লেখক।

৩. সংস্কৃতির সামাজিক দূরত্ব— শুধুমাত্র স্থান বা কালে নয়, মনের দেওয়ালে কীভাবে সংস্কৃতি খণ্ডিত ও লাঞ্ছিত হয়, সেটি জানা যায় এই লেখায়। লেখাটা পড়তে-পড়তে মনে হচ্ছিল, একসময় যা ছিল জাতপাতের বিভাজন, আজ ‘আমরা-ওরা’ রাজনীতি সেই জায়গাটাই নিচ্ছে বোধহয়।

৪. লোকশিল্পের ক্রমিক অবনতি— অর্থনৈতিক বাস্তবতার এই নির্মোহ ছবিটি যে কত খাঁটি, তা আমরা সবাই জানি। ১৯৬০ সালে লেখা এই প্রবন্ধের প্রতিটি শব্দ এখনও প্রযোজ্য!

৫. রাঢ়ের মৃৎশিল্প— জনপ্রিয় ও নানা পুরস্কারে নন্দিত কৃষ্ণনগর ঘরানা থেকে দূরে বাঁকুড়ার নিজস্ব মৃৎশিল্প নিয়ে অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা করা হয়েছে এই প্রবন্ধে। লেখাটা পড়তে গিয়ে ভাবনা হচ্ছিল, অবজ্ঞা আর উপেক্ষায় এই অমূল্য রতনটিকেও আমরা এতদিনে হারিয়ে ফেলিনি তো!

৬. ডোকরাশিল্প ও শিল্পীজীবন— এক সর্বার্থে ব্রাত্য জনগোষ্ঠী এবং তাদের জীবনযাত্রা নিয়ে এই লেখাটি অসম্ভব মূল্যবান। আমি জানি না ‘বিশ্বকর্মার সন্ধানে’ নামক অতুলনীয় বইটি এখনও পাওয়া যায় কি না। কিন্তু ওই বইয়ের বাইরে একটি শিল্পীগোষ্ঠীর জীবন নিয়ে এমন লেখা আমি আর কোথাও পড়িনি।

৭. পটুয়া ও পটশিল্প— লুপ্তপ্রায় এক শিল্প এবং তার সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা আলোচিত হয়েছে এই লেখায়। বাজারে পট নামে যা বিক্রি হয় তার সঙ্গে এই পট ও তাকে নিয়ে নানা বিশ্বাস-অবিশ্বাসের যে কোনো সম্পর্কই নেই, সেটি দেখিয়েছেন লেখক।

৮. বারজনসংস্কৃতি— জনসমাজে একদিকে আছে জৈবিক বন্ধনে আবদ্ধ মূলত স্থানিক জনগোষ্ঠী, যাদের সংস্কৃতিকে আমরা বলি ফোক বা লোকসংস্কৃতি। তাহলে তার বিপরীতে, যান্ত্রিক বন্ধনে আবদ্ধ মূলত কালকেন্দ্রিক সফিস্টিকেট সংস্কৃতিকে কী বলা হবে? এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজেছেন লেখক তার এই নিজস্ব পরিভাষার অন্তরালে।

৯. ধর্ম দেবতা উৎসব— সংস্কৃতির বদল এলে কীভাবে বদলায় ধর্ম আর তার পালনের পদ্ধতি, সেটি নিয়ে একটি সূচিমুখ আলোচনা রয়েছে এই ছোট্ট লেখায়।

১০. বাংলার চণ্ডীমণ্ডপ— ‘চণ্ডী’-র ইতিহাস, চণ্ডীমণ্ডপের সঙ্গে যুক্ত আচার ও ব্যবহার, সর্বোপরি তাতে স্থান পাওয়া নানা স্থাপত্য-ঘরানা যা আজ নিশ্চিহ্ন— এই বিষয়গুলো ধরা পড়েছে এই প্রবন্ধে।

১১. উড়িষ্যার গ্রাম— শিল্পী গোপাল ঘোষের সঙ্গে উড়িষ্যার কয়েকটি গ্রাম-পরিক্রমা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এই লেখায়। এটি কিন্তু ট্র‍্যাভেলগ নয়! ‘চক্ষু মেলিয়া’ লেখক দেখেছেন গ্রামগুলোর আকার ও বিন্যাসের নিজস্বতা। তাঁর চোখে ধরা পড়েছে এলাকার ভূগোল ও অর্থনীতি অনুযায়ী সেই বিন্যাসে নানা পরিবর্তন।

এই অসাধারণ বইটি অতি অল্পকথায় আমাদের চারপাশে অতি দ্রুতবেগে হারিয়ে যেতে থাকা নানা শিল্প, সংস্কৃতি এবং জীবনশৈলীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। তাদের আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারলাম না— এই নিয়ে হাহাকার বা দোষারোপের বদলে প্রকৃত শিকড়-সন্ধান হতে পারে এমন বই।

বনজঙ্গল পর্বতগুহা থেকে গ্রাম, গ্রাম থেকে নগর শহর মহানগর, এই হলো মানবসমাজের ক্রমোন্নতির ইতিহাস, মানবসভ্যতা ও মানবসংস্কৃতির ক্রমবিকাশের ইতিহাস৷ এরই ধারাবাহিকতায় ‘বাংলার নবজাগৃতি’ সেকালের সমাজ-সংস্কৃতি নিয়ে বিনয় ঘোষের এক অনবদ্য রচনা৷ নবজাগৃতিকেন্দ্র কলিকাতা, বাঙলার নতুন সামাজিক শ্রেণীবিন্যাস, ইসলাম ও বাঙলার সংস্কৃতি সমন্বয়, নবজাগৃতির ভাববিপ্লব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তিনি উক্ত গ্রন্থে বিশদ আলোকপাত করেছেন৷ এছাড়া নীহাররঞ্জন রায়ের ‘‌বাঙালির ইতিহাস, আদিপর্ব’‌ গ্রন্থের অনুরূপ আকরগ্রন্থ ‘‌পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি’‌। ৮১৪ পৃষ্ঠার একখণ্ডে প্রকাশিত ‘‌পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি’‌ গ্রন্থটি ১৯৫৭ সালে রবীন্দ্র–‌পুরস্কার পেলেও বিনয় ঘোষ যথার্থ গবেষক হিসেবে আত্মতৃপ্ত ও ক্ষান্ত হননি। তিনি উপরোক্ত গ্রন্থে বলেন, “অন্ধকারে ঢিল না ছুঁড়ে এবং বাঁশবনে ডোমকানা না হয়ে, খোলা চোখ ও মন দিয়ে বিজ্ঞানসম্মত এই রীতি সন্ধানক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে, আর কিছু না হোক, জনসংস্কৃতির বাস্তব রূপ ও গতিধারা অনেক বেশি স্পষ্ট ও জীবন্ত হয়ে ওঠে”৷ (পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি) তাই  তাঁর নিরন্তর সন্ধিৎসু চেতনায় নিজের গবেষণাকর্মে তখনও বিধৃত হয়নি পুরুলিয়া, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও উত্তরবাংলার জেলা সমীক্ষা। ফলত প্রামাণ্য গবেষণা কর্মে সেই সব জেলা–‌সমীক্ষায় নিরত হন। কিন্তু ৬৩ বছরের জীবদ্দশায় উত্তরবাংলা সমীক্ষার সময় পাননি। ১৯৮০ সালে এই মহান লোকসংস্কৃতির সাধক পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে অপার্থিব জগতে পাড়ি জমান৷

One response to “বিনয় ঘোষ: লোকসংস্কৃতিবিদ ও সমাজতত্ত্বের পুরোধা ব্যক্তিত্ব”

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x