ঢাকা, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:৪৬ অপরাহ্ন
বৃষ্টিস্নাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ‘প্যারিস রোড’
Reporter Name

ভাস্কর সরকার (রাবি প্রতিনিধি): রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ‘প্যারিস রোড’ হাজারো শিক্ষাথীের্দর গান, গল্প, প্রেম, ভালোবাসা ও নানা আন্দোলন জড়ানো স্মৃতির নাম ‘প্যারিস রোড’। ফ্রান্সের নয়, এটা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ‘প্যারিস রোড’। দু’ধারের সুউচ্চ গগণশিরিষ গাছ ও পিচঢালা পথ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য। প্রায় ৫০ বছরের বেশি পুরনো এই ‘প্যারিস রোড’। আজ সন্ধ্যার বৃষ্টির পর প্যারিস রোড যেনো সেজেছে দৃষ্টিনন্দন অপরূপ সাজে ৷

ভোরে অলসতার ঘুম এবং একই সময়ে প্রকৃতির প্রথম রূপ দেখা; দুটোই দুই রকমের প্রশান্তি। তবে নগরজীবনের এই নানা ব্যস্ততায় প্রকৃতির অপূর্ব লীলা দেখার সময় মেলে কমই। তারপরও মানুষ প্রকৃতিতে মিশতে চায়, হারিয়ে যেতে চায় তার ভালোবাসায়, একটুখানি ভালো থাকার নেশায়।

আর এই গ্রীষ্ণে বৃষ্টিস্নাত প্যারিস রোডে হাঁটার অনুভূতি যেনো অন্যরকম। রাস্তার দুই পাশে সুউচ্চ গগণশিরিষ গাছ; যেন রাস্তার দিন-রাত্রীর প্রহরী। অনেকটা উপরে গিয়ে ডালপাল মেলেছে চারপাশে। দু’পাশের গাছের ডালপালা রাস্তার মাঝে শূন্যে আলিঙ্গন হওয়ার নেশায় ব্যকুল। এ যেন প্রকৃতির শরীরী খেলা। গাছের চিরচিরে ঘন পাতা রাস্তায় মেলে ধরেছে এক লম্বা সামিয়ানা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট থেকে আবাসিক শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হল পযর্ন্ত এই দৃশ্য চোখে পড়ে।

এই বৃষ্টির দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেচে-গেছে, হৈ-হুল্লোড়, ছুটাছুটি করে নিজেদের ভিজিয়ে নিতে এখনো বেছে নেয় এই প্যারিস রোডকেই। এই রাস্তা কারোর জীবনের ভালোবাসার সূচনা, কারো জীবনের সফলতার স্মৃতি হয়ে থাকা ছবির ফ্রেম। এই রাস্তাকে ঘিরে এখানকার পড়ুয়া ছাত্রদেরও গবের্র শেষ নেই। গলা ফাটিয়ে অন্যদের শোনায় ‘এমন সৌন্দযের্র প্রতিমা ‘প্যারিস রোড’ বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।’ শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নয়, প্রতিবছর প্রচুর দর্শনার্থী দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে, কেবল এই প্যারিস রোডে হাঁটবে বলে!

আমাদের মনে কৌতুহল জাগে, এই রাস্তাটির নাম প্যারিস রোড কেন? একটু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাজারো স্মৃতি বয়ে বেড়ানো এই রাস্তাটির নামকরণে আছে ছোট একটি ইতিহাস। ১৯৬৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও মনোরম করে তোলার জন্য তৎকালীন উপাচার্য এম শামসুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেন। তিনি এ দায়িত্ব দেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগকে।

উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা এবং তৎকালীন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী মো. ইউনুস পকিস্তানের লাহোর থেকে বিমানযোগে এই গাছগুলো ঢাকায় নিয়ে আসেন। গাছগুলো মূলত বিদেশি; এর বাংলা নাম গগণশিরিষ৷  অধ্যাপক ইউনুসের নেতৃত্বে লাগানো হয় এই গাছগুলো। তবে এ গাছগুলো লাগানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তৎকালীন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. মো. মোজাহেদ হোসেন ও অধ্যাপক এটিএম নাদেরুজ্জামান। গাছগুলো রোপণের কিছু দিনের মধ্যেই সবার নজর কাড়তে শুরু করে।

কিন্তু এ তো গেল এই গাছগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে আনার গল্প; কিন্তু এই রাস্তার নাম ‘প্যারিস রোড’ হলো কেমন করে? আসলে প্রথম দিকে এর নাম প্যারিস রোড ছিল না। নামের প্রচলনটা মূলত শুরু হয় ৮০’র দশকের পর থেকে। জনৈক এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বলেন, আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন সিনেমাহলে গিয়ে রোড টু সোয়াদ, রোড টু প্যারিস নামের চলচ্চিত্রগুলো বন্ধুরা মিলে খুব মজা করে দেখতাম। সেখানে দেখতাম, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এই রাস্তার মতো ওই চলচ্চিত্রগুলোতেও চওড়া আর দু’ধারে গাছে ঢাকা রাস্তা। যেখান থেকে আমাদের মনে ধারণার সঞ্চার হয়, এই রাস্তার সঙ্গে প্যারিসের এই রাস্তার সঙ্গে মিল আছে। তারপর থেকেই এই রাস্তার নাম প্যারিস রোড হিসেবে মানুষের মুখে মুখে ফেরে। যেই নামের ভার গৌরবের সাখে এখনো বয়ে বেড়াচ্ছে দু’ধারের গগনশিরিষ গাছ এবং পিচঢালা রাস্তাটি।

তবে প্যারিস রোডের দু’পাশঠাসা গগণশিরিষ গাছের দৃশ্যের কিছুটা বিপর্যয় ঘটেছে গত কয়েক বছর ধরে। বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশকিছু গাছ ভেঙে পড়ে; বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষও নানা অযুহাতে বিভিন্ন সময় গাছ কেটে ফেলেছে। ফলে ঘন আটা পাতার শামিয়ানায় কয়েক জায়গা ছিঁড়ে পড়েছে। তবে সার্বিক বিপর্যয় উৎরিয়ে প্যারিস রোডের সৌন্দর্য্য অক্ষুন্ন থাকবে এমনটাই আশা। এই প্যারিস রোড আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য। যে ঐতিহ্য আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে। প্যারিস রোড বেঁচে থাকবে অন্ততকাল, আমাদের মনে-প্রাণে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে।

One response to “বৃষ্টিস্নাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ‘প্যারিস রোড’”

  1. … [Trackback]

    […] Find More Info here to that Topic: doinikdak.com/news/17363 […]

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x