ঢাকা, মঙ্গলবার ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:০৬ অপরাহ্ন
আহমদ শফীর মৃত্যুর পর সংকটে ১২০ বছরের পুরনো হাটহাজারী মাদরাসা
Reporter Name

প্রায় ১২০ বছরের পুরনো দেশের কওমি অঙ্গনের সবচেয়ে আলোচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসা‘ নিয়ে দেশের ভেতরে-বাইরে ষড়যন্ত্র চলছে বলে মাদরাসাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে কী ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সেটি পরিস্কার করেনি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। করোনা মহামারির কারণে অনুদানের টাকায় চলা মাদরাসাটি আর্থিক সংকটে পড়েছে বলেও জানানো হয়েছে।

বুধবার (২১ এপ্রিল) মাদরাসার পরিচালনা পরিষদ, শিক্ষা পরিচালনা কমিটি ও সকল শিক্ষকের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো ‘বিশেষ আবেদন’ শীর্ষক বিজ্ঞপ্তিতে এসব বিষয় বলা হয়েছে। মাদরাসার পরিচালনা পরিষদ প্রধান আব্দুচ্ছালাম চাটগামী এই বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন।

উল্লেখ্য, দীর্ঘসময় ধরে মাদরাসার মহাপরিচালক পদে থাকা বর্ষীয়ান ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব শাহ আহমদ শফী গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি ঈমান-আকিদাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমীর ছিলেন। শফীর জীবদ্দশায় হেফাজতে ইসলাম ও মাদরাসার কর্তৃত্ব নিয়ে তার সঙ্গে সংগঠনটির মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এমনকি জীবনের একেবারে শেষসময়ে আহমদ শফী ওই মাদরাসায় ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভেরও মুখোমুখি হন। নির্যাতনের মাধ্যমে মৃত্যু ঘটনোর অভিযোগ এনে আহমদ শফীর পরিবারের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় বাবুনগরীসহ ৪২ জনকে অভিযুক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)

আহমদ শফীর অবর্তমানে শুরা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জুনায়েদ বাবুনগরী এখন ওই মাদরাসার শিক্ষা সচিব ও প্রধান শায়খুল হাদিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এদিকে গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে বের করা মিছিল থেকে হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্ররা পুলিশের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়ান। গ্রেফতার হয়েছেন বেশ কয়েকজন হেফাজত নেতা। হেফাজতে ইসলামের মূল কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত মাদরাসাটি এভাবে বিভিন্ন ইস্যুতে কয়েক দশক ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে।

এই প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, ‘অত্যন্ত ভারাক্রান্ত ও দুঃখের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বলতে হচ্ছে, দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ১২০ বছর পর কিছু আদর্শচ্যুত ও স্বার্থান্বেষী দুষ্কৃতকারী দেশের ভিতরে এবং দেশের বাইরে থেকে এই মাদরাসার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সবার কাছে আমাদের বিশেষ আহ্বান, আল্লাহ না করুন, যখনই আপনারা শুনবেন আপনাদের প্রিয় এই উম্মুল মাদারিস দুষ্কৃতকারীদের কোন ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে, তখনই আপনারা স্ব স্ব অবস্থান থেকে সহযোগিতায় তাৎক্ষণিকভাবে এগিয়ে আসবেন। এই প্রতিষ্ঠান কওমের তথা আপনাদের। দুষ্কৃতকারীদের যে কোন ষড়যন্ত্র থেকে প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করাও আপনাদের দায়িত্ব।

অপরদিকে দুষ্কৃতকারীদের প্রতিও আমাদের সুস্পষ্ট সতর্কবার্তা, ষড়যন্ত্র বন্ধ করুন। অন্যথায় আল্লাহর ইচ্ছায় ঘৃণিত ও লাঞ্ছিত হয়ে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন।’

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বর্তমানে মাদরাসায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ১০০ জন। প্রায় আট হাজার শিক্ষার্থী এতে পড়ালেখা করছেন। এর মধ্যে ৪ হাজার ৭০০ জন গরীব, এতিম ও মেধাবী ছাত্রকে বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর্থিক অনুদান এবং সাহায্য-সহযোগিতায় এই মাদরাসা পরিচালনার মূল ভিত্তি। মাদরাসার জন্য মূল অনুদান সংগ্রহ করা হয় রমজান মাসে। আর কিছু সংগ্রহ হয় কোরবানির পশুর চামড়া থেকে।

করোনা মহামারিতে আর্থিক সংকটের কথা তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনা মহামারির কারণে গত বছর রমজানের আগে মার্চ মাস থেকে কোরবানি পর্যন্ত দেশজুড়ে লকডাউন ছিল। এর ফলে কওমি মাদরাসাগুলো যাকাত-ফিতরা, সাধারণ দান এবং কোরবানির চামড়া বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ নিয়ে বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়ে। চলতি বছরও করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় রমজান মাসের শুরু থেকে কঠোর লকডাউন দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচল ব্যাপকভাবে সীমিত হয়ে পড়েছে। ফলে মাদরাসার শিক্ষক ও প্রতিনিধিরা অর্থ সংগ্রহের বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে আছেন।

এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে মাদরাসার স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম এবং হাজার-হাজার গরিব ও এতিম ছাত্রের ভরণপোষণ চালু রাখা সংকটের মুখে পড়তে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে আশঙ্কা করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.