ঢাকা, রবিবার ১৫ জুন ২০২৫, ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন
কেমন হলো করোনাকালে শিক্ষা দ্বিতীয় বাজেট ?
রাশেদ ইসলাম, জয়পুরহাট

করোনা মহামারি কারনে আমাদের দেশের চার কোটি শিক্ষার্থীর জীবন থেকে হারিয়ে গেছে একটি শিক্ষাবর্ষ। তৃতীয় ঢেউ আসবে কি না, এলেও কত তীব্র হবে,সেটিও আমরা কেউ জানি না। ফলে আরও একটি শিক্ষাবর্ষ প্রায় অর্ধেক শেষ হতে চলছে।

কোভিড-১৯ কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের বিষয়টি পুরোপুরি বন্ধ আছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো টেলিভিশন এবং অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালুর মতো নানা উদ্যোগ নিয়েছে।

এই ধরনের প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে শহরাঞ্চলে ধারাবাহিকতা থাকলেও ডিজিটাল যন্ত্রের অভাব ও দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগের কারণে গ্রাম এলাকায় বসবাসরত শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারি প্রতিবেদন অনুসারে,গ্রামীণ এলাকার মাত্র ৩ শতাংশ শিশুর বাসায় কম্পিউটার আছে। দরিদ্র শ্রেণির শিশুদের ক্ষেত্রে যা প্রায় শূন্যের কোঠায়।  ইন্টারনেটের আওতায় থাকা গ্রামের পাঁচ থেকে ১১ বয়সী শিশুর হার মাত্র ৩০ শতাংশ।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল শিক্ষা খাতের জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন মোট ৭১ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছেন। এর মধ্যে ২৬ হাজার ৩১১ কোটি টাকা রাখা হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য।

এ ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৬ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা এবং টেকনিক্যাল ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।যা মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং জিডিপির ২ দশমিক শূন্য ৮ ভাগ। গত বছর এই বরাদ্দ ছিল যথাক্রমে ১১.৬৯ শতাংশ ও ২.০৯ ভাগ।

শিক্ষাখাতে বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের ১০ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে করোনা পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ না নিলে এই ক্ষতি পূরণ করতে কয়েক দশক সময় লেগে যাবে।

প্রায় ১৫ মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। দীর্ঘ বন্ধে শিক্ষার ক্ষতির ব্যাপকতা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রায় বছরব্যাপী শিক্ষা দুর্যোগকেও ছাড়িয়ে গেছে বলে আমাদের দেশের শিক্ষাবিদের কাছ থেকে ইতিহাস জানতে পারি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এর ওপর যাদের জীবিকা নির্ভরশীল, সেই শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রচণ্ড আর্থিক কষ্টে দিনযাপন করছে। দেশের অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

শিক্ষা ব্যাবস্থায় ধনী-গরীব, নারী-পুরুষ বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। শিশু শ্রম ও বাল্যবিবাহ বাড়ছে।মোবাইলে ইন্টারনেটে গেমস গুলোতে আসক্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে, মানষিক অশান্তিতে  কেউ কেউ আত্মহত্যা করছে এমন খবর উঠে এসেছে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে বলে জানা গেছে কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন কি আদৌও দেওয়া  সম্ভব!

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে দেশের অর্থনীতি যতই সচল রাখি না কেন ভবিষ্যৎতে সেটি দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। গণপরিবহন  শ্রমিকেরা আন্দোলন করে যানবাহন চালু করল। ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে তাদের প্রতিষ্ঠান খোলা অনুমতি পেলো। দেশের সব কিছুই যখন সচল তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অচল। স্বাস্থবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরিকল্পনায় আসা উচিত। সারা দেশে একসঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করার ভাবনা মাথায় থেকে বাদ দিতে হবে। অপেক্ষাকৃত কম সংক্রমণ এলাকায় বা সংক্রমণ খুবেই কম সেই সব এলাকায় বিদ্যালয়  খুলে দিতে হবে।

নতুন নতুন সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টার মনোভাব তৈরী করতে হবে। প্রথমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলার পর শিক্ষার্থীদের ক্ষতির তথ্য যাচাই করতে হবে। দীর্ঘ দিন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকায় আগে যা শিখেছে তাও ভূলে যাওয়ার পথে। এ জন্য শ্রেণিভিত্তিক মূল দক্ষতার ভিত্তিতে প্রাথমিকের বাংলা, গণিত, ইংরেজি এবং মাধ্যমিকে বাংলা, গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞান এই বিষয় গুলোর উপর সংক্ষিপ্ত পরীক্ষা নিয়ে মেধা তালিকার পদ্ধতিতে পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণের কার্যক্রম প্রস্তুত করতে হবে।

গতানুগতিক চিন্তার বাইরে মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়তে হলে অবশ্যই দেশের জাতীয়  বাজেটের ২৫% ও জিডিপির ৬ ভাগ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ থাকা বাঞ্চনীয়। প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পরিবারের পক্ষে এমন আধুনিক ও ব্যয়সাধ্য সুবিধার সংস্থান করা সম্ভব হবে না। তখন ওই শিশুরা তাদের সহপাঠীদের চেয়ে নিজেদের আরও পিছিয়ে পড়া মনে করবে।

এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানের পাশাপাশি ইন্টারনেটের সুবিধা, মোবাইল ক্রয়, আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় নিয়ে আসা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

x