ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আমাদের আদালত সাংবাদিকতায় এখনো কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে সে সব সীমাবদ্ধতাকে সঙ্গী করেই আমরা আদালত অঙ্গনের চলমান বিষয়গুলোকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদে রূপ দেই। আলোচিত কোনো মামলার রায় বা আদেশ জানতে পাঠক, দর্শক ও শ্রোতা যেমন উদগ্রীব হয়ে চোখ রাখেন গণমাধ্যমে, ঠিক তেমনি পাঠক তথা জনগণের কৌতুহলের জায়গা তৈরি হয় আদালতে চলা মামলার শুনানিকালীন বক্তব্য জানতে। তাদের এই কৌতুহল কিংবা তথ্য প্রাপ্তির প্রত্যাশা পূরণে সচেষ্ট হয় গণমাধ্যম। তাই বিষয়বস্তুর গুরুত্ব বিবেচনা করে আমরা গণমাধ্যমকর্মীরা আদালতের বিচারক-আইনজীবী কিংবা মামলার পক্ষ-বিপক্ষের বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশ করি।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে, আদালতে শুনানিকালীন বক্তব্য কিংবা মন্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশের পর অনেক ক্ষেত্রে আমাদের দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়। অনুরাগ-বিরাগের এক ‘প্রচ্ছন্ন ভয়’ আমাদের চিন্তার জগতে ভর করে। দেশের উচ্চ আদালতে মাঝে মাঝেই কথা উঠে শুনানিকালীন বক্তব্য ধরে সংবাদ প্রকাশ করা নিয়ে। বিজ্ঞ বিচারকেরা এবং আইনজীবীরা প্রশ্ন রেখে মাঝে মঝে বলে থাকেন যে, মামলার শুনানিতে আদালতে অনেক ধরনের কথা কিংবা মন্তব্য হতে পারে। সব কথা কেন মিডিয়ায় চলে আসবে?। তবে সাংবাদিকতার ‘এইসময়ে’ যতটুকু আমরা লিখছি বা প্রকাশ করছি সে বিবেচনায় বলা যায়; আমাদের আদালত বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ‘উদার’ ভূমিকাই দেখিয়েছেন।
আদালত সাংবাদিকতায় আমাদের উপলব্ধিকে ছাপিয়ে মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের দিনে প্রশংসনীয় এক ভাষ্য এলো ভারতের সুপ্রিম কোর্ট থেকে। লাইভ ল’ অনলাইনের খবর অনুযায়ী সোমবার বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি এমআর শাহ’র সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ এক মামলার শুনানিতে বলেছেন, ‘মামলার শুনানি পর্যায়ে বিচারকের মৌখিক বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশে বাধা থাকতে পারে না।আদালতের মধ্যকার আলোচনা জনস্বার্থেরই বিষয়। এক্ষেত্রে বিচারক ও আইনজীবীর মধ্যে চলা সংলাপের মাধ্যমে বিচারিক প্রক্রিয়া কীভাবে উদ্ঘাটিত হচ্ছে তা জনগণের জানার অধিকার রয়েছে।’
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এই বেঞ্চ আরো বলেন, ‘আদালতের মধ্যকার আলোচনা নিয়ে প্রতিবেদন হলে তা বিচারকদের জন্য আরও জবাবদিহিতা এনে দেবে এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতি নাগরিকদের আস্থা বাড়িয়ে তুলবে।’
চূড়ান্ত আদেশের আগে বিচারকদের মৌখিক বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ বন্ধে ভারতের নির্বাচন কমিশনের করা আবেদনে আপত্তি জনিয়ে আজ এই সুপ্রিম কোর্ট বেঞ্চ বলেন, ‘আদালতের মৌখিক পর্যবেক্ষণ জনস্বার্থেই করা হয়। পর্যবেক্ষণগুলো প্রায়শই হয় ক্ষোভ বা হতাশার বহিঃপ্রকাশ। কখনও কখনও যা ‘তেতো ওষুধ- এর মতো কাজ করতে পারে।’
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এই ভাষ্য অবশ্যই প্রশংসনীয়। দেশে দেশে স্বাধীন সংবাদিকতার অগ্রযাত্রায়, বিশেষ করে আদালত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এই ভাষ্য প্রতিষ্ঠিত রূপ পাক সেই প্রত্যাশা নিরন্তর।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)
নিউজ সোর্সঃ ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ভাষ্য প্রশংসনীয়
… [Trackback]
[…] Here you will find 41136 more Info to that Topic: doinikdak.com/news/12438 […]
… [Trackback]
[…] There you will find 80976 more Info to that Topic: doinikdak.com/news/12438 […]
… [Trackback]
[…] Here you can find 31113 more Information on that Topic: doinikdak.com/news/12438 […]
… [Trackback]
[…] Read More here on that Topic: doinikdak.com/news/12438 […]