মাহফুজ নয়ন
মৌলভীবাজার জেলা শহর থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরে বড়লেখার নিউ সমনবাগ চা-গানের পার্শ্ববর্তী পাথারিয়া চা বাগান। সকাল ঠিক ৬টা বেজে ১০ মিনিট। একটা ট্রাকে করে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা। ২১ জন ক্যাডেট আর ৩ জন সিভিল পার্সনের টিম। নিউ সমনবাগ চা-বাগান কেন্দ্রীয় হাসপাতালের সামন থেকে গাইডকে হায়ার করে নিলাম। অবশ্য আগে থেকেই তার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল। গাইড তার সাথে আরেকজনকে নিলো। প্রথমে অনুমতি পেতে বেগ পেতে হলেও পরে সেটি ওভারকাম করে পাথারিয়া চা-বাগানের পথে আমরা এগিয়ে চলি। ট্রাক সর্বোচ্চ ভেতর পর্যন্ত ঢুকার চেষ্টা করছিল; যতটুকু ঠিক ততটুকুতেই নেমে পড়লাম। নেমে এক্স ক্যাডেট সার্জেন্ট জুবেদ ভাইয়ের কমান্ড ফল-ইন।
এরপর পিইউও জাকারিয়া স্যারের কমান্ড, অতঃপর উদ্দেশ্য নিয়ে স্যারের একটি ব্রিফ। এর সারাংশ এই-‘আমরা এই বন্য এলাকায় এসেছি। এখানে অন্য ভিজিটররা আসলে বা আমরাও যদি ১০ বছর পর আসি তাহলে যেন নিজ হাতে লাগানো গাছের ফল খেতে পারি সেজন্য কিছু ফলের বীজ বপন করতে হবে। এছাড়া স্পটে পড়ে থাকা পলিথিনের ব্যাগ ক্লিয়ার করতে হবে। ঠিক এই টিমের আগে ভিজিট করা হামহাম জলপ্রপাত মিশনের মতোই।’ সে অনুযায়ী সবাইকে খাবার দাবার আর আম দেয়া হলো আর বাকি সব নির্দেশনা দিয়ে সিনিয়র ক্যাডেট মাহীকে লাস্ট ম্যান বানিয়ে হাঁটাশুরু গহীন অরন্যের পথ ধরে। এ পথে কেউ ক্লান্ত হবে না। জ্বী কথাটা ঠিক, আপনি যখন পাহাড়ে চড়বেন তখন সব ক্লান্তি দূর করে দিবে দূর থেকে দেখা চা বাগানের মনোরম দৃশ্য কিংবা কখনো জুম চাষ আবার কখনো বহুদূরের কোনো এসথেটিক স্পট, যেদিকে তাকালে চোখ ফেরানো সহজ না।
অনেকগুলা উঁচু উঁচু পাহাড় বেয়ে উঠা আবার নেমে ৪০ মিনিট পর ছড়া ধরে আমরা পৌঁছে গেলাম ঝুরঝুরি ঝরনায়। সুবহানাল্লাহ! এতো মনোরম আর রোমাঞ্চকর পাহাড় বেয়ে গড়িয়ে পড়া ঝরণার দৃশ্য। তাকিয়ে না থেকে হাতের লাঠি দিয়ে ঠাঁই খোঁজে নেমে পড়লাম সবাই। সাঁতার জানি না অবশ্য আমি তাই ভয় পেলাম; তবে সবার অভয়ে নেমে পড়লাম পুলকিত স্নানে। সরাসরি পানি পড়ছিল আমার পিঠে আর মাথায়, কেমন ফিল ছিল সেটা অবর্ণনীয়। ‘ঝুরঝুরি’ থেকে ফেরার পালা ভিন্ন কিছু এক্সপ্লোরের জন্য।
যাত্রাপথে গ্রিপিং জুতা না পড়লে যা হয়, স্লিপ খাওয়া, পড়ে যাওয়া এসব ঘটনা নিয়ে আরো প্রায় দুইঘণ্টা বিশাল বিশাল উঁচু পাহাড় বেয়ে উঠা-নামার পর দেখা মিলল ’বান্দর ডোবা’ ঝরনার উপরের ছড়ার। তবে সেখানে পৌঁছানো একটু ঝুকিপূর্ণ। ঝুঁকি নিয়েই সবাই নেমে পড়লো।
কিন্তু নেমে দেখা গেলো আসল ঝর্নার আগে আরেকট পাথরের অবয়বে চলা স্রোতের ছড়া। বেশ গভীর ও ছিল আর সাথে ছিল জোঁক। এই যাত্রায় সব থেকে ভয়ানক বাধা ছিল এই জোঁক৷ আমাদের টিমের মেক্সিমামকেই ধরেছিল। কারো কারো প্রচুর ব্লিডিং ঘটায় বিভিন্ন জায়গায়। একজনের অবস্থা এমন যে মাথা ঘোরাচ্ছিল এই পরিমান ব্লিডিং।
আমি সাঁতার পারি না এই এক জিনিস তার উপর পিচ্ছিল পাথর, অনেক চেষ্টা করে একজন উঠে যায় সেখানে তারপর অনেককেই তুলে যারা সাঁতার পারে। কারণ আসল ঝরনার নিচ ছিল গভীর এমনকি পাথরের উপর উঠার সময় ঠিক নিচ বরাবর সুড়ংগ। পাশের পাথর বেয়ে অল্প এগিয়ে আমি দেখলাম বান্দর ডোবা কেমন, জাস্ট আমাজিং। মনে হচ্ছিল কোনো শিল্পী তার নিপুন হাতে একে রেখেছে ঝর্নার ধারা আর পাথরের ডিজাইনেবল অবয়ব যদিও ভয়ানক ছিল।