ঢাকা, মঙ্গলবার ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৬ অপরাহ্ন
মিরসরাইয়ে টিলা কেটে মহাসড়ক ও রেলওয়ের জমিতে আরশিনগর ফিউচার পার্ক
Reporter Name

রেলওয়ে-সওজের উচ্ছেদ নোটিশেও অপসারণ হয়নি। স্থাপনা পার্ক নির্মাণে নেয়া হয়নি পরিবেশ ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র। জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের নিচে শিশুদের খেলার রাইডার। প্রশাসনের অভিযানের পরও লকডাউনে খোলা রয়েছে পার্ক। পার্কে থাকা কটেজে রাতের বেলায় চলে অসামাজিক কর্মকান্ড। মিরসরাইয়ে টিলা কেটে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে সরকারি জমিতে গড়ে উঠেছে আরশিনগর ফিউচার পার্ক নামে একটি বাণিজ্যিক বিনোদন কেন্দ্র। যেখানে একদিকে দখল করা হয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) জমি অন্যদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জমি। পার্কটির ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ২ লক্ষ ৩২ হাজার কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। যেভাবে গড়ে ওঠে পার্ক: ৭ বছর আগেও উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের সোনাপাহাড় এলাকার এই স্থানে (পার্ক এলাকা) ছিল ছোট ছোট টিলায় ঘেরা সবুজ বন। এলাকাটি সবাই চিনতো দরবার টিলা নামে। ২০১৪

সালে একের পর এক টিলা কেটে সাবাড় করে আরশিনগর ফিউচার পার্কের কর্নধার মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাছির উদ্দিন দিদার। ওই বছর ৯ জানুয়ারি অবৈধভাবে টিলা কাটার দায়ে তৎকালীন মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফ হোসেনের নেতৃত্বে অভিযানে স্কেভেটরসহ দুইব্যক্তিকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নেতা নাছির উদ্দিন দিদারকে টিলা কাটার দায়ে মোটা অংকের জরিমানা গুনতে হয়। ২০১৯ সাল থেকে দরবার টিলা এলাকার শুরু করা হয় আরশিনগর ফিউচার পার্ক নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। যা বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। যদিওবা পার্কের পুরোপুরি কাজ এখনো শেষ হয়নি। পার্কের পেটে সড়ক ও রেলের জমি: টিলা কেটে তৈরি হওয়া আরশিনগর ফিউচার পার্ক নামের বিনোদন কেন্দ্রটির বেশিরভাগ অংশ দখল করা হয়েছে সড়ক ও রেলের জায়গা। এসব জমি উদ্ধার করতে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রাম পার্ক কর্তৃপক্ষকে দুই দফা উচ্ছেদ নোটিশ দিয়েছে। এ বিষয়ে কথা বললে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে চট্টগ্রামের কানুনগো কাউচার হামিদ বলেন. ‘আমরা দুই দফা আরশিনগর ফিউচার পার্ক কর্তৃপক্ষকে উচ্ছেদ নোটিশ দিয়েছি। তারা নিজের থেকে উচ্ছেদ না করলে ফাইনাল নোটিশের পর আমরা আমাদের জমি সীমানা নির্ধারণ করে সকল অবকাঠামো উচ্ছেদ করবো। এছাড়া গত ২৩ মে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের ১৬৭ তম কিলোমিটার এলাকায় সওজের অধিগ্রহণ করা জমিতে বিনা অনুমতিতে অবৈধভাবে নির্মিত আরশিনগরের অবকাঠামো ও মালামাল অপসারণে ৭ দিনের সময় বেঁধে দেয় সড়ক বিভাগ। সওজের সীতাকুন্ড সড়ক উপ-বিভাগীয় অঞ্চলের করেরহাট শাখার উপ-সহকারি প্রকৌশলী কুতুব উদ্দিন তালুকদার স্বাক্ষরিত ওই নোটিশের অনুলিপি দেওয়া হয় সীতাকুন্ড সড়ক উপ- বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে। যার মেয়াদ শেষ হয় গত ৩০ মে। সরেজমিনের গিয়ে দেখা যায়, এসময়ের মধ্যে পার্ক কর্তৃপক্ষ কোনরকম স্থাপনা বা অবকাঠামো অপসারণ করেনি। তবে সওজের দেওয়া ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয় নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিন পর যেকোন সময় অবৈধ স্থাপনা অপসারণে সড়ক বিভাগ উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডি) রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে পার্ক কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দিয়েছি। যেহেতু নোটিশের মেয়াদ শেষ হয়েছে আমরা আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে শীঘ্রই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবো।’

ঝুঁকিতে শিশুরা: উপর দিয়ে বয়ে গেছে ২ লাখ ৩২ হাজার কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। নিচে পার্কের অভ্যন্তরে তৈরি করা হয়েছে শিশুদের নানারকম খেলার রাইড। যদিও বা সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছে জাতীয় গ্রীডের নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে কোন স্থাপনা নির্মাণ করা আইনত অপরাধ। যাতে মারাত্মক ঝুঁকিও রয়েছে। এতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হবে তেমনি পার্কের মত জায়গায় জানমালের বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। এ বিষয়ে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রীড চট্টগ্রামের বার আউলিয়া কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী হাসমত উল্লাহ বলেন, ‘এটি ২ লক্ষ ৩২ হাজার কেভি ক্ষমতা সম্পন্ন লাইন। এটির ১৫ ফুট সীমানার মধ্যে স্থাপনা করার নিয়ম নেই। যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।’এদিকে বেশ কয়েকদফা আরশিনগর ফিউচার পার্ক কর্তৃপক্ষকে মিরসরাই উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে মৌখিকভাবে সতর্ক করার পরও তারা একে একে কটেজ, খেলার রাইড, বেবি শপ, চকলেট শপ, রেষ্টুরেন্ট, ফুডজোন, কৃত্রিম লেক, কমিউনিটি সেন্টার, মুক্ত মঞ্চ তৈরি করে সেখানে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বললে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘আরশিনগর ফিউচার পার্ক নামের প্রতিষ্ঠানটি পুরোটাই অবৈধভাবে স্থাপন করা হয়েছে। এ ধরণের জায়গায় পার্ক কোনভাবেই থাকতে পারে না। সংশ্লিষ্ট বিভাগ এসবের জন্য ব্যবস্থা নিতে পারে।’

অসামাজিক কাজের আধার: আরশিনগর ফিউচার পার্কের অভ্যন্তরে বেশকিছু কটেজ স্থাপন করা হয়েছে। যাতে সুযোগ রাখা হয়েছে রাত্রিকালীন অবকাশ যাপনের। চলতি বছর ২০ মার্চ পার্কে বেড়াতে গিয়ে ১৫ বছর বয়সী এক স্কুল ছাত্রী শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছিলেন। এ ঘটনায় স্থানীয় জোরারগঞ্জ থানায় ওই শিক্ষার্থী বাদী হয়ে একটি মামলাও দায়ের করেন। পরবর্তীতে পার্ক কর্তৃপক্ষ নিজেদের রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তির দরুন এ ঘটনা দামাচাপা দেয়। থানা পুলিশের তরফ থেকেও এ বিষয়ে এখনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

তবে মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানার ওসি নূর হোসেন মামুন বলেন, ‘বিষয়টি এখনো তদন্ত চলছে।’ পার্কের অভ্যন্তরে থাকা কটেজে বিনোদনের নামে অসামাজিক কর্মকান্ড সম্পর্কে ওসি বলেন, ‘এ ধরণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আমরা পাইনি। পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

লকডাউনেও পার্ক খোলা: করোনাকালীন লকডাউনের সময় আরশিনগর ফিউচার পার্ক দিব্বি খোলা রাখার দরুন মিরসরাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সুবল চাকমা দুই দফা অভিযান চালান। অভিযানের সময় পার্কে থাকা লোকজনকে বের করে দিয়ে পার্কের স্বত্তাধিকারী নাছির উদ্দিন দিদারকে পার্কের সব ধরণের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে সতর্ক করলেও তিনি পার্কের সকল কার্যক্রম চালিয়ে যান।

এ বিষয়ে সুবল চাকমা বলেন, ‘আমরা দুই দফা ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে পার্কে অভিযান চালিয়ে পার্কে থাকা লোকজনকে বের করে করে সতর্ক করেছিলাম। এবার আইন অমান্য করলে পার্ক কর্তৃপক্ষকে জরিমানা করা হবে।’নেয়া হয়নি ছাড়পত্র: গত দুই বছর সময় ধরে আরশিনগর ফিউচার পার্ক নামের বাণিজ্যিক বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের কর্মযজ্ঞ চললেও এখনো নেয়া হয়নি পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের ছাড়পত্র।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, ‘তারা যদি টিলা কেটে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছাড়পত্র নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।’

মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা ইমাম হোসেন পাটোয়ারী বলেন,‘আরশিনগর ফিউচার পার্ক আমাদের থেকে ছাড়পত্র নেয়নি। ছাড়পত্র না নিয়ে এ ধরণের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা বেআইনি।’

পার্ক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: সরকারি জমি দখলসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে পার্কের কর্ণধার মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাছির উদ্দিন দিদারের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘১৯৮৪ সাল থেকে রেলওয়েকে আমি খাজনা দিয়ে বৈধভাবে জমি ব্যবহার করছি। সওজের জায়গা আমার পার্কের সামনের অংশে। এরকম অনেক কোম্পানী রেলওয়ে সওজের জমি দখল করে ভবন করছে। কারো বিরুদ্ধেতো কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’সরকারি নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও পার্ক চালু রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ম্যাজিষ্ট্রেট অভিযান চালানোর পর তিনি পার্ক বন্ধ রেখেছেন।’ রাতে পার্কের অভ্যন্তরে অসামাজিক কাজকর্ম চলা প্রসঙ্গে দিদার বলেন, ‘আমি পার্ক করেছি বিনোদনের জন্য অসামাজিক কাজকর্ম চালানোর জন্য নয়।’ ২০১৪ সাল থেকে টিলা কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদত্তোর দিতে পারেননি।

One response to “মিরসরাইয়ে টিলা কেটে মহাসড়ক ও রেলওয়ের জমিতে আরশিনগর ফিউচার পার্ক”

  1. Piedabe says:

    For best results, treat all birds simultaneously buy priligy cheap artemether lumefantrine will decrease the level or effect of tolterodine by affecting hepatic intestinal enzyme CYP3A4 metabolism

Leave a Reply

Your email address will not be published.