ঢাকা, মঙ্গলবার ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৮ পূর্বাহ্ন
রাবিতে ১৩৮ জন অ্যাডহক নিয়োগের সমাধান কি ?
ভাস্কর সরকার (রা.বি)

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আবদুস সোবহানের অপকর্মের দায় নিতে হচ্ছে রুটিন দায়িত্বে থাকা সহ-উপাচার্য সর্বোপরি পুরো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। প্রফেসর সোবহানের শেষ কর্মদিবস ৬ মে  ১৩৮ জনকে শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারি হিসেবে নিয়োগ দেয়া নিয়ে সমগ্র দেশে যেন সমালোচনার শেষ নেই। যদিও এই নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে ৮ মে নিয়োগপ্রাপ্তদের কাজে যোগদান স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

প্রশাসনের এক নথি থেকে দেখা যায় প্রফেসর আব্দুস সোবহান নিজেই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে নিয়ে প্রশাসনিক কারণে সকল নিয়োগ স্থগিত করতে সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। নথিতে দেখা যায়, প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধরণের নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখতে গত ১০ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যে পত্র প্রেরণ করা হয়েছিল, সেই পত্রে উল্লেখিত নির্দেশনার বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্যে রেজিস্ট্রার অফিসের সহকারী রেজিস্ট্রার মোঃ তারিকুল আলম গত ৮ জানুয়ারি ২০২১ একখানা ফাইল সূচনা করেন। নিয়মানুযায়ী রেজিস্ট্রারকে মার্ক করে সহকারী রেজিস্ট্রার ফাইলটি ছেড়ে দিলে ১০ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে তৎকালীন রেজিস্ট্রার “ক সিদ্ধান্তের জন্যে পেশ করা হলো” কথাটি লিখে উপাচার্যকে মার্ক করে ফাইলটি উপাচার্য বরাবর প্রেরণ করেন। এরপর উপাচার্য আব্দুস সোবহান একই তারিখে “ক-এ বর্ণিত বিষয়টি স্থগিত রাখা হোক” কথাটি লিখে নিজের সিদ্ধান্ত প্রদান করেন।

তার মানে, আব্দুস সোবহান উপাচার্য হিসেবে নিজেই সকল ধরণের নিয়োগ স্থগিত করে রেখেছেন। সেখানে তিনি নিয়োগ স্থগিত করে মন্ত্রণালয়ের দেয়া নির্দেশনা ৭৩-এর অধ্যাদেশের সাথে সাংঘর্ষিক বলে ‘মন্ত্রণালয় থেকে প্রেরিত এ ধরণের চিঠি বিবেচনায় নেয়ার প্রয়োজন নেই’ বা একই ধরণের অন্য কোন কথা লিখে নিয়োগ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত প্রদান করেননি। তিনি ফাইলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন একভাবে, অন্যদিকে ৭৩ এর অধ্যাদেশের মুলা ঝুলিয়েছেন। পরিশেষে ড. সোবহান নিজেই নিজের ১০ জানুয়ারির সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করে শেষ কর্মদিবসে ১৩৮ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে চরম এক স্ট্যান্ডবাজি করে ‘ঐতিহাসিক বিদায়’ নিয়েছেন। এই নিয়োগের সাথে যে ‘অবৈধ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়, সেটা শুধুমাত্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের উপরে ভিত্তি করে নয়, সাবেক উপাচার্যের ১০/০১/২০২১ তারিখের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই এই নিয়োগটি ‘অবৈধ’।

আজ নিয়োগ প্রার্থীরা এই বৈধ-অবৈধ গ্যাঁড়াকলে পড়ে দিক-বিদিক জ্ঞান হারিয়ে মহা সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় ৷ তারা একবার সিনেট, উপাচার্য লাউঞ্জ কিংবা প্রশাসন ভবন তালা দিচ্ছে আবার ভিসির বাড়ির সামনে অবস্থান নিচ্ছে, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডেও অভুক্ত অবস্থায় রাত্রি যাপন করছে ৷ মহামারি করোনার প্রকোপে সমগ্র রাজশাহী লকডাউন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারন শিক্ষার্থীসহ প্রবেশে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা সত্বেও আন্দোলনকারীদের মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে ক্যাম্পাসে ঢুকে চাকরিতে প্রবেশের লক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করতে হচ্ছে ৷ ওদিকে গতকাল (২৪ জুন) রুটিন দায়িত্বে থাকা উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা এক ব্রিফিংয়ে জানান, সাবেক ভিসি প্রফেসর এম আবদুস সোবহান অ্যাডহকের ভিত্তিকে নিয়োগপ্রাপ্তদের হুমকির মুখে তিনি সহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন৷ তিনি আরও বলেন, আন্দোলনকারীরা উপাচার্য বাসভবনের গেট উপড়ে ফেলে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও অপ্রত্যাশিতভাবে অনুমতি ছাড়াই ৫০/৬০ জন ঘরে ঢুকে পড়ে এবং সিন্ডিকেট সভা পন্ড করে দেয়। আমি ভেতরে ছিলাম। দেখি আমার সন্তান ও স্ত্রী কাঁদছেন। তারাও ভয় পেয়েছেন। এই বাসভবন আমি নিরাপদ মনে করছি না। কখন কি হয়ে যায় ! তিনি আরও বলেন, আন্দোলনকারীদের আমরা আগেই জানিয়েছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছাড়া আমার দ্বারা কিছু করা সম্ভব নয়। আন্দোলকারীদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক৷ সামনে একাডেমিক কাউন্সিল করতে হবে সেটিও কি হবে জানি না।

অপরদিকে করুণ পরিণতির স্বীকার চাকুরিপ্রার্থীদের করোনা মহামারির ভেতর বন্ধ ক্যাম্পাসে আন্দোলন করার কারনে তারা নিজেদের, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের, আওয়ামী লীগ দলের এবং সর্বোপরি সরকারের যে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে তার জন্য যিনি সব থেকে বেশি দায়ী তার নাম প্রফেসর ড. আলহাজ্ব আব্দুস সোবহান। তারই নানা রকম হিপোক্র্যাসির কারণে আজকের এই জটিলতা ও সংকট সৃষ্টি হয়েছে। যে ব্যক্তি সবকিছু জেনেও অবৈধ নিয়োগ দিয়েছেন, অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন কিনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সেটা দেখতে হবে। এছাড়া যেহেতু শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৩৮ জন অ্যাডহক নিয়োগকে অবৈধ আখ্যায়িত করেছে, সেহেতু উক্ত সংকট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পূর্বে মন্ত্রণালয়ের অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত দেয়া প্রয়োজন। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তার দায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেই নিতে হবে।

 

3 responses to “রাবিতে ১৩৮ জন অ্যাডহক নিয়োগের সমাধান কি ?”

  1. … [Trackback]

    […] Read More Info here to that Topic: doinikdak.com/news/29201 […]

  2. … [Trackback]

    […] Here you can find 94654 more Information on that Topic: doinikdak.com/news/29201 […]

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x