ঢাকা, শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪, ০৪:২৩ পূর্বাহ্ন
খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা
অনলাইন ডেস্ক

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নে ঘোষেরহাট খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। ভুরঘাটা-আগৈলঝাড়া ভায়া ঘোষেরহাট খালের বাকাই বন্দরের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা দখল করে শতাধিক পাকা, আধা পাকা ভবন এবং দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা–কর্মী এবং প্রভাবশালী লোকজন এসব স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।

ঘোষেরহাট খালটি গৌরনদী, আগৈলঝাড়া উপজেলার ব্যবসায়ী ও কৃষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাকাই বন্দর, আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার, বাশাইল বাজারের ব্যবসায়ীরা এ খাল দিয়ে মালপত্র পরিবহন করেন। গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার ১৫টি গ্রামের কৃষকেরাও ফসল পরিবহনে খালটি ব্যবহার করেন। বাকাই বন্দর এলাকায় খালটির দুই কিলোমিটারে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।

১৭ জুন সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, বাকাই বন্দরের নতুন ব্রিজ থেকে দক্ষিণে প্রায় এক কিলোমিটারে খাল দখল করে স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। এর দক্ষিণে স্লুইসগেট এলাকায় ১২টি নতুন ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বাজারের মধ্য সেতুর পূর্ব দিকে প্রায় আধা কিলোমিটারে খালের দুই পাশ থেকে খাল দখল করে পাকা ও আধা পাকা ভবন রয়েছে। নির্মাণাধীন দোকানঘরের মিস্ত্রি সুরঞ্জন রায় ও মিলন বাড়ৈ বলেন, মালিকেরা যেভাবে বলেছেন, সেভাবে তাঁরা কাজ করছেন। পাশের নির্মাণকাজ তদারক করছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা বিবেক গাইন। খাল দখল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার পৈতৃক জমিতে ঘর নির্মাণ করছি।’

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে চরম বিরোধ থাকলেও সরকারি খাল দখলের জন্য তাঁরা একজোট। প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দখলদারদের মধ্যে রয়েছেন খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ১ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কুদ্দুস মাতুব্বর, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য আইয়ুব আলী হাওলাদার, আতা বালী, বাবুল ব্যাপারী, আবুল মাতুব্বর, বাবুল শেখ ও বিবেক গাইন ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাজীব মাতুব্বর। দখলদারদের মধ্যে আরও রয়েছেন খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহসম্পাদক রিপন সরদার, বিএনপির প্রচার সম্পাদক জিয়া ফকির, সদস্য নুরুজ্জামান সরদার ও বাদল মিয়া।

আওয়ামী লীগ নেতা কুদ্দুস মাতুব্বর বলেন, তিনি বৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। থানা ও উপজেলা ভূমি অফিসের লোকজন এসে নির্মাণকাজে বাধা দিয়েছিলেন। পরে বৈধ কাগজপত্র দেখে তাঁরা চলে যান। এখানে সবাই বৈধ মালিক হিসেবে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।

সরকারি খালের জমি ইজারা নিয়ে দোকানঘর নির্মাণের দাবি করেছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রাজীব মাতুব্বর। খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য বাদল মিয়া বলেন, তিনি আরেক জনের কাছ থেকে লিজ নিয়ে দোকান নির্মাণ করেছেন।

খালে অবৈধ দখলদারদের বিষয়ে উপজেলা বা ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয় থেকে কোনো জরিপ বা পরিমাপ হয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, পূর্ব বাকাই মৌজার এ খালের রেকর্ডের মালিক সরকার। ওই জমিতে কোনো ব্যক্তির মালিকানাস্বত্ব নেই। খাল বা খালের পাশে যেসব স্থাপনা রয়েছে, সবই অবৈধ।

এদিকে খালের পানি ব্যবহার করে বোরো চাষ করেন দুটি উপজেলার ১৫টি গ্রামের কৃষক। খালের পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে সেচকাজে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গৌরনদীর ইউএনও বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, দখলদারেরা যেই হোক না কেন, কাউকে জনস্বার্থবিরোধী কাজ করতে দেওয়া হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x