রাজধানীসহ সারাদেশে সোমবার (২৬ জুলাই) পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরো ১২৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১২০ জন রাজধানীর। এর মধ্যে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ২৬ জন এবং বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ৯৪ জন ভর্তি হয়েছে। অপর দিকে ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তিন ডেঙ্গু রোগী। এ নিয়ে বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৪৬৮ জনে। এদের মধ্যে ৪৬০ জনই ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রয়েছে। অবশিষ্ট আট জন ঢাকার বাইরের হাসপাতালে রয়েছে।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য তথ্য ইউনিটের (এমআইএস) সহকারী পরিচালক ও হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. কামরুল কিবরিয়া স্বাক্ষরিত ডেঙ্গুসংক্রান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে মোট ১ হাজার ৮০২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ হাজার ৩৩১ জন।
চলতি বছর জানুয়ারিতে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৯ জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিন জন, মেতে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন এবং ২০ জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ৪৩০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন।
এদিকে গবেষকরা বলছেন, এডিসের লার্ভার ঘনত্ব ও পরিস্থিতি বিবেচনায় আগস্টে আক্রান্তের হার দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জুনের গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ী জুলাইয়ে আক্রান্তের হার বেড়েছে। আর জুলাইয়ের পরিস্থিতি অনুযায়ী আগস্টে এই আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘বৃষ্টিপাত, এডিসের লার্ভার ঘনত্ব, আর্দ্রতা ও রোগীর সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে আমাদের গবেষণা পরিচালিত হয়। সে অনুযায়ী আমরা জুনে যে পরিসংখ্যান পেয়েছি সেই অনুযায়ী জুলাই মাসে আক্রান্তের হার বেড়েছে। লকডাউনের কারণে আমাদের জরিপ বন্ধ রয়েছে। তবে এই চারটি পরিমাপ অনুযায়ী আগস্টে আরো ভয়াবহ অবস্থা হওয়ার আশঙ্কা দেখছি। এ জন্য এখনি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে লার্ভা ধ্বংসে কাজ করতে হবে। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে জমা পানি রাখা যাবে না। সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকেও আরো সচেতন হতে হবে।’
অন্য দিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, এডিসসহ অন্যান্য মশার প্রাদুর্ভাব ও ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে যে এলাকায় অর্থাত্ যে বাসাবাড়িতে রোগী পাওয়া যাবে হাসপাতাল থেকে সেই ব্যক্তির নাম-ঠিকানা নিয়ে তার বাসাসহ ঐ অঞ্চল চিহ্নিত করে বিশেষ চিরুনি অভিযান চালানো হবে। ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে গঠিত ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সমন্বয় সেল’-এ এবং দুই সিটি করপোরেশনে পাঠানোর জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন মন্ত্রী। রবিবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এডিস মশার প্রাদুর্ভাব ও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় করণীয় ঠিক করতে ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ডাকা জরুরি সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, অভিযান চালানোর সময় সিটি করপোরেশনের লোকজনদেরকে বাসাবাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ আসে। অনেক সময় আক্রান্ত রোগীর আসল ঠিকানা না দিয়ে ভুল তথ্য দেওয়া হয়। এটি সচেতন নাগরিকের কাজ হতে পারে না। কোথায় এডিস মশার লার্ভা আছে, তা নাগরিকরা জানালে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। মানুষের অংশগ্রহণ ছাড়া মশা নিধন সম্ভব নয়—মন্তব্য করেন মো. তাজুল ইসলাম। সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, গাজীপুর সিটি করপোরেশন মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।