আসছে কঠোর বিধিনিষেধেও শিল্পকারখানা চালু চান এফবিসিসিআই সভাপতি, ঈদের পর দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধে সব ধরনের শিল্পকারখানা চালু রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেছেন, বিধিনিষেধের মধ্যে সব ধরনের শিল্পকারখানা বন্ধ রাখা হলে পণ্য সরবরাহব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিঘ্নিত হবে। এতে উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে, খাদ্যসামগ্রী, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, বোতলজাত পানীয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ইত্যাদি উৎপাদন বন্ধ থাকলে সাধারণ ভোক্তারা সমস্যায় পড়বেন। পণ্যসামগ্রী সঠিকভাবে সরবরাহ ও বাজারজাত না হলে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। এতে স্বল্প আয়ের মানুষ বিপদে পড়বেন।
আজ শুক্রবার দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এফবিসিসিআইর সভাপতি জসিম উদ্দিন ঈদের পর দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধে সব ধরনের শিল্পকারখানা চালু রাখার আহ্বান জানান।
জসিম উদ্দিন বলেন, রপ্তানি খাতের কারখানা বন্ধ থাকলে নির্ধারিত সময়ে পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হবে না। এতে রপ্তানির ক্রয়াদেশ বাতিলের আশঙ্কা তৈরি হবে। ঈদের ছুটিসহ প্রায় ১৮-২০ দিন কারখানা বন্ধ থাকলে গ্রীষ্ম ও বড়দিন এবং আগামী শীতের বস্ত্র খাতের ক্রয়াদেশ হাতছাড়া হতে পারে। এক মাসের রপ্তানি শিডিউল বিঘ্নিত হলে পরবর্তী ছয় মাসের রপ্তানি শিডিউলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেই সঙ্গে উৎপাদন বন্ধ থাকলে আমদানি করা কাঁচামাল অব্যবহৃত হয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এতে আমদানিকারক ও উৎপাদক উভয়ই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও ছোট কারখানা লম্বা সময় বন্ধ রাখা হলে উদ্যোক্তারা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন। এমনকি কারখানাগুলো পুনরায় চালু করাও অসম্ভব হয়ে পড়বে।
এফবিসিসিআইর সভাপতি বলেন, করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কঠোর বিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপনে ওষুধ কারখানার বিষয়েও সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। যদি ওষুধ কারখানা বন্ধ রাখা হয়, তাহলে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের সরবরাহ বিঘ্নিত হবে। অপর দিকে ট্যানারি বন্ধ রাখা হলে কোরবানি ঈদে সংগৃহীত চামড়া সংরক্ষণ কার্যক্রম ব্যাহত হবে।
জসিম উদ্দিন বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে জীবনরক্ষাকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। কিন্তু উৎপাদনব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হলে খাদ্যপণ্যসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দেবে। সে জন্য ঈদের পর দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও সব ধরনের শিল্পকারখানা চালু রাখা প্রয়োজন।
করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করলেও রপ্তানিমুখী পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা উৎপাদন চালু রাখার সুযোগ পায়। সর্বশেষ গত ২৮ জুন শুরু হওয়া সীমিত ও পরে ১ জুলাই শুরু হওয়া কঠোর বিধিনিষেধে পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা চালু আছে। তবে গত মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ঈদপূর্ববর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল পর্যন্ত সব ধরনের বিধিনিষেধ শিথিল থাকবে। তারপর আবার কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হবে। চলবে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত। তবে পার্থক্য হচ্ছে, এবার কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে সব ধরনের শিল্পকারখানা বন্ধ থাকবে।
সরকারের এমন সিদ্ধান্তের পর দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের মালিকেরা। বিষয়টি নিয়ে গত বুধবার রাজধানীর গুলশানে বিজিএমইএর কার্যালয়ে জরুরি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে তৈরি পোশাক, বস্ত্র, টেরিটাওয়েল ও সরঞ্জাম খাতের ব্যবসায়িক সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, বিটিটিএলএমইএ ও বিজিএপিএমইর সভাপতিরা ছাড়া এফবিসিসআইর সভাপতি জসিম উদ্দিনও ছিলেন।
সেই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, সরকারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হবে। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেন পোশাক ও বস্ত্র খাতের পাঁচ ব্যবসায়িক সংগঠন। ঈদের পর দুই সপ্তাহের বিধিনিষেধে পোশাকসহ রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা চালু থাকবে কি না, সেটি নিয়ে কাল শনিবার সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।ত