ভাস্কর সরকার (রাবি প্রতিনিধি): গত বছরের ৮ মার্চ করোনা শনাক্তের পর ওই বছরের ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আগামী ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৭ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও নতুন দফায় আগামী ২৯ মে পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের বন্ধ বাড়িয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ধাপে-ধাপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বৃদ্ধি করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনেও জন্ম দিয়েছে নানা ক্ষোভের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হতাশা, ক্ষোভ এমনকি আন্দোলনে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান নুর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, এবার যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ে, তাহলে হয়তো ১ লা জুলাই অবধি বন্ধ থাকবে, তারপর ২৬-২৮ জুনের মধ্যে বলবে আর কয়েকটা দিন পর কোরবানির ঈদ, তার পরেই খুলবে, ঈদের পর করোনা আবার বেড়ে যাবে তখন বলবে আরও একমাস লকডাউন দেওয়া হোক! এভাবে আগস্টের শেষ অবধি ছুটি চলবে!! আবার সেপ্টেম্বরে হঠাৎ করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাবে, তাই আবার একমাস বন্ধ, অক্টোবরে দূর্গা পূজায় আবার করেনা বেড়ে যাবে, তখন আবার একমাস বন্ধ, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী ২০২২ শীতকালে করোনা সংক্রমণের ঝুকি বেশি, তখন আবার বন্ধ।
আবদুল হামিদ নামের আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, এবছর কি ক্যাম্পাস খোলা কোনো সম্ভাবনা আছে?? জানাটা খুবই জরুরি না খুললে দীর্ঘ মেয়াদি চাষ আবাদ শুরু করবো। এভাবে আর কতদিন বসে থাকবো তাই না??
হতাশা ব্যক্ত করে নাফিয়ুল ইসলাম লিখেছেন, ইতিহাসের সেরা মিথ্যা আশ্বাস, ১৭মে আবাসিক হল খোলা হবে,২৪মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস পরীক্ষা চালু হবে। এর আগে ভ্যাক্সিনেশন সম্পন্ন হবে।ওরে বাটপার!
আমান উল্লাহ আমান, লিখেছেন, ক্যাম্পাস খুলে দিন দ্রুত। এর আগে শিক্ষার্থীদের ভংচং বুঝিয়েছেন। কিন্তু, প্রায় দুই বছর আমরা পড়াশোনার বাইরে।আর কোনো ভংচং নয়। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন রাজপথে নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী রেজাউল আহমেদ লিখেছেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দিকে যেতে দিতে পারিনা। শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ভংচং আর নয়। ২৯ তারিখের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে না দিলে আমরা আন্দোলনে যাবো। আপনারা প্রস্তুত আছেন তো??
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন বিভাগের শিক্ষার্থী সামিরুন সানা লিখেছেন, শ্রদ্ধেয় প্রক্টর স্যার, পরীক্ষা বন্ধের প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আপনি ৭ দিনের সময় নিয়েছিলেন। এই ৭ দিনের ভিতরে আপনারা সিদ্ধান্ত নিবেন এই আশ্বাসও দিয়েছিলেন। সেই ৭ দিন কি শেষ হয়েছে??যদি শেষ হয়ে থাকে তাহলে কি সিদ্ধান্ত হলো? অগ্রিম ধন্যবাদ
শিক্ষার্থীদের এসব দাবির সাথে একাত্ম অধিকাংশ শিক্ষকই। বিশ্ববিদ্যালয় সিনিয়র অধ্যাপকরা ক্যাম্পাস খোলার পক্ষেই মত দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুর রহমান লিখেছেন, মাননীয় মহোদয়গণরা…অনির্দিষ্টকালের প্যানডেমিকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ানো আখেরে সমাধান নিয়ে আসবে কি? আমার মনে হয় না ! তাই শিক্ষাক্ষেত্রে দ্রুত আবশ্যিক বিকল্প পদ্ধতি হাতে নিয়ে দেশের শিক্ষাক্ষেত্র তথা জাতিকে বাঁচান ! শিক্ষাক্ষেত্রে ক্ষতির মাত্রা বুঝতে চাইলে মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীদের উপর গবেষণা করে দেখতে পারেন…আমার মনে হয়, গবেষণার ফল আপনাদেরকে বিপর্যস্ত এবং অত্যান্ত হতাশ করবে ! পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপর্যয়ের কথা কি আর বলবো ! গতকাল দেখলাম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অর্থ সংকট ও ছাত্র সংখ্যা দ্রুত কমে (৪০-৬০%) যাওয়ার রিপোর্ট !
শিক্ষাক্ষেত্রে যে ক্ষতি অলরেডি হয়ে গেছে তা পোষাতেই আমাদের অনেক বছর হিমশিম খেতে হবে ! এর চেয়ে বেশী ক্ষতি জাতি নিতে পারবেনা !
বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় একদিকে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার কার্যক্রমের বেহাল দশা অন্যদিকে, শিক্ষার্থীরা বাসায় থেকে নানামুখী মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ খুলে দেয়া সম্ভব। সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সবার প্রতি দাবি থাকবে ক্যাম্পাসগুলো যাতে খুলে দেয়া হয়।
চলমান লকডাউন নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, বর্তমানে কার্যকর কোন লকডাউন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। অন্যদিকে সবার মাঝে একটা আতঙ্ক বিরাজ করছে ভীতিকর এক পরিস্থিতিতে যেটা সুস্থ সবল থাকার ক্ষেত্রেও অন্তরায়।