সাহিত্যের ক্ষেত্রে যিনি একধারে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, নাটক, ছড়া, প্রবন্ধ প্রভৃতি সৃষ্টিতে সক্ষম তিনিই হলেন সব্যসাচী। মমতাজউদদীন আহমদ ছিলেন নাট্য-সাহিত্য অঙ্গনের তেমনি একজন নিবেদিত প্রাণপুরুষ৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বেশ কয়েকটি সেমিনারে অংশগ্রহণের সৌভাগ্য আমার হয়েছিলো ৷ অসাধারন বাকপটুতা বাক্যের বিচ্ছুরণ শব্দের গতিময়তা আর কণ্ঠের যাদুকরি স্বর মোহিত করে রাখতো পুরো হলরুম, আজও কানে বাজে সেই সৃষ্টিশীল বাগ্মি ধ্বনি৷
মমতাজউদদীন আহমেদ ১৯৩৫ সালের ১৮ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯১৯ সালের ২ জুন পার্থিব জগত ছেড়ে পরপারে চলে যান । তার আকস্মিক চলে যাওয়াটা দেশের নাট্য অঙ্গনে বিশাল শূণ্যতার সৃষ্টি করেছে যা অপূরণীয়৷ তার লেখা নাটক ‘কী চাহ শঙ্খচিল’ এবং ‘রাজার অনুস্বারের পালা’ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকাভুক্ত ৷ নাট্যচর্চায় অবদানের জন্য ১৯৯৭ সালে তাকে ‘একুশে পদক’ দেওয়া হয়। এছাড়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার, শিশু একাডেমি পুরস্কার, আলাউল সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। পেয়েছেন নাট্যকর্মী থেকে শুরু করে দেশের অগণিত মানুষের ভালোবাসা।
বাংলাদেশ সহো ওপার বাংলা ভারতের মঞ্চনাটকের পরিপূর্ণতায় রয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তার রচিত ও নির্দেশিত নাটক ‘সাতঘাটের কানাকড়ি’ এদেশের নাট্যাঙ্গনে মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত। থিয়েটার প্রযোজিত তুমুল জনপ্রিয় এই নাটকটি তৎকালীন স্বৈরশাসকের ভীত কাঁপিয়ে দিয়েছিলো। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বর্ণচোরা’ ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’, ‘জমিদার দর্পণ’, ‘বটবৃক্ষের ধরমকরম’, ‘রাজা অনুস্বারের পালা’, ‘ফলাফল নিম্নচাপ’, ‘যামিনীর শেষ সংলাপ’, ‘দুই বোন’, ‘ওহে তঞ্চক’, ‘খামাখা খামাখা’, ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম’, ‘নাট্যত্রয়ী’, ‘হৃদয়ঘটিত ব্যাপার স্যাপার’ ইত্যাদি। তার লেখা নাটক ‘কী চাহ শঙ্খচিল’ ও ‘রাজা অনুস্বারের পালা’ কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য তালিকাভুক্ত হয়েছিল। তার নিজহাতে গড়া নাট্যসংগঠন ‘থিয়েটার’ দেশের অন্যতম প্রধান নাট্যদল। তার লেখা গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘বাংলাদেশের নাটকের ইতিবৃত্ত’, ‘বাংলাদেশের থিয়েটারের ইতিবৃত্ত’, ‘নীলদর্পণ’ (সম্পাদনা) ও ‘সিরাজ উদ দৌলা’ (সম্পাদনা) ইত্যাদি।
ভাষাসৈনিক, বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে নবনাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন তিনি। মঞ্চ, টেলিভিশন, বেতার ও চলচ্চিত্র সব মাধ্যমেই তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য। আজ তার দ্বিতীয় প্রয়াণ দিবসে অন্তরের অন্তরস্থল থেকে স্নিগ্ধ ভালোবাসা ও বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি ৷