ঢাকা, শনিবার ১৮ মে ২০২৪, ০৯:১০ অপরাহ্ন
চার হাজার নতুন চিকিৎসক নিয়োগ হচ্ছে
দৈনিক ডাক অনলাইন ডেস্ক

করোনা পরিস্থিতির অবনতিতে স্বাস্থ্য খাতে বেশ জনবল সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চিকিৎসক সংকট চরমে। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ গত ৩০ জুন চার হাজার নতুন চিকিৎসক নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক শনিবার জানিয়েছেন, এ নিয়োগপ্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে ৪ হাজার চিকিত্সক কোন বিসিএস থেকে নেওয়া হবে—সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ৩৯তম ও ৪২তম এই দুই বিসিএসে উত্তীর্ণরা এ বিষয়ে পাল্টাপাল্টি দাবি জানাচ্ছেন।

৪২তম বিশেষ বিসিএস (লিখিত) পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের দাবি হচ্ছে, এই চার হাজার চিকিৎসক যেন তাদের মধ্য থেকে নেওয়া হয়। কেননা চলমান করোনা মহামারির মধ্যেই ৪২তম বিশেষ বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ৩১ হাজারেরও অধিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬ হাজার ২২ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে অর্ধেকেরও বেশি মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন কিন্তু করোনা পরিস্থিতির হঠাৎ অবনতি হওয়ায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
এদিকে ৩৯তম বিসিএসের অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে নতুন করে চিকিত্সক ক্যাডারের নিয়োগের দাবি জানি আসছেন ক্যাডারবঞ্চিত চিকিত্সকরা। সম্প্রতি এই দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছেন প্রায় ৬ হাজার চিকিত্সক। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া আবেদনে তারা উল্লেখ করেছেন, ২০১৭ সালে ৩৯ বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয়েছিল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবায় যথেষ্ট পরিমাণ চিকিত্সক নিয়োগের উদ্দেশ্যে। ১০ হাজার চিকিত্সক নিয়োগের সেই বিষয় আজও অসম্পূর্ণ আছে।

তবে ৪২তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা চাইছেন ৪২তম বিশেষ বিসিএস থেকেই নিয়োগ দেওয়া হোক। পূর্ববর্তী বিশেষ বিসিএস থেকে নিয়োগ দানের তারা বিরোধী। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ডা. অর্নব বকশি, ডা. সুব্রত বর্মন, ডা. আশিকুর রহমান বলেন, ৪২তম বিশেষ বিসিএসে যাদের মৌখিক পরীক্ষা বাকি আছে তাদের অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ দিলে দেশের চিকিৎসক সংকট কিছুটা হলেও দূর হবে। এই বিসিএস এর পরীক্ষার্থীরা বলেছন, ৪২তম বিসিএস পরীক্ষার কারণে গত ৭-৮ মাস তারা করোনাকে সামনে রেখে সরকারি চাকরির আশায় বসে ছিলেন। তাছাড়া ৪২তম বিসিএস এর পূর্ববর্তী বিশেষ বিসিএসের অপেক্ষমাণ তালিকায় অধিকাংশ প্রার্থীই রয়েছেন। সে ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী বিশেষ বিসিএস থেকে নিয়োগ দিলে চলমান ৪২তম বিসিএসে বেশ শূন্য পদ থাকবে। কারণ তাদের অধিকাংশই চলমান ৪২তম বিসিএস এ উত্তীর্ণ হয়েছেন।

তাদের আরো যুক্তি হচ্ছে, পূর্ববর্তী বিশেষ বিসিএস শেষ হবার পর চিকিৎসকদের আরো ৩টি নতুন ব্যাচ বের হয়েছে। আগে সাত হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাই নতুন করে ৪২তম বিসিএস থেকে চার হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হলে সিনিয়র জুনিয়রসহ সবার সুযোগের সমতা থাকবে, কেউ নিয়োগবঞ্চিত হবেন না। তাই প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে ৪২তম বিসিএস থেকেই নতুন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়াকে তারা যুক্তিযুক্ত মনে করছেন।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে প্রথম ধাপে ৩৯তম বিসিএস থেকে সাড়ে ৪ হাজার চিকিত্সক নিয়োগ দেওয়া হয়। ৮ হাজার ৩৬০ চিকিত্সককে সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ঘোষণা করেও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে ৩৯ বিসিএসের এই ৮ হাজার ৩৬০ জন তাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের একটা সমাধানের লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছে।

ক্যাডার বঞ্চিতরা বলছেন, পরবর্তীকালে কভিড মহামারির শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তাভাবনার আলোকে এখান থেকে ২০২০ সালে ২০০০ চিকিত্সক দ্রুততম সময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। যারা পুরোটা সময় কোভিডের মাঝে প্রতিনিয়ত সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। বাকি ৬ হাজার ১০৭ জন চিকিত্সক এখনো নিয়োগের অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে প্রথম শ্রেণির নন ক্যাডারে নিয়োগটাও বাতিল করা হয়েছে। বর্তমানে কোভিড পরিস্থিতি আগের চাইতেও ভয়ানক পরিস্থিতি ধারণ করেছে। মৃত্যুহার ঊর্ধ্বমুখী।

গত ৩০ জুন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মাসিক সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে গত ৮ জুলাই আরো ৪ হাজার চিকিত্সক নিয়োগের জন্য পিএসসি-কে পত্র প্রেরণসহ একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে প্রেরণের পরামর্শ প্রদান করা হয়।

জানা গেছে, মন্ত্রণালয় থেকে এখনো পর্যন্ত এ ধরনের কোনো প্রস্তাব পিএসসিতে যায়নি। চিকিৎসক নিয়োগের চাহিদাপত্র পেলে কমিশন সভা করে সিদ্ধান্ত নেবে পিএসসি। তবে নতুন করে চিকিৎসকদের জন্য আলাদা বিসিএস গ্রহণের কোনো পরিকল্পনা নেই। চলমান বিশেষ ৪২তম বিসিএস অথবা ৩৯তম বিসিএস থেকে চিকিৎসকদের নিয়োগ দেওয়া সহজ হবে বলেই মনে করছে পিএসসি।

গত শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কনভেনশন সেন্টারে ফিল্ড হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমাদের ডাক্তার-নার্সরা গত দেড় বছর ধরে দিনরাত কাজ করছেন। অনেকেই মৃত্যুবরণ করছেন। তাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় করোনাকালে আরও নতুন চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ করা হবে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালগুলোতে পদ থাকা সত্ত্বেও প্রায় সাড়ে ১১ হাজার পদে কোনো চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়নি। এর আগে ২০১৯ সালে ৩৯তম বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে প্রথম ধাপে সাড়ে ৪ হাজার এবং ২০২০ সালে মে মাসে আরও অতিরিক্ত দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা কর্মস্থলে যোগদান করেছেন।

২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর ৪২তম বিশেষ বিসিএসের সার্কুলার প্রকাশিত হলে সাড়ে ৩১ হাজার আবেদন পত্র জমা পড়ে। চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রিলিতে ৬ হাজার ২২ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন। গত ৬ জুন মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় গত ২৪ জুন পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

 

 

One response to “চার হাজার নতুন চিকিৎসক নিয়োগ হচ্ছে”

  1. … [Trackback]

    […] Find More to that Topic: doinikdak.com/news/35287 […]

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x