ঢাকা, শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ১২:৫৭ অপরাহ্ন
দেশে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েই চলেছে
Reporter Name

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বর্তমানে দেশের প্রত্যেকটি সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েই চলেছে।

দেশে বর্তমানে দৈনিক চাহিদা ১৮০ টন অক্সিজেন, দ্রুত চাহিদা বাড়ায় ঘাটতি থাকছে দৈনিক প্রায় ৬৫ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বহুজাতিক অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বাংলাদেশ উৎপাদন ও সরবরাহ করছে ৯০ মেট্রিক টন এবং স্পেক্ট্রা নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের দৈনিক গড়ে সরবরাহ করছে ২৪ দশমিক ৫ মেট্রিক টন।

ভারত থেকে আমদানির পাশাপাশি দেশের আট বিভাগে অক্সিজেন প্ল্যান্ট নির্মাণের নতুন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। আশা করছি কোনো বড় ধরনের সংকট হবে না।

নতুন অক্সিজেন প্ল্যান্ট করার প্রস্তাব লিন্ডের
নতুন অক্সিজেন প্ল্যান্ট করার প্রস্তাব দিয়েছে লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড নামের একটি বহুজাতিক অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্ল্যান্টটি করতে কমপক্ষে ৯ মাস সময় লাগবে। তবে নারায়ণগঞ্জে তাদের একটি ট্যাংক রয়েছে যেটিতে ৯ মেট্রিকটন অক্সিজেন মজুদ রাখা সম্ভব। বর্তমান ঘাটতি মেটাতে তারা লিন্ডে ভারতের কাছ থেকে প্রতি সপ্তাহে ৫০ থেকে ৮০ টন অক্সিজেন আনছে। যে ট্যাংকারের মাধ্যমে অক্সিজেন আনা তার প্রত্যেকটি ধারণ ক্ষমতা সাড়ে ৪ টন থেকে ১৪ টন।

লিন্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে দুটি অক্সিজেন উৎপাদন প্ল্যান্ট রয়েছে। এই দুটি প্ল্যান্টে প্রতিদিন যথাক্রমে ৭০ মেট্রিক টন এবং ২০ মেট্রিক টন করে মোট ৯০ মেট্রিক টন অক্সিজেন উৎপাদন করা হয়। এছাড়া স্পেক্ট্রা আমদানি ও উৎপাদনের মাধ্যমে ২৪ দশমিক ৫ মেট্রিক টন অক্সিজেন উৎপাদন করে থাকে। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের দৈনিক অক্সিজেনের চাহিদা ১০ থেকে ১৫ মেট্রিক টন। বাকি অক্সিজেনের বেশিরভাগ চাহিদা কোভিড চিকিৎসায় যুক্ত হাসপাতালগুলোতে। পাশাপাশি অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালেও সরবরাহ করা হয়।

অক্সিজেন নিয়ে শঙ্কার কারণ নেই
দেশে এই মুহুর্তে অক্সিজেন নিয়ে শঙ্কার কোন কারণ নেই বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিব) মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ।

ডা. এম এ আজিজ

বলেন, ভারত নিজেরাই অক্সিজেন তৈরি করে, আবার রপ্তানিও করে। তারপরেও সেখানে অক্সিজেনের শঙ্কট। অক্সিজেনের অভাবে সেখানে রোগী মারাও যাচ্ছে। আমদের দেশে চার পাঁচটি প্রতিষ্ঠান আছে যারা অক্সিজেন উৎপাদন করে, ২০ শতাংশের মতো আমদানি করতে হয়। বর্তমানে দেশের হাসপাতালগুলোতে করোনার রোগী ও দেশের সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। এই মুহুর্তে দেশে যে পরিমাণ অক্সিজেনের চাহিদা আছে তা স্বয়ংসম্পূর্ণ। এই মুহুর্তে অক্সিজেন নিয়ে শঙ্কার কারণ নেই।

ডা. আজিজ বলেন, প্রাথমিকভাবে সবার জন্য অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা কিংবা আইসিইউর মতো জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ২০ হাজার ৯৩১, সেন্ট্রাল অক্সিজেন ১৩৪
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সী অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম (এমআইএস) সূত্রে জানা যায়, আজ দুপুর ১২ টা পর্যন্ত সারা দেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ২০ হাজার ৯৩১, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার সংখ্যা এক হাজার ৫৫৩টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের সংখ্যা এক হাজার ৩৩৫টি। এছাড়াও সারা দেশে ১৩৪টি প্রতিষ্ঠানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন রয়েছে।

ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েছে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া ‘ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ থেকে ১৫ শতাংশ অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ে, তারপরেও আমাদের সমস্ত হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের চাহিদা ঠিকমতো চলছে। ভারতের মতো অবস্থা এখনো হয়নি। যদি আমাদের রোগীর সংখ্যা কমে যায় তাহলে আমরা অক্সিজেন ঘাটতিতে পড়বো না।’

ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া

তিনি বলেন, ‘‘আগে যে অক্সিজেনের চাহিদা ছিল, তা কোভিড এসে বাড়িয়েছে। গত কয়েক মাসে হুট করেই কোভিড আবার দ্বিগুণ গতিতে বেড়ে যায় তারপরও আমরা বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের দেশের সকল সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালগুলোকে নিরবচ্ছিন্নভাবে অক্সিজেন চাহিদা মেটাতে পারছি।’’

প্রতিটি বিভাগে নিজস্ব অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানোর চেষ্টা
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমাদের দেশে যে কয়টা প্রতিষ্ঠান আছে তারা শতভাগ ধারণক্ষমতায় চলছে তারপরও কুল পাচ্ছে না। আমরা তাদের অ্যালাউ করছি ইন্ডিয়া থেকে ইনপুট করার জন্য। নিজস্ব অক্সিজেন প্ল্যান্ট প্রতিটি বিভাগে বসানোর জন্য আমরা চেষ্টা করব।’

জাহিদ মালেক বলেন, ‘শুরুতে আমাদের হাসপাতালগুলোতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ছিল না। এখন আমরা ১০০টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন দিয়েছি। আরও ৩০টি সেন্ট্রাল অক্সিজেনের কাজ শেষ পর্যায়ে। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালকেই সেন্ট্রাল অক্সিজেনের আওতায় আনা হচ্ছে।’ নিউজ সোর্স

One response to “দেশে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়েই চলেছে”

  1. … [Trackback]

    […] Here you can find 40087 additional Info on that Topic: doinikdak.com/news/9641 […]

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x