যশোরের চৌগাছায় ক্ষেত থেকে ফসল ঘরে তুলতে কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা নির্মাণ করেছেন। বুধবার উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণকয়ার পাড়া গ্রাম থেকে চাকলার বিলের মাঠ পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা হয়। নিজেদের জমি দান করে এ কাজে প্রায় দুই শ’ কৃষক স্বেচ্ছাশ্রমে কৃষিজমি থেকে ফসল ও কৃষিজাত পণ্য সামগ্রী তুলে বাড়িতে আনতে রাস্তা নির্মাণ করে।
দক্ষিণ কয়ারপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম বলেন, আমরা দক্ষিণ কয়ারপাড়া গ্রামের কৃষক, রায়শার বিল ও চাকলার বিলের দাঁড়ির মাঠ থেকে কৃষি আবাদ বাড়িতে আনতে ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছিলাম। এ অবস্থায় গ্রামের সব কৃষকরা মিলে নিজেদের জমি দান করে ফসল বাড়িতে তোলার জন্য এ রাস্তা নির্মাণ করলাম।
এ সময় আরো কথা হয় কৃষক আব্দুস সামাদ, জহুরুল আলম, আবুল কালাম, মোফাজ্জেল হোসেনের সাথে। তারা জানান, এ গ্রামের কৃষকদের রক্তপানি করা ফসল ঘরে আনতে ৬৫ জন কৃষক বিনামূল্যে নিজেদের জমি দান করেছেন। আজ গ্রামের কৃষক, যুবক, শিশু, কিশোর, বয়োবৃদ্ধসহ প্রায় দুই শ’ জন কৃষক সেচ্ছাশ্রমে টলি, ঝুড়ি, বস্তায় করে মাটি টেনে দুই কিলোমিটার নতুন কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করেছি।
বৃদ্ধ মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘একতাই বল’ একেই বলে ‘দশেমিলে করিকাজ হারি জিতি নাহি লাজ’।
এলাকাবাসী জানান, কয়ারপাড়া গ্রাম থেকে চাকলার বিলের মাঠ পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার দূরত্ব। কিন্তু এর মাঝে কোনো রাস্তা নেই। সে কারণে এই মাঠে ট্রলি, ট্রাক্টর, পাওয়ারটিলার গরুর গাড়ি নেয়া যায় না। এজন্য ফসল তুলতে প্রতি মৌসুমে আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেক সময় ফসলের বড় একটা অংশ নষ্টও হয়ে যায়। তাই আমরা গ্রামবাসী নিজ উদ্যোগে জমি দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছি।
কৃষক আব্দুস সামাদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান শান্তকে সাথে নিয়ে গ্রামের গণ্যমান্যদের সাথে কথা বলি। সকলেই রাস্তাটি নির্মাণের জন্য একমত হয়। এ রাস্তা নির্মাণের জন্য গ্রামের ইসমাইল, তাহাজ্জেল, আমজার গাজী, আতিয়ার, আশা, আহমেদ, শহিদুল ইসলাম পরানসহ ৬৫ জন জমি দিতে রাজি হন। পরে গ্রামবাসীকে সংগঠিত করে বুধবার রাস্তা নির্মাণ কাজের প্রথম দিনে গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক মানুষ অংশ নিয়েছেন।
সেচ্ছাশ্রমে রাস্তা নির্মাণ কাজে অংশগ্রহণ করা শামিম বলেন, গ্রামের এই মাঠে যাওয়া আসার জন্য কোনো রাস্তা না থাকায় গরুর গাড়ি অথবা নিজেরা মাথায় বা কাঁধে করে ফসল তুলতেও ভোগান্তি পেতে হত। যে কারণে আমরা নিজেরাই জমি দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছি। আমার পাঁচটি টলি রাস্তা নির্মাণের জন্য কাজ করেছে।
রাস্তায় জমিদাতা শহিদুল ইসলাম পরান বলেন, আমার সামান্য ক্ষতি হলেও গ্রামের হাজার হাজার কৃষকের উপকার হবে এজন্য আমি খুশি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান শান্ত বলেন, গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে যে রাস্তা নির্মাণ করেছি। আশা করি পরবর্তীতে এই রাস্তা সরকারিভাবে পাকাকরণ হবে।
চৌগাছা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণ কয়ারপাড়া মাঠে গ্রামবাসীর উদ্যোগে একটি রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রামবাসী আমাকে জানিয়েছিল। রাস্তাটি সরকারি তালিকাভুক্ত না হওয়ায় পরিষদের পক্ষ থেকে কিছু করতে পারেনি। রাস্তাটি সরকারি তালিকাভুক্ত করে রাস্তাটি উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করবো।
এদিকে নিজের ফলানো ফসল ঘরে তোলার নতুন রাস্তা পেয়ে এ এলাকার কৃষকদের মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে।
নিউজ সোর্সঃ চৌগাছায় ফসল তুলতে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা নির্মাণ