ঢাকা, শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ০৫:৩১ অপরাহ্ন
ফরিদপুরে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ভাইয়ের ওপর গুলি চালিয়েছেন বড়ভাই
Reporter Name

মিজানুর রহমান ,নগরকান্দা (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ ফরিদপুরের নগরকান্দায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছোটভাইয়ের ওপর গুলি চালিয়েছেন মাদক ব্যবসায়ী বড়ভাই। আহত ছোটভাই বর্তমানে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের উত্তরকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, উত্তরকান্দি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য নুরুল হক মাতুব্বর (৭৫) এর চার ছেয়ে ও তিন কন্যা। বড় ছেলে ফারুক মাতুব্বর (৪০) কাঠের ব্যবসা করেন, মেঝো ছেলে ফরহাদ মাতুব্বর (৩৭) স্থানীয়ভাবে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত, সেঝো ছেলে ফয়েজ মাতুব্বর (২৫) ভাঙ্গা কে এম কলেজে অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র, আর ছোট ছেলে মাহমুদুল হক জাপানে (২৩) পড়ালেখা করছেন। তিন মেয়ের মধ্যে একজনকে বিয়ে দিয়েছেন, অন্য দুইজন পড়ালেখা করছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে মাটি কাটা নিয়ে বড়ভাই ফারুকের সঙ্গে মেঝো ভাই ফরহাদ মাতুব্বরের কথা কাটাকাটি হয়। এসময় সেঝো ভাই ফয়েজ মাতুব্বর ও পরিবারের সদস্যরা তাদের দুজনের মধ্যে বিবাদ মিটিয়ে দিতে এগিয়ে আসেন। হঠাৎ করেই ফরহাদ তার কাছে থাকা অবৈধ পিস্তল দিয়ে গুলি ছোড়েন বড়ভাই ফারুককে লক্ষ্য করে। কিন্তু ফারুকের দিকে ছোড়া গুলি গিয়ে লাগে ছোটভাই ফয়েজ মাতুব্বরের হাতের কনুইতে গিয়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা ফয়েজ মাতুব্বরকে পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন।

অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য নুরুল হক মাতুব্বর বলেন, মেঝো ছেলে ফরহাদের অত্যাচারে আমি ও আমার স্ত্রী বাড়িতে থাকি না। ভাঙ্গায় বাসা ভাড়া করে থাকি। আমাদের সঙ্গে সেঝো ছেলে ফয়েজও থাকে।

তিনি বলেন, মেঝো ছেলে মাদকের সঙ্গে জড়িত। অনেক চেষ্টা করেছি তাকে ফেরাতে, কিন্তু পারিনি, তাই বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়ে ভাঙ্গায় ভাড়া বাসায় থাকি।

বড়ভাই ফারুক মাতুব্বর বলেন, জুমার নামাজের পর বাড়িতে যাই। সেঝো ভাই ফয়েজও ভাঙ্গা থেকে বাড়িতে আসে। বাড়িতে যাওয়ার পর ফরহাদ জমির মাটি কাটা নিয়ে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করে। আমি প্রতিবাদ করলেই আমার ওপর তেড়ে আসে। ফরহাদের কাছে থাকা পিস্তল দিয়ে গুলি করলে গুলিটি আমার গায়ে না লেগে ফয়েজের হাতের কনুইতে লাগে। আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। সে এখন সুস্থ আছে।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ফরহাদ মাদকের সঙ্গে জড়িত। নিজে খায় এবং বিক্রিও করে থাকে। একারণে আব্বা-আম্মা বাড়িতে থাকে না। আমি বাড়িতেই থাকি, কিন্তু ওর সঙ্গে তেমন কথা হয় না। এর আগেও অনেকবার আমাকে অপমান করায় ওর সঙ্গে কথা বলি না।

ফারুক মাতুব্বর বলেন, ফরহাদ মাদক সেবন করতে করতে অমানুষ হয়ে গেছে। না হলে ভাই হয়ে ভাইকে গুলি করতে পারে? আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে ফরহাদ, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আমি ভয়ে বাড়িতে যেতে পারছি না। বর্তমানে ভাঙ্গায় আব্বা-আম্মার কাছে রয়েছি।

ফারুকের স্ত্রী লাবনী আক্তার বলেন, বাড়িতে সবসময় মুখ বুঝে থাকি। ফরহাদের অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয়। তারপরও দেবর, তাই কিছু বলতে পারি না। কিন্তু আজকে ফরহাদ ওর ভাইয়ের উপর গুলি চালিয়েছে, এটা মেনে নেব কীভাবে। গুলিটা যদি বুকে লাগত, তাহলে তো আমি আমার স্বামীকে হারাতাম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, ফরহাদ একজন মাদক ব্যবসায়ী। তিনি নিজেও সবসময় নোশগ্রস্ত থাকেন। এলাকায় ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। এলাকার যুব সমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছেন ফরহাদ। শুধু মাদক ব্যবসা নয়, তিনি সবসময় অবৈধ অস্ত্র নিয়েও চলাফেরা করেন। এ কারণে এলাকার সবাই সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকে।

নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা বিপ্লব বলেন, খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ফরহাদের বাড়ি থেকে দেশীয় অস্ত্র ঢাল সরকি উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই ফরহাদ পলাতক রয়েছেন। তাকে আটকে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। এছাড়া মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

অভিযুক্ত ফরহাদ মাতুব্বর ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। মোবাইলে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x