ঢাকা, শনিবার ১৮ মে ২০২৪, ০৯:২৬ অপরাহ্ন
মাওলানা মামুনুল হক ওপর নজর রাখছে হেফাজত ইসলাম
Reporter Name

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে এখনও প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি। কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীসহ আটক, ফোনালাপের তথ্য স্বীকার এবং এসব নিয়ে ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দেওয়ার পরও তাকে নিয়ে সাফাই গাইছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। অবশ্য গত বৃহস্পতিবার ফেসবুক লাইভে বক্তব্যের পর নিজেদের অনেক নেতাকর্মী ও সমর্থকের কাছে সমালোচিতও হচ্ছেন মামুনুল।

নারায়ণগঞ্জের একটি রিসোর্টে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে অবরুদ্ধ হওয়ার পর হেফাজতের পক্ষ থেকে দ্রুত মামুনুলের অবস্থানকে সমর্থন করে বিবৃতি দেওয়া হয়। এরপর গত ৪ এপ্রিল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব সাখাওয়াত হোসেন দাবি করেন, ‘ফাঁস হওয়া ফোনালাপ কাটছাঁট করে প্রচার করা হয়েছে। যারা এসব প্রচার করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ কিন্তু বৃহস্পতিবার ফেসবুক লাইভে এসে মামুনুল স্বীকার করেন ফোনালাপ তারই ছিল।

এ ঘটনার পর উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে হেফাজতের মধ্যেও যারা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলেন, তাদের অনেকের ভেতর সংশয় ও অসন্তোষ দেখা দেয়। যদিও মামুনুলের বিরুদ্ধে হেফাজতের কোনো নেতাই এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে অবস্থান নেননি বা কোনো মন্তব্য করেননি।

তবে এ ব্যাপারে গতকাল শুক্রবার হেফাজতের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান সমকালকে জানান, মামুনুলসহ চলমান সার্বিক বিষয়ের ওপর তাদের নজর আছে। আগামী রোববার নাগাদ বিষয়গুলো নিয়ে আরও পরিস্কার মতামত উপস্থাপন করা হবে। মামুনুলের ফেসবুক লাইভে দেওয়া বক্তব্যের ব্যাপারে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রয়োজন হলে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হবে।

ফোনালাপের বিষয়ে জাকারিয়া নোমান বলেন, ‘ফোনালাপের কথা স্বীকার করে নিয়ে মামুনুল হক সৎ সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। একজন এমপিও তো অন্যের স্ত্রীসহ ধরা খেয়েছেন। তখন কি কেউ বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছিল? এখন কেন মামুনুলের ব্যাপারে এত বাড়াবাড়ি হচ্ছে? হেফাজত থেকে এটা স্পষ্ট করা হয়েছে, যে ঘটনা ঘটছে, সেটা তার ব্যক্তিগত।’

‘স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে সীমিত পরিসরে সত্য গোপন করা যাবে’- মামুনুলের এমন ভাষ্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে হেফাজতের প্রচার সম্পাদক বলেন, ‘এ ব্যাপারে তার ব্যাখ্যাকে সঠিক বলে মনে করছি।’

চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব নাসির উদ্দিন মনিরের সঙ্গে। তিনি গতকাল সমকালকে বলেন, ‘ফেসবুক লাইভে এসে মামুনুল সব প্রশ্নের উত্তর পরিস্কারভাবে দিয়েছেন। কেউ হয়তো ভাবছেন এটা তার দুর্বলতা। তবে এটা তার দুর্বলতা নয়।’

নৈতিক স্খলন ও অন্য কোনো গুরুতর অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে হেফাজতের পক্ষ থেকে তদন্ত করার নজির রয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘হেফাজত আমিরের বক্তব্য সুস্পষ্ট- এ ধরনের অভিযোগের প্রমাণ পেলে সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হবে। তবে হেফাজত বিশ্বাস করে, মামুনুলকে নিয়ে উদ্ভট পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার হেফাজতের আমিরের সঙ্গে মামুনুল ইস্যুতে সংগঠনের নেতৃস্থানীয়দের আলোচনা হয়েছে। আলোচনা শেষে মামুনুলের পক্ষে কথা বলেছেন হেফাজত আমির।’

আলোচনায় তিন ডায়েরি একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মামুনুলের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝরনা নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার তিনটি ডায়েরি জব্দ করেছে। এ ডায়েরিতে মামুনুলের সঙ্গে জান্নাতের বিয়ের কোনো তথ্য না থাকলেও ৩০ মাসের সম্পর্কের উল্লেখ রয়েছে বলে সূত্র দাবি করেছে। সূত্রমতে, দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর নর্থ সার্কুলার রোডের একটি বাসার চতুর্থ তলায় সাবলেট থাকতেন জান্নাত।

গতকাল যোগাযোগ করা হলে ওই বাড়ির মূল ভাড়াটিয়া সালমা খানম সমকালকে জানান, অবিবাহিত পরিচয়ে জান্নাত গত আট-নয় মাস ধরে তাদের বাসায় সাবলেট রয়েছেন। সর্বশেষ শনিবার তিনি বাসায় ছিলেন। আগে তিনি পার্লারে চাকরি করতেন। তবে কিছুদিন আগে হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন।’

এদিকে জান্নাতের বড় ছেলে আবদুর রহমান জামি নিশ্চিত করেছেন, তিনি প্রায়ই নর্থ সার্কুলার রোডের ওই বাসায় যেতেন। তার মা নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন। ডায়েরিতে যে হাতের লেখা আছে, তা তার মায়ের।

হেফাজত ইস্যুতে দেশের কোনো এলাকায় বিশৃঙ্খলা হলে তা শক্তহাতে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নীতিনির্ধারণী মহল সূত্রে জানা গেছে, সংশ্নিষ্ট এলাকার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে জবাবদিহিও করতে হবে। মামুনুলের ঘটনা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার টিএম মোশাররফ হোসেনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সাসপেন্ডকালীন তিনি খুলনা রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকবেন।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে গত শনিবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বেড়াতে গিয়ে স্থানীয় রয়্যাল রিসোর্টে অবস্থান নেন। এ খবরে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। সন্ধ্যায় হেফাজতের কয়েকশ কর্মী-সমর্থক রয়্যাল রিসোর্টে হামলা ও ভাঙচুর করে মামুনুলকে বের করে নেয়। তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ও ভাঙচুর করে। শনিবার রাতে মামুনুলের একাধিক টেলিফোন কথোপকথন ফাঁস হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x