হেফাজতের নেতা মাওলানা মামুনুল হকের ব্যক্তি চরিত্র নিয়ে রাজনৈতিক অরাজনৈতিক প্লাটফর্মে আলোচনার ঝড় বইছে। সামাজিক মাধ্যমে করোনাভাইরাসের চেয়েও ভয়ংকরভাবে ছড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের ফোনালাপ।এভাবে ফোনালাপ প্রকাশ করা কতটা আইন সিদ্ধ তা সরকারই ভালো বলতে পারে। তবে রাজনীতির দাবাচালে আর কিছু মানুষের ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন যে নরকময় হতে পারে সে কথা ভুলে গেছে সবাই। বিশেষ করে একজন নারী হয়ে মাওলানা মামুনুল হকের ঘরে থাকা স্ত্রীর মানসিক অবস্থাটা অনুভব করলে বুঝা যায় তার যন্ত্রণাটা কতটা কষ্টের। তার স্বামী সত্য গোপন করে দ্বিতীয় বিয়ে করুক বা পরনারী নিয়ে ব্যাভিচারে লিপ্ত থাকাটা শুধু অন্যায় নয় বরং তার বিশ্বাসে কষাঘাত করা। আর এখন তাকে সে ঘটনার পক্ষে বয়ান দিতে পরিবার চেষ্টা করছে, যা মামুনুলের নিজের আর বোনের ফোনালাপ থেকে জানা যায়।
দেশের নারীর অধিকার নিয়ে সোচ্চার ব্যক্তি, সংগঠন কেউ তার পাশে নেই।আর দশজনের মতই এ নারীকে শুনতে বা দেখতে হচ্ছে স্বামীর জঘন্য কীর্তিকলাপ।বাস্তবতার প্রকাশিত রূপের বাইরে মানুষের মনের ভেতরের ভাবনাগুলোকে এ সমাজ মূল্য দিতে জানে না। সে কারণেই নারী হয়েও আর একজন নারীর অসহায়ত্ব চোখে পড়ে না।পুরুষদের মতই নারীরা বিষয়টি নিয়ে তামাশা করছে শুধু মাত্র রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে।
মাওলানা মামুনুল হকের এ ঘটনা সমাজে নতুন নয়।এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত হচ্ছে সমাজে।ঘরে বউ রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করা কিংবা স্বামীর পরকীয়া বা অনৈতিক সম্পর্কে আসক্ত বলে নারী মানসিক শারিরীক নির্যাতন সহ্য করে নানাভাবে।এ নিয়ে আদালতে মামলার ও অন্ত নেই।সুতরাং হেফাজতের এ নেতার চারিত্রিক নোংরামির কারণে আরেকজন নারীর মানসিক কষ্ট বাড়ানোটা অন্যায়ের সামিল।
এ মুহুর্তে মাওলানা মামুনুল হকের সোনারগাঁ রিসোর্টের ঘটনাটি পারিবারিক দৃষ্টিকোন থেকে আইনীভাবে দেখা উচিত। তিনি আইনগতভাবে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন নাকি স্ত্রীকে ঠকিয়ে ব্যাভিচারে লিপ্ত ছিলেন তার সমাধান করা প্রয়োজন সমাজের নৈতিক চিন্তা থেকে। তা না হলে এ ধরনের কাজে একটা শ্রেণী নারীকে উপেক্ষিত করবে মাওলানা মামুনুল হককে উদাহরণ দিয়ে।
জানামতে দেশের হোটেল রিসোর্টগুলোতে যথাযথ পরিচয় দিয়ে রুম ভাড়া করতে হয়। সেখানে এ নেতা মিথ্যাচার করে থাকলে তা পরিষ্কার হতে হবে আইনীভাবে। দেশে একজন মানুষের ব্যাক্তি চরিত্র নিয়ে ধর্মীয় অস্থিরতা তৈরি করা থেকে বিশেষভাবে বিরত থাকতে হবে গণমাধ্যমগুলোকে। হোটেলে থাকা নারীটির একের পর এক ফোনালাপ বা ছবি প্রকাশ করে একটা বিশ্রী পরিবেশের সৃষ্টি করা হচ্ছে। তার সন্তানের সাথে কথোপকথন মানুষের কাছে রসালো আলাপ হতে পারে কেবল। সমাধান আসবে না এতে।মা বাবার অন্যায় বা অবৈধ কাজে কারণে সন্তানকে সমাজের কাছে বিব্রত হতে হয়, এটা পর্যন্ত ভুলে গেছে মানুষ।
হেফাজতের সাম্প্রতিককালের কার্যক্রমে নেতা মাওলানা মামুনুল হক বিশেষভাবে ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সে কারণে রাজনৈতিক হিসেবে নিকেশ করতে গিয়ে দেশের মানুষ এখন ধর্মের পক্ষে বিপক্ষে নানা ধরনের তর্কযুক্তি উপস্থাপন করে নিজেরা বির্তক সৃষ্টি করছে। কিন্তু অন্যায় ব্যাভিচারকে কোনো ধর্মেই সমর্থন করে না। আর একের অধিক বিয়ে করতে প্রথম পক্ষের স্ত্রীর অনুমতি আবশ্যক। মাওলানা মামুনুল হকের দ্বিতীয় বিয়ে করার বিষয়টি সত্য না মিথ্যা তা প্রমাণ সাপেক্ষ এখন পর্যন্ত
গাল ভরা বুলি দিয়ে মানবিকতার কথা বলতে আমরা ভালোবাসি।আবার সেই আমরাই একজনের দোষের বিচার করতে গিয়ে রঙ্গ রসের আলাপ করে অমানবিক আচরণ করি তার স্ত্রী, পরিবার আর সন্তানের প্রতি;যখন তারা তাদের অতি চেনা প্রিয়মানুষটি থেকে আঘাত পেয়ে ম্রিয়মাণ।হেফাজতের এ নেতা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য সন্দেহভাজন হলে আইনীভাবে তাকে আটক করার কথা। সম্পূর্ণ বিষয়টি আইনের বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হলে আজ তাদের সন্তান, পরিবার, স্ত্রীকে এতটা বিব্রত হতে হতো না, এটাই সত্য।
হেফাজত রাজনৈতিক দাবাচালে কার গুটি হিসেবে চালিত হচ্ছে, সেটা পরিষ্কার করা প্রয়োজন। একজন মাওলানা মামুনুল হকের চারিত্রিক নোংরামি দিয়ে দেশে অস্থিরতা কমানো যাবে না। বরং এতে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করতে বেকায়দায় পড়বে তার ঘরে থাকা স্ত্রী। এটা একজন নারীর জন্য কতটা মানসিক কষ্টের তা বোধ করি বুঝতে পারবে না সামাজিক মাধ্যম আর টকশোতে ঝড় তোলা ব্যক্তিরা।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।) নিউজ সোর্সঃ নারী হয়ে ভাবুন, স্ত্রী হিসেবে ঘরে থাকা সেই নারীটির কথা