পবিত্র ঈদ-উল-আযহা আগামীকাল সিলেটসহ সারাদেশে পালিত হবে। ঈদে সিলেটজুড়ে প্রায় সাড়ে চার লাখ পশু কোরবানি হবে। এসব পশুর চামড়া সংগ্রহ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। চামড়া সংগ্রহ নিয়ে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ নেই খুব বেশি। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সিলেটের চামড়া ব্যবসায়ীদের প্রায় ৫০ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে ট্যানারি মালিকদের কাছে। ফলে নতুন করে লগ্নি করার টাকা নেই। অন্যদিকে চামড়ার মূল্যও এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। এ দুইয়ে মিলে এবার লাখ লাখ চামড়া নিয়ে সিলেটে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। চামড়া ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গেল কয়েক বছরে ব্যবসায়ীরা ট্যানারি মালিকদের কাছে যে চামড়া বিক্রি করেছেন, সে বাবদ অন্তত ৫০ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে।
ট্যানারি মালিকরা কোরবানির ঈদ এলে কিছু কিছু টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু বিপুল অঙ্কের টাকা তাদের কাছে বকেয়া। ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার এবার ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম গরুর প্রতি বর্গফুট ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা, বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ ২০১৫ সালেও গরুর চামড়া বর্গফুট প্রতি ছিল ২০০ টাকার মতো। চামড়ার এই ভয়াবহ দরপতনের কারণেও ব্যবসায়ীরা এখন চামড়া সংগ্রহে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এর বাইরে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকা, পরিবহনে সমস্যাসহ নানা কারণে এ খাত এখন হুমকির মুখে।
সিলেট শাহজালাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শামীম আহমদ জানান, লকডাউন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, পরিবহন সমস্যা, ট্যানারি মালিকদের বকেয়া পরিশোধে গড়িমসিসহ নানা জটিলতার কারণে চামড়া ব্যবসায় আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া ব্যবসায়ীদের প্রায় ৫০ কোটি টাকা বকেয়া আছে। কিন্তু নানা অজুহাতে ঢাকার ট্যানারি মালিকেরা বকেয়া পরিশোধ করছেন না। শাহজালাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি শাহিন আহমদ বলেন, কয়েক বছর ধরেই চামড়া ব্যবসায়ীদের দুর্দিন চলছে। তিন বছর ধরে আড়তদার বকেয়া টাকা দিচ্ছেন না। এবার চামড়ার দাম খুবই কম। চামড়া কিনে লবণজাত করে বিক্রি করেও অনেক ক্ষেত্রে লোকসান হচ্ছে। সিলেটের অন্তত ৩০০ চামড়া ব্যবসায়ীর মধ্যে বেশির ভাগই এবার ক্ষতির আশঙ্কায় চামড়া সংগ্রহ না করার কথা ভাবছেন।
এ বছর সিলেটে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ পশু কোরবানি হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রুস্তম আলী। কিন্তু ব্যবসায়ীরা মাত্র এক লাখের মতো চামড়া সংগ্রহের কথা বলছেন। তাও লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আছে তাদের শঙ্কা। যেমনটি বলছিলেন সিলেট শাহজালাল চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শামীম আহমদ, এবার সিলেটে প্রায় সাড়ে চার লাখ পশু কোরবানি হবে। তবে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ পিস পশুর চামড়া সংগ্রহের। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না তা এখন বলতে পারছি না। এদিকে, প্রকৃত ব্যবসায়ীরা যদি চামড়া না কিনেন, তবে হাজার হাজার চামড়া মৌসুমী ব্যবসায়ীদের হাত ধরে পাচারের শঙ্কা রয়েছে।এছাড়া ব্যবসায়ীরা চামড়া না কিনলে লাখো চামড়া হতে পারে বিনষ্ট।
Leave a Reply