সিলেটে একই দিনে পরপর একাধিক ভূমিকম্পের রেশ এখনো কাটেনি, জনমনে রয়ে গেছে আতংক। ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে তাই খোঁজ পড়েছে নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর। বেরিয়ে এসেছে অনেক দুর্বল ভবনের খবর। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের তালিকাভুক্ত ঝুঁকিপূর্ণ দুর্বল ভবনের সংখ্যা ২৫টি। অতি শীঘ্রই এসব ভবন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা হবে। এ জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশেষ চারটি টিম।
শহরের বুকে থাকা অনেক ভবনকে দশ বছর আগেও নোটিশ দেওয়া হয়েছে সতর্ক হওয়ার জন্য। অনেক ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছিলো ভেঙে ফেলার নির্দেশও। কিন্তু তা মানেননি কেউই। ফলে এখন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর ব্যাপারে সোচ্চার হচ্ছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। সিলেট নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ সব ভবন ভেঙে ফেলার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
তিনি বলেন, যেসব বিল্ডিং ঝুঁকিপূর্ণ নয় সেগুলো তালিকায় থাকলেও ভাঙা হবে না। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা যেসব ভবন অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ বলে মত দেবেন সেগুলো অবশ্যই ভাঙা হবে। এ ব্যাপারে কোন ধরনের আপোষ করা হবে না, কারণ এসব ভবনের সাথে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা জড়িত।
৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমি সিলেটে কয়েকদিন আগে হওয়া সিরিজ ভূকম্পনের পর নড়েচড়ে বসেছেন নগরের কর্তা ব্যক্তিরাও। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে এগুলো দ্রুত ভেঙে ফেলার ব্যাপারেও নেওয়া হচ্ছে কঠোর সিদ্ধান্ত। ইতিমধ্যে নগরের ছয়টি মার্কেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, করা হয়েছে শহরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকাও।
নগর ভবনের কর্তারা ছুটছেন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর সর্বশেষ অবস্থা দেখতে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই বিল্ডিং মালিকদের অসহযোগিতার শিকার হচ্ছেন তারা। নগরের ২৫টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় নাম এসেছে সিসিকের ৬নং ওয়ার্ডের চৌকিদেখি সিলসিলা গলির সরকার ভবন নামক একটি তিনতলা বিল্ডিংয়ের নাম। প্রায় ৩০ বছরের পুরনো এই বিল্ডিংটিতে বাস করেন দশটি পরিবার।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জীর্ণশীর্ণ এই ভবনটি গড়ে উঠেছে একটি চা বাগানের সাথে। পুরনো হওয়াতে এই ভবনে নেই আধুনিক স্থাপত্য। উঠানামার সিড়িও এত সরু যে, যেকোন দুর্ঘটনায় বাসিন্দারা দ্রুত এ দিয়ে নামতে পারবেন কিনা তাতে সন্দেহ আছে।
অভিযোগ আছে, কোন ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক নকশা অনুমোদন না করেই গড়ে উঠেছে এই ভবন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সিসিকের ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীমও ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনটি নিয়ে চিন্তিত। জানালেন অনেকবার তাগদা দিলেও মালিকপক্ষের কোন সাড়া পাননি। এমনকি সিসিক থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং টিম সেখানে পরিদর্শনে গেলেও তাদের সহযোগিতা করেননি বাড়ির মালিক বিমল চন্দ্র।
ফরহাদ শামীম জানান, সিটি কর্পোরেশন হওয়ার পর এ ভবনের কোন নকশা অনুমোদন হয়নি। এর আগে ইউনিয়ন থাকাকালীন সময়েও হয়নি। এই বিল্ডিং মালিকপক্ষ নিজেরাই নিজেদের প্ল্যান মোতাবেক তৈরি করেছিলেন। সময়ের পরিক্রমায় এসব ভবন এমনভাবে দুর্বল হয়েছে যে ভেঙে ফেলা ছাড়া উপায় নেই।
তবে কাউন্সিলর শামীমের সাথে একমত নন ভবন মালিকরা। তাদের দাবি পূর্বশত্রুতা মেটাতে এলাকার একটি কুচক্রী মহল কাউন্সিলরকে বিভ্রান্ত করে তাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তারা দাবি করেছেন, তাদের বিল্ডিংয়ে কোন ফাটল নেই, এমনকি তাদের সকল কাগজপত্রও আছে। যথাযথ বিল্ডিং-কোড মেনেই করা হয় এই ভবনটি।
বিশেষজ্ঞরা দেখতে চাইলে তারা সব ধরনের কাগজ পত্র দেখাবেন। তারা বলেন, আমরা নিজেরাই এই ভবনের তিনতলায় থাকি। ঝুঁকিপূর্ণ হলে তো সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার আমাদেরই।
Leave a Reply