ঢাকা, বুধবার ২২ মে ২০২৪, ০১:০১ পূর্বাহ্ন
রাবিতে নয়নাভিরাম পুষ্পতরু জারুল স্ট্রীট
Reporter Name

ভাস্কর সরকার (রাবি প্রতিনিধি) : ‘সবচেয়ে সুন্দর করুণ/ সেখানে সবুজ রাঙা ভ’রে মধুকূপী ঘাসে অবিরল/ সেখানে গাছের নাম: কাঁঠাল, অশ্বথ, বট, জারুল, হিজল/ সেখানে ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো জাগিছে অরুণ।’ চরণগুলো তিরিশোত্তর বাংলা কাব্যের শক্তিমান কবি, বাংলা সাহিত্যের পঞ্চপাণ্ডবদের অন্যতম প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশের ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যের ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার। তিনি গ্রামবাংলার প্রকৃতি নিপুণ হাতে শিল্পীর তুলিতে এঁকেছেন একান্ত মনে। তাঁর কবিতায় বাদ যায়নি গ্রীষ্মের খরতাপের একটু প্রশান্তি বেগুনি আভার জারুল ফুলও।

চির সবুজ ক্যাম্পাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট  গাছের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। মেহেগুনি, আম, নারিকেল, জাম, কাঁঠাল, লিচু ছাড়াও অন্যান্য গাছের এর মধ্যে রয়েছে রাধা চুড়া, কৃষ্ণ চূড়া, গগণ শিরিষ, বাদাম, শিমুল, আকাশমণি, বহেরা, আমলকি, হরিতকি, বন কাঠালি, কাঠ বাদাম, তমাল, হিজল, কামরাঙা, বেল, করমচা, হরিফল, লটকন, বিলাতি আমড়া, কাগজি লেবু, মালটা, কদবেল, জলপাই, পলাশ, জামরুল, সফেদা, রক্তকাঞ্চন, ডুমুর, চালতা, ছাতিম, খয়ের গাছ, বইচি ফল, কামিনী, নাশপাতি, আমড়া, শিশু গাছ, দেবদারু, আকন্দ, অশ্বত্থ বা পাকুর, জারুল সহো বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোস্তফা তারিকুল স্যার একদিন হঠাৎ একটি কবিতা লিখে শোনালেন, কবিতাটির নাম ছিলো ‘জারুল স্ট্রীট’ ৷ মূলত প্যারিস রোড হতে মমতাজ উদ্দিন ভবনের পাশ দিয়ে ইবলিশ চত্বরের বুক চিরে পশ্চিম পাড়া অবধি রাস্তাটি হলো জারুল স্ট্রীট ৷ গ্রীষ্ণের শুরুতেই এই রাস্তার দুই পাশে অবস্থিত অসংখ্য জারুল বৃক্ষ প্রস্ফুটিত ফুলের বেগুনি রংয়ের আভা ছড়িয়ে ক্যাম্পাসকে মোহনিয় করে তোলে ৷ পথিক অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রয় প্রকৃতির চোখ জুড়ানো অপার সৌন্দর্য্য অবলোকনের জন্য ৷ এছাড়া সারা ক্যাম্পাস জুড়েই জারুল গাছ দেখা যায়, কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সামনে, টিএসসিসির পাশে, বিজ্ঞান ভবনগুলোর সামনে, হলগুলোর আশেপাশে জারুল ফুলের রঙিন বেগুনী মায়াবি মনোমুগ্ধকর আবেশে পথচারির মন কেড়ে নেয় ৷ মিরাক্কেল খ্যাত সাবেক শিক্ষার্থী বন্ধুবর আবু হেনা রনিকে অনেক দেখেছি জারুল গাছের চড়ে মগডালে শুয়ে শুয়ে বাউল গান গাইতে ৷ আসলে ফুল পবিত্রতা ও সন্ধির প্রতিক তাই শিল্পীর উচাটন মন ঘরে রয়না মিশে যেতে চায় পরম করুণাময়ের সৃষ্টির লীলাভূমিতে ৷

জারুল ফুল বেগুনি ঠিক নারীর মতো, স্বাতন্ত্র্য, কৌতূহল ও দূরদর্শী চিন্তাভাবনার। অতিবেগুনি রশ্মিকে যেমন জানার অনেক বাকি আছে ঠিক তেমনি নারীর সমতা আদায়ে সচেষ্ট সব মানুষের। নারী অধিকারকর্মীরা মনে করেন, নারী যদি তার স্বাতন্ত্র্য দিয়ে সামনে এগিয়ে আসতে পারে, তবে পৃথিবীও পাবে নতুন কিছু। এখান থেকেই বেগুনি নারী দিবসের সঙ্গে মিলেমিশে যায়। তবে নীল ও লালের মিশ্রণের এই রঙের ব্যাপকতা আরো বেশি। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যারা কাজ করেছে, তারা বেগুনিকে আরো বহুবার ব্যবহৃত করেছে সমানাধিকারের প্রতীক হিসেবে।

জারুলের আদি নিবাস শ্রীলঙ্কায়। ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব বৃক্ষ জারুল। তবে বাংলদেশসহ চীন ,মালয়েশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে এ বৃক্ষের দেখা মেলে। নিম্নাঞ্চলের জলাভূমিতেও এটি ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে, তবে শুকনো এলাকাতেও এদের মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় না।

গ্রীষ্মের শুরুতে এ ফুল ফোটে ও শরৎ পর্যন্ত দেখা যায়। ফুল শেষে গাছে বীজ হয় ও বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে। এ গাছ সাধারণত ১০ থেকে ১৫ মিটার উঁচু হয়। জারুল কাঠ লালচে রঙের, অত্যন্ত শক্ত ও মূল্যবান। ঘরের কড়ি-বড়গা, লাঙ্গল, আসবাবপত্র ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। জারুল গাছের অনেক ভেষজ গুণাগুণ রয়েছে। এর বীজ, ছাল ও পাতা ডায়াবেটিস রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও জ্বর, অনিদ্রা, কাশি ও অজীর্ণতায় জারুল গাছের ছাল অনেক উপকারী।

পরিশষে কবি সাদাত হোসাইনের কথায় বলতে হয় –

তোমায় দিলাম অযুত জারুল ফুল

তোমায় দিলাম হিজল ফুলের বন

রোজ নিশিথে একলা থাকার কালে

আমায় দিও খানিক তোমার মন।

 

আমায় দিও একটুখানি ছায়া

একটু দিও শান্ত শীতল জল

তোমার জন্য বুকের ভেতর তবু

সাত সাগরের অশ্রু টলমল…॥

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x