ঢাকা,রবিবার ০৪ জুলাই ২০২১, ০২:৩৫ অপরাহ্ন
ভ্যানচালক থেকে রাসেলের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হওয়ার রহস্য
দৈনিক ডাক অনলাইন ডেস্ক

ভ্যানচালক থেকে রাসেলের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হওয়ার রহস্য

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থেকে প্রায় এক যুগ আগে ঢাকায় এসেছিল মজিবুর রহমান শেখ ওরফে মজিদ ওরফে রাসেল। টাকার অভাবে উচ্চমাধ্যমিকের পর আর পড়া হয়নি। ঢাকার কাওরান বাজারে ভ্যান দিয়ে মালামাল আনা-নেওয়ার কাজ করতো। এ সময় পরিচয় হয় মামুন নামের এক যুবকের সঙ্গে। পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব। মামুনের হাত ধরেই অন্ধকার জগতে পা রাখে মজিদ। হাতে ওঠে আগ্নেয়াস্ত্র। দাদাবাহিনীর অন্যতম ক্যাডার হয়ে যায় সে। আড়তদার ও ব্যাপারীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলতো নিয়মিত।

এই সন্ত্রাসীকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেগুনবাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ- ডিবি তেজগাঁও বিভাগ। গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে একটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানের সময় আনোয়ারুল ইসলাম হৃদয় ওরফে সুমন নামে তার আরেক সঙ্গী পালিয়ে গেছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শাহাদাত হোসেন জানান, মুজিব ওরফে রাসেল হলো দাদাবাহিনীর অন্যতম অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। সে ও তার দল কাওরান বাজার এলাকায় নিয়মিত অস্ত্রের মুখে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতো। কেউ দিতে না চাইলে চালাতো হামলা। সম্প্রতি চাহিদামতো চাঁদা না দেওয়ায় দুই ব্যবসায়ীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে তারা।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কাওরান বাজারে দাদাবাহিনীর আরও কয়েকজন সন্ত্রাসীর নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। এই চক্রের সঙ্গে মিশে জঙ্গিদের একটি গ্রুপও ডাকাতি করতো বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে।’

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গতবছরের সেপ্টেম্বরে কাওরান বাজারের দুই ব্যবসায়ী গোলাম সারওয়ার বিপ্লব ও সামছুল আলম নামে দুই ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে আহত করে দাদাবাহিনীর সন্ত্রাসীরা। দাবি অনুযায়ী চাঁদা না দেওয়ায় বিপ্লবের হাতের রগ কেটে দিয়েছিল ওরা। এই ঘটনায় সেসময় মামুন ও পাটোয়ারী নামে দাদাবাহিনীর দুই সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। সেসময় গ্রেফতারকৃতরা জানায়, মজিদ ওরফে রাসেল ও সুমন ওই দুই ব্যবসায়ীকে কুপিয়েছিল। তখন থেকেই রাসেলকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল গোয়েন্দা পুলিশ।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল জানায়, তার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থানার টামটা এলাকায়। তার বাবা কোরবনা আলী শেখ। বাবা অসুস্থ হওয়ায় পরিবারে অভাব লেগে থাকতো। ২০১০ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করলেও অভাবের কারণে আর পড়তে পারেনি। ওই বছরই ঢাকায় এসে কাওরান বাজারে ভ্যান দিয়ে মালামাল টানার কাজ শুরু করে।

মজিদ ওরফে রাসেলের ভাষ্য, ভ্যান চালাতে গিয়ে মামুনের সঙ্গে পরিচয়। মামুন ক্ষমতাসীন দলের শ্রমিক সংগঠনের রাজনীতিতে জড়িত। সর্বশেষ মামুন কাওরান বাজারের শ্রমিক লীগের ২৪ নং ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল। রাজনীতির পাশাপাশি চাঁদাবাজি করে বেড়াতো সে। তার মাধ্যমেই এ জগতে জড়ায় রাসেল ওরফে মজিদ।

জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল আরও জানিয়েছে, মহানগর আবাসিক এলাকার একটি বাসায় স্ত্রী ও তিন বছরের এক কন্যাসন্তান নিয়ে থাকে রাসেল। পরিবারের সদস্যরা কেউ তার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কথা জানে না। পরিবার জানে সে উবারে বাইক চালায়।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, মজিদ ওরফে রাসেলের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের একটি মাদক মামলা রয়েছে। দাদাবাহিনীর এই দাদা কে জানতে চাইলে রাসেল গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জানায়, সে দাদাকে চেনে না। কোনওদিন দেখেনি। দাদার সঙ্গে যোগাযোগ করতো মামুন।

গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা, কাওরান বাজারের এক সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ভারতে পলাতক আশিক নতুন করে দাদাবাহিনী গড়ে তুলে চাঁদাবাজি শুরু করেছে। আশিকের সঙ্গে স্থানীয় শ্রমিক লীগের মধ্যমসারির কিছু নেতাও যোগ দিয়েছে বলে জানান তারা। ভারতে বসে আশিক ওই নেতাদের অস্ত্রের যোগানও দেয়। চাঁদাবাজির একটি অংশ আশিকের কাছে যায় বলে জানা গেছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *