সিলেট জেলা বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন হত্যার ১০ দিনের মাথায় খালাতো ভাইকে বিয়ে করেছেন শিপা বেগম। তাকে হত্যা মামলায় পুলিশ গ্রেফতার করলেও এখনও লাপত্তা রয়েছে শিপা বেগমের বর্তমান স্বামী শাহাজাহান চৌধুরী। এদিকে আনোয়ার হোসেন হত্যা মামলায় সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান শিপা বেগমের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। রবিবার (৬ জুন) রিমান্ড শুনানী শেষে আদালতের বিচারক এই আদেশ দেন। এরআগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে ৭দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়াছিন আলী জানান, আইনজীবী আনোয়ার হোসেন হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য আদালতে ৭ দিনের আবেদন করা হয়। সেই সাথে লাশ উত্তোলন করে পূনরায় ময়নাতদন্ত করার জন্য আরেকটি আবেদন করা হয়। রবিবার শুনানী শেষে আদালত শিপা বেগমের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আগামীকাল সোমবার (৭ জুন) সকালে তাকে রিমান্ডে নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, নিহতের মরদেহে কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করার জন্য আদালতে পৃথক আরেকটি আবেদন করা হয়। আবেদনে কি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আদালত সেই আদেশের কপি এখনও আমরা পাইনি। আদেশের কপি পাওয়ার পর পর সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়া মামলার প্রধান আসামী শিপা বেগমের বর্তমান স্বামী শাহজাহান চৌধুরী মাহিকে গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জানা যায়, আইনজীবী আনোয়ার হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগে তার ছোট ভাই মনোয়ার হোসেনের একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় গত বুধবার রাত ৩টার দিকে নগরীর তালতলা এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরকীয়া প্রেমের জেরে স্ত্রী শিপা আইনজীবী স্বামীকে হত্যা করেছেন বলে ধারণা করছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্র জানায়, আনোয়ার হোসেন মারা যাওয়ার মাত্র ১০ দিনের মাথায় শিপা বেগম তার খালাতো ভাই কানাইঘাটের বাসিন্দা (বর্তমানে নগরের উপশহর এলাকায় বসবাসকারী) শাহজাহান চৌধুরী মাহিকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে আনোয়ার হোসেনের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন শিপা। পরবর্তীতে আনোয়ার হোসেনের পরিবার জানতে পারে, পরকীয়ার জেরে আনোয়ার হোসনকে তার স্ত্রীসহ কয়েকজন মিলে হত্যা করেছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট আব্দুল গফুর জানান, এডভোকেট আনোয়ার হোসেন হত্যা মামলায় স্ত্রী শিপা বেগম জড়িত থাকার অনেক তথ্য উপাত্ত রয়েছে। মনোয়ার হোসেনের সাথে শিপা বেগমের ৪৩ মিনিটের ফোনালাপের অডিও ক্লিপে শিপা বেগমের এ সংক্রান্ত অনেক উক্তি আছে-যা আদালতে দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, সিলেট সদর উপজেলার শিবেরবাজারের দীঘিরপার গ্রামের আনোয়ার হোসেন ছিলেন সিলেট জেলা বারের সদস্য। নগরীর তালতলা এলাকায় নিজস্ব বাসায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। গত ৩০ এপ্রিল সেহরি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন আনোয়ার হোসেন। পরদিন বিকেল ৩টার দিকে স্ত্রী শিপা বেগম সবাইকে জানান, আনোয়ার হোসেন ডায়াবেটিক নীল হয়ে মারা গেছেন। পরে তাকে নিজের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার শিবেরবাজারের দীঘিরপার গ্রামে দাফন করা হয়।
আদালত সূত্র জানায়, হত্যার ঘটনায় গত ১ জুন সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করেন আনোয়ার হোসেনের ভাই মনোয়ার হোসেন। পরে আদালতে শুনানি শেষে কোতোয়ালি থানার ওসিকে ৩০২ ধারায় মামলা রুজু করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন বিচারক। মামলায় শিপা বেগমের খালাতো ভাই (বর্তমানে স্বামী) শাহজাহান চৌধুরী মাহিকে প্রধান আসামী ও শিপাকে দ্বিতীয় আসামী করে মোট আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামী করা হয়।
Leave a Reply