ঢাকা, বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন
অভয়নগর ভবদহ অধ্যুসিত ২২ হাজার বিঘা জমিতে ধানের বাম্পার ফলন
Reporter Name

সোম মল্লিক, অভয়নগর প্রতিনিধি: স্বেচপ্রকল্প ব্যবস্থাপনায় সাড়া : নিজস্ব অর্থায়নে পলি অপসারণ

বিল খুকশিয়াসহ ২৭ টির বিলের দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার নিরাসনে পানি সেচের পর নিজস্ব অর্থায়নে চলছে হরি নদীর পলি সরানোর কাজ। সেচ প্রকল্প বিরোধীতাকারী একটি চক্রের প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও এই বছর ২৭ বিলের প্রায় ২২ হাজার বিঘা জমিতে  ধান চাষ করতে সম্ভব হয়েছে, ফসল থেকে কৃষকের মুখে ফুটছে হাসি।

সরেজমিন ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, যশোরের, অভয়নগর, কেশবপুর সীমান্তবর্তী সুফলাকাটি, পাঁজিয়া ও মণিরামপুরের দুর্বাডাঙ্গা, মনোহরনগর ইউনিয়ন এবং ডুমুরিয়ার সীমান্তবর্তীসহ ৬৯ গ্রামের কৃষকদের জমি নিয়েই ২৭ বিলের অবস্থান। প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষের বাঁচা-মরার ভাগ্য নির্ভর করে এই ২৭ বিলের ধান চাষের উপর।

এক সময় বিল খুকশিয়া, আশ্বাননগর, ভাটবিলা, দূর্বাডাঙ্গা,  ডুঙাঘাটা, বেলকাটি, বাগডাঙ্গা, কুশখালি, মানিকতলা, রজিপুর, হরিনা,  চাতরা, মনোহরপুর – পাথরঘাটা এই বিলসহ  ২৭ বিলের পানি এই হরি নদী দিয়ে নিষ্কাশন হত। কিন্তু ধীরে ধীরে নদীটি ভরাট হতে থাকায় বর্তমানে বিলের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতায় রূপ নেয়। তখন থেকে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যায় এই বিল গুলোতে।

জলাবদ্ধতার কারনে বিগত ২ বছর ২৭ বিলে ধান চাষ করতে না পারায় এলাকার কৃষকদের পরিবারে নেমে আসে দূর্ভিক্ষ। ২৭ বিলের সাড়ে ৩ লাখ মানুষের কাছে এই হরি নদী যেন এক অভিশাপ্ত নাম হয়ে দাড়ায়। এই বছর ২৭ বিলের কৃষকদের দীর্ঘা বিশ্বাস ও তাদের আর্তনাদ দেখে তাদের পাশে এসে দাঁড়ান কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস.এম রুহুল আমীন ও সুফলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এস.এম মুনজুর রহমান।

জলাবদ্ধ এই বিলে কৃষকদেরকে ধান চাষের স্বপ্ন দেখান এই দুই নেতা। স্থানীয় এমপির দিক-নিদের্শনা মোতাবেক ২৭ বিলের দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা নিরসনে সকল জমির মালিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একটি মিটিং এর মাধ্যমে জমির মালিকদের সর্বসম্মতিক্রয়ে এস.এম রুহুল আমীনকে আহবায়ক ও এস.এম মনজুর রহমানকে কোষাধ্যক্ষ করে “জলাবদ্ধতা নিরসন বাস্তাবায়ন” নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির ব্যানারে গত ১৫ জানুয়ারী থেকে বিল খুকশিয়াসহ ২৭ বিলের জলাবদ্ধতা নিরসনে এইট ব্যান্ড সংলগ্ন ডায়ের খাল নামক স্থানে ৬৯টি গ্রামের ভুক্তভোগী জনগনের নিজস্ব অর্থায়নে ১২৯টি সেচ পাম্পের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম শুরু করা হয়। যার সুফল পেতে শুরু করেছে ২৭ বিলের প্রায় ২ লক্ষ কৃষক।

৩৩ হাজার বিঘা জমির মধ্যে এ বছর প্রায় ২২ হাজার বিঘা জমিতে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কেশবপুর উপজেলা কৃষক সংগ্রাম সমিতির সাধারন সম্পাদক তৌহিদুর রহমান জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে সেচপ্রকল্প ব্যবস্থা ২৭ বিলের কৃষকদের জন্য একটি ভাল ও সম্ভাবনাময় দিক। এটা একটি অস্থায়ী প্রকল্প, তবে বিলের জলাবদ্ধতা স্থায়ীভাবে নিরসনে হরী নদীর পলী অপসারনের কোন বিকল্প নেই।

এবিষয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন বাস্তাবায়ন কমিটির কোষাধ্যক্ষ আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এস.এম মনজুর রহমান বলেন, এক সময় হরি নদী দিয়ে এই বিলগুলোর পানি নিষ্কাশন হত। কিন্তু ধীরে ধীরে নদীটি ভরাট হতে থাকায় বর্তমানে বিলের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতায় রূপ নেয়। তখন থেকে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যায় এই বিলগুলোতে।

দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা নিরসনে সেচ কমিটির মাধ্যমে কৃষকদের নিজস্ব অর্থায়নে এ বছর পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা শুরু করা হয়েছে। পানি সেচ দেওয়ার ফলে ২৭ বিলের ৩৩ হাজার বিঘা জমির মধ্যে প্রায় ২২ হাজার বিঘা জমিতে এবার কৃষকরা ধান চাষ করতে সক্ষম হয়েছে। সেচ প্রকল্পের শুরু থেকেই স্থানীয় একটি চক্র উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছে। যদি এই চক্র সেচকাজ বাঁধাগ্রস্থ না করত তাহলে ২৭ বিলের সকল কৃষকরা এবছর ধান চাষ করতে পারত।

আগামীতে ২৭ বিলের সমস্ত জমিতে ধান চাষে উপযুক্ত করতে জলাবদ্ধতা স্থায়ীভাবে সমাধানের জন্য হরি নদীতে স্কেভেটর মেশিন দিয়ে পলি অপসারনের কাজ চলমান রয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসন বাস্তাবায়ন কমিটির আহবায়ক ও কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম রুহুল আমিন বলেন, এই উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছে মানুষের দীর্ঘশ্বাস দেখে।

এই বিল খুকশিয়ার সাথে ২৭টি বিল জড়িত। কেশবপুর ও মনিরামপুরের এসব বিলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে কোন ফসল হচ্ছে না। গরু, ছাগল, মানুষ না খেয়ে মরছে। তাদের কথা চিন্তা করে এই কাজ শুরু করেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x