ঢাকা, মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ১২:৫২ অপরাহ্ন
মুসলিম নববধূকে হিন্দু বাবা-মায়ের কাছে তুলে দিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা
Reporter Name

আর জে শান্ত,ভোলা: ভোলার দৌলতখানের কামরুল ইসলামের সদ্য মুসলিম হওয়া স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউসকে হিন্দু বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। গত বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) উপজেলার চরখলিফা ইউনিয়নের দিদার উল্যাহ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

কামরুল ইসলাম ওই গ্রামের দিনমজুর আলী হোসেনের ছেলে।

কামরুল জানায়, ২ বছর আগে ঢাকার গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার নীলের পাড়ায় একটি ফ্যান ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে গিয়ে ওই ইউনিয়নের সংকর চন্দ্র মন্ডলের মেয়ে শ্রাবন্ত্রী মন্ডলের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়।’

কামরুল ইসলাম আরো জানান, আমাদের প্রথম পরিচয় যখন হয় তখন শ্রাবন্তী অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। যখন ২ বছর প্রেমের সর্ম্পক চলছিল তখন জানাজানি হলে তার লেখাপড়া বন্ধ করে দেয় পরিবার। আমি চট্টগ্রামে চলে যাই। সেখানে একটি জাহাজে চাকরি নেই।

সর্বশেষ ১৪ এপ্রিল শ্রাবন্তি আমার সঙ্গে চলে আসেন দৌলতখানে। ১৫ এপ্রিল নোটারির মাধ্যমে ইসলামধর্ম গ্রহণ করে সে। তার নতুন নাম দেওয়া হয় জান্নাতুল ফেরদৌস। পরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দৌলতখানে ফিরে আসে। গত শুক্রবার স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা কালাম তুফানি ও আলাউদ্দিন মৃধা সহ আরও কিছু সহযোগী মিলে জোরপূর্বক নববধূকে হিন্দু বাবার হাতে তুলে দেয়। এ সময় ওই নববধূর চিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। ওইদিন রাতের দিকে নববধূর কান্নার আহাজারির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওটি মুহূর্তের মধ্যেই ফেইজবুকে ভাইরাল হলে নিন্দার ঝড় উঠে। এ নিয়ে অনেকের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বর্তমানে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দৌলতখানে চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়।’

অন্যদিকে শ্রাবন্ত্রী মন্ডল তার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর তার বাবা শংকর চন্দ্র মন্ডল বাদি হয়ে গত ১২-০৪-২০২১ইং তারিখে গাজীপুর মহানগর নীলেরপাড়া থানায় একটি অপহরণের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৮-০৪-২০২১ জিএমপি, সদর থানায় মামলা নং-১৬, ধারা- ২০০০ সনের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭/৩০ মামলাটি রুজু করা হয়। তার প্রেক্ষিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো: লুৎফর রহমান গত ২৩-০৪-২০২১ইং তারিখে ভিকটিম শ্রাবন্তী রানী মন্ডলকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। এঘটনায় শ্রবন্ত্রী মন্ডলের কান্নার আহাজারির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই ভিডিওটি ফেইজবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, শ্রাবন্ত্রী মন্ডল ওরফে জান্নাতুল ফেরদাউস কান্না জড়িত কন্ঠে উপস্থিত সবাইকে বলছিল, সে তার বাবা মায়ের কাছে যাবেনা। কামরুল তার স্বামী তার কাছেই থাকবে। তখন ৩/৪জন লোক ঘর থেকে জান্নাতুল ফেরদাউসকে দস্তাধস্তি করে উঠিয়ে নিয়ে আসে। যা খুবই আপত্তিজনক। ঘর থেকে নও মুসলিম জান্নাতুল ফেরদাউসকে বাহিরে নিয়ে আসলে তখন সে গিয়াস উদ্দিন নামে এক মেম্বারের পা-ধরে কান্না করে। তার কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠলেও মন গলেনি স্থানীয় কারও। কামাল তুফানিসহ স্থানীয় একটি মহল জোর জবরদস্তি ও টানাহেচড়া করে ওই মেয়েকে গাড়িতে তুলে দেয়। মেয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে তার বাবার বাড়িতে যাবেনা বলে এবং স্বামী কামরুল ইসলামের বাড়িতে থাকবে বললেও তার এ কথায় কারো মন গলেনি।’ তবে নও মুসলিম জানাতুল ফেরদাউসকে তার হিন্দু পরিবারের কাছে তুলে দিতে কামাল তুফানিসহ একটি প্রভাবশালী মহলকে মোটা অংকের টাকা দিয়েছে বলে অনেক ধারনা করছেন।

এঘটনায় দৌলতখানের নও-মুসলিম মেয়েকে তার স্বামী বাড়ির থেকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়ার প্রতিবাদে নিন্দা জানিয়েছেন ইশা আন্দোলন ভোলা উত্তর শাখা সহ স্থানীয় সামাজিক সংগঠন গুলো।

অন্যদিকে নও-মুসিলিম মেয়েকে তার স্বামীর বাড়ি থেকে হিন্দু বাবা মায়ের কাছে তুলে দিলে সোমবার ৫টার দিকে উপজেলার মিয়ারহাটের সর্বস্থরের জনগন নামে একটি ব্যানারে জোরপূর্বক কালাম তুফানি ও তার সহযোগীরা টাকার বিনিময়ে হিন্দু পরিবারের কাছে  তুলে দেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও গণঅবস্থান করেন। এতে ওই এলাকার শত শত লোক অংশগ্রহণ করেন।

অন্যদিকে কামরুল ইসলাম জানান, ‘আমি যদি অপহরণ করে থাকতাম আমার স্ত্রীকে নিয়ে আমি লুকিয়ে থাকতাম। তাকে নিয়ে সালিশে যেতাম না। আমার স্ত্রী সবার সামনে চিৎকার করে বলছে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে। তারপরও কেউ তাদেরকে সাহায্য করতে আসেনি। কামরুল দাবি করেন তার স্ত্রীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। তাকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়া হয়েছে। কামরুল ইসলাম তার বিবাহীত  স্ত্রী নওমুসলিম জান্নাতুল ফেরদাউসকে ফিরে পেতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।

এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ও দৌলতখান থানা পুলিশ জানান, দৌলতখান চরখলিফা ইউনিয়নের দিদারউল্লাহ গ্রামের মো: আলী হোসেনর ছেলে কামরুল সাথে সনাতন ধর্মাম্বলীর মেয়ে শ্রাবন্তী রানী মন্ডলের প্রেমের সম্পর্ক হয় এবং এই কারণে তাকে কামরুল ইসলাম  নিয়ে আসে। পরবর্তীতে মো: কামরুল ইসলাম শ্রাবন্তী রানী মন্ডলের বয়স সংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য দিয়ে মোকাম ভোলা নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে। কিন্তু ভিকটিমের জন্ম ও পিএসসির সনদ অনুযায়ী জন্ম তারিখ ০৫-০২-২০০৬খ্রি:। সেই হিসাবে তার বর্তমান বয়স ১৫ বছর ০২ মাস। এইরুপ অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে হিন্দু ধর্ম হইতে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরীত করা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে বয়স বেশী দেখাইয়া মোকাম ভোলা নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে বিবাহ করা আইন সিদ্ধ নয়। এই বিষয়ে সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশ।

দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বজলার রহমান জানান, ‘ভিকটিমের জন্ম ও পিএসসির সনদ অনুযায়ী জন্ম তারিখ ০৫/০২/২০০৬খ্রি:। সেই হিসাবে তার বর্তমান বয়স ১৫ বছর ০২ মাস। পরে তাকে উদ্ধার করা হয়। তবে কেউ যদি এ ঘটনায় বাণিজ্য করে থাকে অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

One response to “মুসলিম নববধূকে হিন্দু বাবা-মায়ের কাছে তুলে দিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা”

  1. … [Trackback]

    […] Find More on that Topic: doinikdak.com/news/10170 […]

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x