লোডশেডিং যেন লাগামহীন ঘোড়ায় পরিনত হয়েছে কুড়িগ্রাম জেলার গ্রাম গুলোতে। সারাদিনে বিদ্যুৎ যে কতবার যায় আসে কতবার আসে, সেটা হিসেব করাই অসম্ভব। আর একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে সেটা ফিরে আসতে কমপক্ষে ১ ঘন্টা থেকে ৫ পর্যন্ত সময় লাগে। কখনও কখনও তো সারাদিন শেষে সন্ধ্যায় একটু ঘুড়তে আসে, সবার সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা পর্যন্ত থাকে তার পরে পুনরায় চলে যায়, আবার ফিরে আসে রাত ১০ টার পরে। কখনও কখনও রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামে আটকে গেলে, বিদ্যুৎ ফিরে আসতে রাত ১১ টা থেকে ১২ টাও লেগে যায়।
নিত্যদিনই এইভাবে বিদ্যুতের যন্ত্রণায় সাধারণ মানুষ ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে। সন্ধ্যায় যখন বিদ্যুতের অভাবে ঘর-বাড়ি গুলো অন্ধকারে ডুবে যায় তখন গ্রামের মা-বোনেরা রাতের খাবার রান্না করে অন্ধকারে অন্ধকারে। এর মধ্যে তো বর্তমানে তীব্র গরমে মৌসুম। শহরে যারা এসি ঘরে বসবাস করে, তারা হয়তো জানেই না, কখন দেশে গরম আসে, আর কখন ঠান্ডা। তবে গ্রামের এই অসহায় মানুষ গুলো সেটা ঠিকই জানে হারে হারে।
কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার নিতান্তই একটি অনুন্নত ও অবহেলিত এলাকা। তাই এখানের মানুষের জীবনযাত্রার মানও কিছুটা নিম্ন। বেশির ভাগ মানুষই এখানকার দিন আনে দিন খায়। এই এলাকার গ্রাম গুলো বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছে মাত্র ৩-৪ বছর আগে। যদিও সারাদেশে বিদ্যুৎ এসেছে অনেক বছর আগে।
বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে সবাই অনেক খুসি হয়েছিল। তারা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই প্রত্যেকে টাকা পয়সা খরচা করে বিদ্যুৎ গ্রহণ করে।
কিন্তু আসলেই বিদ্যুতের পূর্ণ সুফল পাচ্ছে?
এই এলাকার সাধারন মানুষ গুলো আমাদের কাছে বলেন, আমাদের এলাকায় যে পরিমাণে লোডশেডিং হয়, এত লোডশেডিং বাংলাদেশের কোথাও হয়তো হয় না। তারা বলেন সারাদিন তো বিদ্যুৎ থাকেই না, তার উপরে সন্ধ্যার পরেও বিদ্যুতের সেবা টুকু আমরা পাই না।
সাধারণত আমাদের এলাকায় একটু বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। আকাশে একটু কালো মেঘ জমলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। আর ঝড়-বৃষ্টি হলে তো ২ দিন ৩দিন পর্যন্ত বিদ্যুৎ বন্ধ করে রাখে। বিদ্যুৎ অফিসে গ্রাহকগণ যোগাযোগ করলে, কখনও বলেন ফেইজ পড়ে গেছে, কখনও বলেন ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে, কখনও বলেন বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। এমনও হাজারও অজুহাত দিয়ে যায়।। প্রায় প্রতি রাত ১২ টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে রাখে বিদ্যুৎ অফিস।
যদিও কারও বিরুদ্ধে কোন প্রকার আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।
বিদ্যুৎ অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারীও আছেন, যারা নিয়মিত অনিয়ম করে যাচ্ছে। কোথায় ব্যারেল/ফেজ পরে গেলে, বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করা হলে, তারা আসছি বলে, ১৫ মিনিটের রাস্তায় আসে ২ থেকে ৩ ঘন্টা পরে। কখনও কখনও সকালে যোগাযোগ করলে ওরা আসে সন্ধ্যার আগে। বিদ্যুৎ বিল লিখার সময়ও অনিয়ম করে অনেকেই। মিটারের সঠিক বিল দেখে না লিখে, ঘরে বসেই আনুমানিক বিল করে। ফলে গ্রাহক বিভ্রান্তিতে পরে।
বিদ্যুৎ বিলের কাগজ যারা দিয়ে যায়, তারা প্রত্যেক গ্রাহকের হাতে বা বাসায় বিদ্যুৎ বিল পৌঁছে দেয়ার কথা থাকলেও, তারা অনেক সময় এক বাড়ির বিল অন্য বাড়িতে দিয়ে যায়, ফলে গ্রাহক জানতেই পারেনা, তার বাসার বিদ্যুৎ বিলের কাগজ আসছে। ফলে বিলটি বকেয়া বিল হয়ে যায়। পরে গ্রাহককে জরিমানা সহ বিল টি পরিশোধ করতে হয়।
আবার কিছু বিল রাইটার আছে, যারা সামান্য কিছু টাকা ঘুষের আসায়, যে সব আবাসিক মিটারের মাধ্যমে মুরগী বা গরুর খামার চলে, অটোরিকশা চার্জ করানো হয়, সেচ পাম্প চলে, তাদের মিটার গুলো আবাসিক থেকে বানিজ্যিক করার নিয়ম থাকলেও ঐ কর্মচারীরা সেটা করেন না। ফলে প্রতিমাসে একটি নির্দিষ্ট টাকা ঘুষ পায়। (মাত্র ৫০ থেকে ১০০ টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়)।
এছারাও করোনালিন সময়ে সময়মত বিদ্যুৎ বিল জমা দিতে না পারায় সংযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকি তো আছেই।
এভাবেই চলছে, গ্রামবাসীদের জীবনযাত্রা। গ্রামবাসী এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়। তারা চায়, বিদ্যুৎ অফিসের উর্ধতন কর্মকর্তারা এই বিষয় গুলো জানুক এবং একটি সুনির্দিষ্ট সমাধান করে দিক। যাতে করে সাধারণ গ্রামবাসীর ভোগান্তি কমে।